আমেনা হীরা
প্রকাশ : ২৮ আগস্ট ২০২৫, ১২:০০ এএম
আপডেট : ২৮ আগস্ট ২০২৫, ০৯:১২ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ইতিহাসের দায় নিতে গড়িমসি পাকিস্তানের

একাত্তরের অমীমাংসিত ইস্যু
ইতিহাসের দায় নিতে গড়িমসি পাকিস্তানের

পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দারের সাম্প্রতিক ঢাকা সফর কেন্দ্র করে বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্ক নতুন করে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছে। তার এই সফরে অর্থনৈতিক সহযোগিতা, রাজনৈতিক সংলাপ ও আঞ্চলিক সমন্বয়ের বার্তা দেওয়া হলেও ১৯৭১ সালের গণহত্যা, আটকে পড়া পাকিস্তানিদের প্রত্যাবাসন এবং অবিভাজিত সম্পদের হিস্যা—এই তিনটি অমীমাংসিত ইস্যুতে দুই দেশের অবস্থান এখনো বিপরীতমুখী। ফলে এসব বিষয়ের সুরাহা এবং দুদেশের সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা থেকেই যাচ্ছে বলে মনে করছেন কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, পাকিস্তানের পক্ষ থেকে এ বিষয়গুলো গুরুত্ব দিয়ে সমাধান করা না হলে বাংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে উঠবে না। ইসহাক দার ঢাকা সফরে দাবি করেন, একাত্তরের গণহত্যার জন্য ক্ষমা চাওয়াসহ অমীমাংসিত তিন সমস্যার দুবার সমাধান হয়েছে, ফলে ৭১ ইস্যুর এরই মধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে। তবে অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দারের দাবির বিপরীতে ভিন্ন মত দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, অমীমাংসিত ইস্যুর সমাধানে আলোচনা চলবে দুদেশের মধ্যে।

এমন প্রেক্ষাপটে কূটনীতিকরা বলছেন, বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে পাকিস্তানের জনকেন্দ্রিক সম্পর্ক গড়তে একাত্তরের অমীমাংসিত ইস্যুর সমাধানে গুরুত্ব দেওয়ার বিষয়টি চিরন্তন সত্য হলেও তা এড়িয়ে যাচ্ছে পাকিস্তান, ফলে কার্যকর সম্পর্ক অধরাই থাকতে পারে। বিশ্লেষকদের মতে, পাকিস্তানের পক্ষ থেকে অমীমাংসিত ইস্যুর ‘দুবার সমাধান’-এর এই দাবি অগ্রহণযোগ্য। কারণ, দেশটি ক্ষমা চাওয়াসহ অমীমাংসিত সমস্যা সমাধানের যে কথা বলছে, তা ছিল অনানুষ্ঠানিক এবং সংসদীয় রেজ্যুলেশনবিহীন; তাই বিষয়টির মীমাংসা হওয়ার এমন দাবি সত্য নয়।

ইসহাক দার গত শনিবার দুপুরে ছয় সদস্যের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল নিয়ে পাকিস্তান বিমানবাহিনীর বিশেষ ফ্লাইটে ঢাকায় পৌঁছান। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব আসাদ আলম। ঢাকায় নেমে সফরের প্রথম দিনই রাজনৈতিক তৎপরতা দেখান তিনি। বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতাদের সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেন। যেগুলো হয় পাকিস্তান হাইকমিশনে। সফরের দ্বিতীয় দিন ইসহাক দার অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন এবং সেখানে দুদেশের মধ্যে এক চুক্তি ও পাঁচটি সমঝোতা স্মারক সই হয়। সেদিনই প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন দার। এ ছাড়া বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এবং জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমানের বাসভবনে গিয়ে এ দুই নেতার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

ইতিহাসের দায় নিতে গড়িমসি পাকিস্তানের: একাত্তরে বাংলাদেশের (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানের চালানো বর্বরতার ইতিহাসের দায় নিতে স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরও গড়িমসি করছে দেশটি। এ প্রসঙ্গ এলেই তাদের কাছ থেকে কার্যকর কোনো সদুত্তর আসে না। বাংলাদেশ সরকার মনে করে, ১৯৭১ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর চালানো গণহত্যা ও নৃশংসতার আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি এবং ক্ষমা প্রার্থনা ছাড়া দুই দেশের সম্পর্ক টেকসই হতে পারে না। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, ইসহাক দারের সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টার দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে আটকে পড়া পাকিস্তানিদের প্রত্যাবাসন এবং অবিভাজিত সম্পদের ন্যায্য হিস্যা পাওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ তার অবস্থান স্পষ্ট করেছে। তবে গত রোববারের এ বৈঠকের পর পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দারের কথায় ছিল ভিন্ন সুর। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘১৯৭৪ সালে প্রথমবার সমস্যাটির লিখিতভাবে সমাধান হয়েছিল। নথিটি ঐতিহাসিক, তা উভয় দেশের কাছেই রয়েছে। এরপর জেনারেল পারভেজ মোশাররফ বাংলাদেশ সফরে খুব খোলাখুলি এবং অকপটে সমস্যাটি নিয়ে আলোচনা করে গেছেন। আমি মনে করি, একটি পরিবারের ভাইদের মধ্যে একবার কোনো বিরোধের সমাধান হয়ে গেলে, এমনকি ইসলামেও আমাদের ‘দিল পরিষ্কার’ করতে বলা রয়েছে। সুতরাং, চলুন সামনে এগিয়ে যাই। আমাদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে। আমাদের একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ আছে।’

এ প্রসঙ্গে ইসহাক দার আরও বলেন, ‘২০০২ সালে জেনারেল পারভেজ মোশাররফ যখন বাংলাদেশ সফর করেছিলেন, সমস্যাটি তখন দ্বিতীয়বারের মতো সমাধান করা হয়েছিল। সেই সময় পারভেজ মোশাররফ সব বাংলাদেশির কাছে অবস্থান পরিষ্কার করেছিলেন। ফলে আমি মনে করি, ধর্ম যা বলে, ইসলামিক শিক্ষা যা বলে, তা হলো—আমাদের মন পরিষ্কার থাকা উচিত। একসঙ্গে এগিয়ে যাওয়া উচিত। আমাদের মধ্যে দুর্দান্ত সম্ভাবনা আছে।’

তবে ইসহাক দার বিষয়টির সমাধান হয়েছে—এমন যে দাবি করছেন, তা পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ত্রিদেশীয় একটি চুক্তি সই হয়। আর ২০০২ সালে পাকিস্তানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট পারভেজ মোশাররফ বাংলাদেশ সফর করেন। সেই সময় একাত্তরের গণহত্যার জন্য ক্ষমা চাওয়ার বদলে তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন।

এদিকে একই দিনে (রোববারের বৈঠকের পর) একাত্তরের অমীমাংসিত ইস্যুর ‘দুবার সমাধান’ হয়ে গেছে—ইসহাক দারের এমন দাবির বিষয়ে একমত কি না—জানতে চাইলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘আমি অবশ্যই একমত না। একমত হলে তো সমস্যার সমাধান হয়ে যেত। আমি তো বললাম, আমরা আমাদের অবস্থান বলেছি; উনারা উনাদেরটা বলেছেন। আমরা চেয়েছি, হিসাব হোক এবং আমাদের টাকা-পয়সার যে ব্যাপার, সেটার সমাধান হোক। আমরা চাই, এখানে যে গণহত্যা হয়েছে, সেটার ব্যাপারে তারা দুঃখ প্রকাশ করুক, মাফ চাক। আমরা চাই যে আটকে পড়া মানুষগুলো (পাকিস্তানি নাগরিক) আছে, তাদের তারা ফেরত নিয়ে যাক।’

পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে মতভিন্নতা ইসহাক দারের: একাত্তর ইস্যুতে ইসহাক দারের যে মতামত, তার সঙ্গে একমত নন বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন তৌহিদ হোসেন। সেক্ষেত্রে বিষয়টির সুরাহা কীভাবে হবে—জানতে চাইলে সাবেক রাষ্ট্রদূত মুন্সী ফয়েজ আহমেদ কালবেলাকে বলেন, ‘দেখুন, আমরা আলোচনা চালিয়েই যাব। তারা বলেছে দুবার সমাধান হয়েছে, কিন্তু আমরা কি মেনে নিয়েছি? পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেছেন একমত নন এ বিষয়ে, তাহলে আমরা তো মেনে নিইনি। কাজেই আমরা এ বিষয়টি নিয়ে কূটনৈতিক আলোচনা চালিয়ে যাব। সমঝোতা হলেও যদি এ বিষয়গুলোর সমাধান না হয়, তাহলে খুব ভালো কিছু হওয়ার সম্ভাবনা নেই। আমাদের পক্ষ থেকে জোরালোভাবে পাকিস্তানের কাছে এই ইস্যুর সমাধান চাওয়া হয়েছে। ক্ষমা চাইতে হবে, আটকে পড়া পাকিস্তানিদের প্রত্যাবাসন এবং অবিভাজিত সম্পদে বাংলাদেশের ন্যায্য হিস্যা দিতে হবে। এ নিয়ে তাদের যত ভাবনাই থাকুক, আর এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টাই করুক, এসব সমাধান না হলে অন্তত সম্পর্ক স্বাভাবিক হবে না।’

একাত্তর প্রসঙ্গে প্রশ্ন করায় ইসহাক দার বাংলাদেশের মানুষকে ‘মন পরিষ্কার’ করা এবং কোরআন-সুন্নাহর আলোকে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার কথা বলেছেন—তার এমন বক্তব্য বাংলাদেশিদের কটাক্ষ করার উদ্দেশ্যে কি না প্রশ্ন করলে মুন্সী ফয়েজ আহমেদ বলেন, ‘তিনি মন পরিষ্কারের কথা বলছেন, কিন্তু তাদের কর্মকাণ্ডে প্রমাণ হয় যে তাদের মনেই কলুষ। তারাই মনে কালিমা নিয়ে আছে, না হলে এভাবে বলতে পারে না। এসব মন্তব্য করে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়া যায় না, তাদের বরং মন পরিষ্কার করে এগিয়ে আসতে হবে। অমীমাংসিত ইস্যুর সুরাহা ছাড়া মনে হয় না বর্তমান সরকারও সম্পর্ক এগিয়ে নিতে চাইবে।’

এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ কালবেলাকে বলেন, ‘ক্ষমা চাওয়ার সংস্কৃতি আন্তর্জাতিক পরিসরে বহুবার সম্পর্ক পুনর্গঠনের পথ খুলে দিয়েছে। অনেক দেশই তাদের ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চেয়েছে। ফলে আজ তাদের সঙ্গে সেসব দেশের সুসম্পর্ক বজায় রয়েছে। পাকিস্তানের ক্ষেত্রেও একই রকম রাজনৈতিক সদিচ্ছা প্রয়োজন।’

ইসহাক দারের সঙ্গে বৈঠকে মতপার্থক্য দলগুলোর: ঢাকায় নেমেই রাজনীতির মাঠে দেখা যায় ইসহাক দারকে। বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপির নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন সফরের প্রথম দিনই। পাকিস্তান হাইকমিশনে চলে এসব বৈঠক। এতে এনসিপি স্পষ্টভাবে একাত্তর ইস্যুকে ‘ডিল’ করার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে। দলটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণের পারসেপশন অত্যন্ত স্পর্শকাতর। পাকিস্তানকে সেই বাস্তবতা বুঝতে হবে।’

বিএনপির পক্ষ থেকেও অমীমাংসিত ইস্যুর সমাধানে জোর দেওয়া হয়। ইসহাক দারের সঙ্গে শনিবারের বৈঠকে বিএনপি প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছে, ব্যবসা-বাণিজ্যে জোর দিয়ে নানা ক্ষেত্রে দুই দেশের সম্পর্ক কীভাবে এগিয়ে নেওয়া যায়, তা নিয়ে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। রাজনৈতিক দল এবং জনগণের প্রেক্ষাপট থেকে বাংলাদেশের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে আলোচনা করা হয় বিএনপির পক্ষ থেকে।

অন্যদিকে, একাত্তর ইস্যুতে মতপার্থক্য রয়েছে জামায়াতের। তাদের পক্ষ থেকে অমীমাংসিত ইস্যুগুলোর সমাধানে তাগিদ দেওয়া হয়নি। দলটির নেতাদের ভাষ্য, এটি সরকারের আলোচনার বিষয়। জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের ইসহাক দারের সঙ্গে বৈঠকের পর গণমাধ্যমকে বলেন, ‘৭১-এর বিষয়গুলো দুই দেশের সরকারের আলোচনার বিষয়। আমরা আশা করি, সরকার সেগুলো আলোচনায় আনবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতি এখন আঞ্চলিক ভারসাম্যের দিকে যাচ্ছে এবং প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক অপরিহার্য।’

ইসহাক দার ঢাকায় নেমেই রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করেন। কিন্তু স্বাধীনতার পর এবারের সফর ছাড়া পাকিস্তান সরকারের কোনো উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি এভাবে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকের সুযোগ পাননি। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তার বৈঠকে বিএনপি ও এনসিপি একাত্তর ইস্যু সমাধানের কথা বলেছে, তবে জামায়াতের বক্তব্য ভিন্ন। দলটির মতে, এটি দুদেশের মধ্যকার ইস্যু, দলের নয়। রাজনৈতিক দলগুলোর এমন অবস্থান কীভাবে দেখছেন—জানতে চাইলে সাবেক রাষ্ট্রদূত মুন্সী ফয়েজ বলেন, ‘এতে পরিষ্কার হয়ে গেল একাত্তর নিয়ে কার কী অবস্থান। জামায়াতের ওপর অভিযোগ তো আগে থেকেই আছে যে তারা একাত্তরে পাকিস্তানের সহযোগী ছিল, ফলে তারা একাত্তর ইস্যুতে এমন মত দেবে, এটাও খুব স্বাভাবিক। দেখুন, দুদেশ থেকে আসা-যাওয়ার বিষয়টি খারাপ না, পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকায় এসেছেন, খুব ভালো বিষয়। কিন্তু সম্পর্ক উন্নয়নে তারা অগ্রসর হচ্ছে না। পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক থেমে আছে। কারণ, তাদের সঙ্গে আমাদের একাত্তর জড়িয়ে আছে। তারা বারবার বলে, এটির সমাধান হয়েছে। কিন্তু কীভাবে? তারা কখনোই আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চায়নি।’

ইসহাক দারের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়েছে, এটি কীভাবে দেখেন—জানতে চাইলে মুন্সী ফয়েজ বলেন, ‘পাকিস্তানের নির্বাচনের খবর কী? তাদের নিজেদের অবস্থাই নাজুক, তারা আমাদের খবর জেনে কী করবে?’

সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে একাত্তর ইস্যুর সুরাহা দরকার: বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নির্ধারিত হবে একাত্তরের অমীমাংসিত ইস্যুগুলোর রাজনৈতিক সমাধানের মাধ্যমে—এমনটা মনে করেন কূটনীতিকরা। ক্ষমা চাওয়ার ব্যাপারে পাকিস্তানের সদিচ্ছা এবং আলোচনায় বাংলাদেশের এ বিষয়কে সবসময় প্রাধান্য দেওয়া। এ দুইয়ের সমন্বয়েই সম্ভব হতে পারে একটি টেকসই, সম্মানভিত্তিক দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক—বলছেন বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, সরকারিভাবে ক্ষমা চাইতে হবে পাকিস্তানকে, কারণ একাত্তরে তারা জেনোসাইড (গণহত্যা) করেছে।

গণহত্যার জন্য ক্ষমা চাইতে আপত্তি কেন—প্রশ্ন করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কূটনীতিক কালবেলাকে বলেন, ‘অনেক দেশ তাদের কার্যক্রমের জন্য ক্ষমা চেয়েছে, এতে পরে সম্পর্কের উন্নয়ন হয়েছে এবং সম্পর্ক এগিয়ে নিয়েছে। এভাবে আসা-যাওয়ায় (দুপক্ষের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদলের সফর) ক্ষতি নেই, কিন্তু এতে সম্পর্ক বেশিদূর যাবে না, যতক্ষণ না তারা অমীমাংসিত ইস্যুগুলো সুরাহা করে। আর আমরাই বা কেন পাকিস্তানকে ছাড় দেব? তাদের থেকে আমাদের অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ না, তাহলে তাদের ছাড় দিয়ে কী পাব? এ ছাড়া এই ইস্যুটিতে দেশের জনগণেরও মত একই এবং একটি রাজনৈতিক দল ছাড়া বাকিরাও কিন্তু একাত্তর ইস্যুটিকে ডিল করতে বলেছে।’

বিশ্লেষকরা বলছেন, ঢাকা-ইসলামাবাদ সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে একাত্তর ইস্যু সুরাহার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ কালবেলাকে বলেন, ‘দেখুন, দুদেশের মধ্যে কয়েকটি সমঝোতা চুক্তি হয়েছে। এগুলোকে কার্যকর করতে হলে অতীতের বিষয়গুলো মিটিয়ে ফেলতে হবে। পাকিস্তানের সঙ্গে চাইলেও ব্যবসায়ীরা অনেক বাণিজ্য করতে পারবেন না, কারণ দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের উত্থান-পতন চলতে থাকে। আর এটির দায় পাকিস্তানেরই। তারা ১৯৭১ সাল থেকে বের হতে পারছে না। পাকিস্তানের বর্তমান সরকার জেনোসাইড করেনি, কিন্তু তারা ক্ষমা চাইছে না। জাপান কোরিয়ার কাছে ক্ষমা চাইতে পারলে, এমনকি যুক্তরাষ্ট্রও ক্ষমা চেয়েছে, তাহলে একাত্তরে গণহত্যার জন্য তারা আমাদের কাছে ক্ষমা চাইলে কী সমস্যা?’

পাওনা অর্থ পরিশোধের তাগাদা দিয়ে অধ্যাপক ইমতিয়াজ আরও বলেন, ‘এ ছাড়া অর্থও দিচ্ছে না। আমাদের অর্থ আমাদের দিতে তাদের কেন আপত্তি? তারা এ বিষয়গুলো রাজনৈতিকভাবে সমাধান করে ফেললে ব্যবসায়ীরাও সাহস পাবে ব্যবসা করতে। এখন কেউ ব্যবসা করল, অন্তর্বর্তী সরকারের সময় পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নতির দিকে, কিন্তু অন্য সরকার এলে তা তলানিতে যদি যায়, এ ভয়ে ব্যবসায়ীরাও ব্যবসা করতে আগ্রহ কম দেখাবে। যদি একাত্তরের ইস্যু সমাধান হয়, তাহলে তো ব্যবসায়ীরা ভরসা পাবে। তাই একাত্তর ইস্যুর সমাধান না করে সম্পর্ক স্থবির তারাই করে রেখেছে।’

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সেনাপ্রধানের সাক্ষাৎ

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বিশেষ গেট চালু

সাত বীরশ্রেষ্ঠর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ৭ দফা ইশতেহার ডাকসু প্রার্থীর

আরও সাত দলের সঙ্গে বৈঠক করবেন প্রধান উপদেষ্টা

আ.লীগ আমলের লুটপাটের খেসারত দিচ্ছেন ৫ ব্যাংকের গ্রাহকরা

খালি পেটে দুধ চা খাচ্ছেন? জেনে নিন পুষ্টিবিদের সতর্কবার্তা

ইরানের হামলায় ১২ দিনে ধ্বংস হলো ইসরায়েলের ২১টি স্থাপনা

ভারতে বসে বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয় চালু করলেন আ.লীগ নেতা হানিফ

দিল্লিতে হাসিনার বাড়ির পাশেই সিআরআইয়ের কার্যালয়, মিলল চাঞ্চল্যকর তথ্য

স্বামী-স্ত্রীর রক্তের গ্রুপ এক হলে কী সমস্যা হয়? যা বলছেন চিকিৎসক

১০

চার মাসের মধ্যে স্বর্ণের দামে রেকর্ড, পিছিয়ে নেই রুপাও

১১

বিএনপিকে শুভেচ্ছা জানালেন সারজিস

১২

দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টির আগে ‘মধুর’ সমস্যা বাংলাদেশ দলে

১৩

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে জিয়াউর রহমানের মাজারে বিএনপির শ্রদ্ধা

১৪

বিএনপিকে ধ্বংস করতে বারবার চেষ্টা হয়েছে: মির্জা ফখরুল 

১৫

টিকটকে এবার যেসব সুবিধা যোগ হলো

১৬

মোবাইলে যেভাবে দেখবেন বাংলাদেশ-নেদারল্যান্ডস টি-টোয়েন্টি ম্যাচ

১৭

হত্যা মামলায় সাবেক সিনিয়র সচিব জিয়াউল গ্রেপ্তার 

১৮

শুটিং শেষ করে শাহিদ কাপুরের আবেগঘন স্ট্যাটাস

১৯

৬০০ বিঘার এই বিলে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে সাদা শাপলা 

২০
X