আব্দুল্লাহ আল জোবায়ের
প্রকাশ : ০৩ জুলাই ২০২৩, ১২:০০ এএম
আপডেট : ০৩ জুলাই ২০২৩, ১০:৫২ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
কারণ চিহ্নিত করতে নেই গবেষণা

এইচএসসির আগেই ঝরে পড়েছে ৪ লাখ শিক্ষার্থী

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

দেশে মাধ্যমিক পরীক্ষায় (এসএসসি) পাস করার পর উচ্চ মাধ্যমিক (এইচএসসি) পরীক্ষার আগে ঝরে পড়ছে অসংখ্য শিক্ষার্থী। এদের একাংশ কলেজে ভর্তির আগেই পড়াশোনার পাট চুকিয়ে ফেলছে। আর ভর্তি হলেও পরীক্ষা দিচ্ছে না বাকিরা। ২০২০ সালে এসএসসি পাস করলেও ২০২২ সালে এইচএসসি পরীক্ষা দেয়নি প্রায় ৪ লাখ শিক্ষার্থী। তবে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের চিহ্নিত করে মাঝপথে শিক্ষাজীবন শেষ করার কারণ জানতে সরকারি বা বেসরকারি পর্যায়ে নেই কোনো গবেষণা। এসব শিক্ষার্থী কেন পড়াশোনা ছেড়ে দিচ্ছে বা পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে কোথায় যাচ্ছে—সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য জানা থাকলে ঝরে পড়া রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব বলে মনে করেন শিক্ষাবিদরা।

দেশের শিক্ষা বোর্ডগুলোর সমন্বয়ের দায়িত্বে থাকা ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড থেকে জানা গেছে, গত বছর ৯টি সাধারণ বোর্ড থেকে এইচএসসি পরীক্ষার জন্য রেজিস্ট্রেশন করেছে ৯ লাখ ৬৯ হাজার ৩৩৮ জন। ২০২০ সালে এসব শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছিল। সে বছর সাধারণ শিক্ষা বোর্ডগুলো থেকে এসএসসি পাস করে ১৩ লাখ ৬৬ হাজার ২১৮ জন। এর মানে, এইচএসসিতে এসে ঝরে পড়েছে প্রায় ৪ লাখ শিক্ষার্থী। ২০২১ সালে এইচএসসিতে পরীক্ষার্থী ছিল ১১ লাখ ১৫ হাজার ৭০৫ জন। এসব শিক্ষার্থী ২০১৯ সালের এসএসসি ব্যাচের। সে বছর এসএসসি পরীক্ষায় পাস করে ১৪ লাখ ৩ হাজার ১৫৭ জন। অর্থাৎ ২০২১ সালের এইচএসসি পরীক্ষার আগেও শিক্ষার্থী ঝরে পড়েছে ৩ লাখের কাছাকাছি। ২০২০ সালে এইচএসসিতে অংশ নেয় ১১ লাখ ৪৫ হাজার ৩২৯ জন। অন্যদিকে, ২০১৮ সালের এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিল ১২ লাখ ৮৯ হাজার ৮০৫ জন। ওই বছর এসএসসি থেকে এইচএসসির মাঝে ঝরে পড়ে ১ লাখ ৪৪ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী। ২০১৯ সালের এইচএসসিতে পরীক্ষার্থী ছিল ১১ লাখ ২৬ হাজার ১২৬ জন। ২০১৭ সালে তারা এসএসসি পাস করে। সে বছর এসএসসি পাস করে ১১ লাখ ৫৫ হাজার ৬৮ জন শিক্ষার্থী। এর মানে, এসএসসি থেকে এইচএসসি পর্যায়ে ঝরে পড়েছে প্রায় ২৯ হাজার শিক্ষার্থী।

সম্প্রতি ইউএনএফপিএর বিশ্ব জনসংখ্যা পরিস্থিতি ২০২৩-এ ২০০৬ থেকে ২০২২ সালের তথ্য তুলে ধরে বলা হয়েছে, বয়স ১৮ হওয়ার আগেই বাংলাদেশের ৫১ শতাংশ মেয়ের বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। ১৫ বছর বা তার কম বয়সী মেয়ের ক্ষেত্রে বাংলাদেশে বিয়ের হার ২৭ শতাংশ। এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশে বাল্যবিয়ের হার সবচেয়ে বেশি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজধানীর উদয়ন উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ জহুরা বেগম কালবেলাকে বলেন, করোনার পর অনেক মেয়েরই বাল্যবিয়ে হয়ে যাচ্ছে। অনেকের মধ্যে মোবাইল আসক্তি দেখা দিয়েছে। গ্রামাঞ্চলে মেয়েরা যৌন হয়রানিসহ নানা সমস্যার মধ্যে পড়ছে। সে কারণে এসএসসি কোনো রকম পাসের পরই বাবা-মা মেয়ের বিয়ে দেওয়াকে নিরাপদ মনে করছে। আর ছেলেরা কর্মক্ষেত্রে নিয়োজিত হয়ে যাচ্ছে। করোনাকালের আর্থিক পরিস্থিতি বিবেচনায় অনেক পরিবারই তাদের ছেলে সন্তানকে কাজে নামিয়ে দিয়েছে। এ ছাড়া, ছোট সিলেবাসে এসএসসি শেষ করতে পারলেও উচ্চ মাধ্যমিকে গিয়ে অনেকেই আর পড়া চালিয়ে নিতে পারছে না।

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক নেহাল আহমেদ বলেন, পারিবারিক কারণে অনেক শিক্ষার্থীই কম বয়সে কর্মক্ষেত্রে চলে যায়, মেয়েদের বাল্যবিয়ে দেওয়া হয়। এ ছাড়াও রয়েছে সচেতনতার অভাব। এসব কারণে শিক্ষার্থীদের ড্রপআউট হচ্ছে। তবে আশার কথা হলো, মানুষের মানসিকতার পরিবর্তন হচ্ছে। বিশেষ করে মেয়েদের শিক্ষায় অংশগ্রহণের হার উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক এবং জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটির অন্যতম সদস্য অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান কালবেলাকে বলেন, কেন শিক্ষার্থীরা ড্রপআউট হচ্ছে সেটা বের করার জন্য তো গবেষণা করতে হবে। এটাকে বলে ‘ট্রেচার স্টাডি’। শিক্ষার্থীরা কোথায় যাচ্ছে, কেন যাচ্ছে তা বের করা গেলে প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যায়। বিভিন্ন সময় অটো প্রমোশন হয়েছে, সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পরীক্ষা হয়েছে, কম বিষয়ে পাবলিক পরীক্ষা হয়েছে। ফলে শিক্ষার্থীদের জ্ঞান, দক্ষতা, মূল্যবোধ সৃষ্টি যে পর্যায়ে হওয়ার দরকার, সেভাবে হয়নি। এ ছাড়াও তাদের শিখন ঘাটতি রয়েছে। তারা পরবর্তী ক্লাসে গিয়ে নিজেকে উপযোগী করে তুলতে পারছে না। ফলে শিক্ষার্থীদের ড্রপআউটের পাশাপাশি ফেলের সংখ্যা বাড়ছে। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো, অপরচুনিটি কস্ট। স্কুলে না গিয়ে দিনমজুর হিসেবে কাজ করলে কিছু টাকা আয় করা যায়। সে কারণে অনেকে স্কুলে যায় না। এক্ষেত্রে পরিবারও তাদের উৎসাহিত করে। আর মেয়েদের ক্ষেত্রে বিয়ে দিয়ে মেয়ের দায়িত্ব-কর্তব্য দ্রুত সম্পন্ন করতে হয় বাবা-মাকে।

ছিদ্দিকুর রহমানের মতে, এসএসসি পর্যন্ত সবার জন্য শিক্ষা বাধ্যতামূলক এবং ফ্রি করে দেওয়া উচিত। এরপর শিক্ষার ধারা পরিবর্তন করতে হবে। যারা অত্যন্ত মেধাবী, তারা উচ্চশিক্ষায় যাবে। অন্যরা এসএসসির পরই টেকনিক্যাল ও ভোকেশনাল শিক্ষায় যাবে। সেজন্য কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার সুযোগ বাড়াতে হবে। শিক্ষার্থীদেরও উৎসাহিত করতে হবে। এতে দক্ষতাসম্পন্ন কর্মী বিদেশে পাঠানো যাবে। দেশের উন্নয়ন হবে। ওই শিক্ষার্থীর পরিবারের আয়ও বাড়বে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ক্যাশমেমো নেই, খুচরা বাজারে দ্বিগুণ দামে কাঁচামাল

রামপুরায় ভবনের ৬ তলা থেকে পড়ে রডমিস্ত্রির মৃত্যু

কুড়িয়ে পাওয়া ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা ফেরত দিলেন ভ্যানচালক

বুড়িগঙ্গা থেকে লাশ উদ্ধার / ৪ জনকেই হত্যা করা হয়েছে, ধারণা পুলিশের

ওসির বদলির খবরে মোহাম্মদপুর থানার সামনে মিষ্টি বিতরণ স্থানীয়দের

বিএনপি নেতা আব্দুস সালামের চিকিৎসার খোঁজ নিলেন ডা. কাঁকন 

সিপিএলে ইতিহাস গড়ে ফ্যালকনসকে জেতালেন সাকিব

নতুন ই-লার্নিং প্ল্যাটফর্মের উদ্বোধন / মাত্র ১০০ টাকায় করা যাবে দক্ষতা, চাকরি কিংবা ভর্তি প্রস্তুতির কোর্স

সড়কের মাঝখানে গাছ রেখেই ঢালাই সম্পন্ন 

বুটেক্স সাংবাদিক সমিতির ৯ম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপিত

১০

টানা ৮ ঘণ্টা অবরুদ্ধ জবির ভিসি

১১

৬৪ জেলার নেতাকর্মীদের নতুন বার্তা দিল এনসিপি

১২

ম্যানইউর জয়হীন ধারা অব্যাহত, এবার ফুলহামের মাঠে ড্র

১৩

ব্র্যাক ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোক্তা-পেশাজীবীদের নিয়ে ‘আগামীর পথ’ অনুষ্ঠিত

১৪

প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে টি-টোয়েন্টিতে সাকিবের অনন্য কীর্তি

১৫

জুলাই যোদ্ধা শহীদ তানভীরের চাচা খুন

১৬

ভরা জোয়ারে ডুবে যায় বিদ্যালয়, শঙ্কায় অভিভাবক-শিক্ষার্থী

১৭

যেভাবে গ্রেপ্তার হলেন তৌহিদ আফ্রিদি

১৮

তারের পর এবার চুরি হলো সেতুর রিফ্লেক্টর লাইট

১৯

‘এবার আমাদের পালা’ স্বরূপ আচরণ উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে : টিআইবি

২০
X