

রাজধানীর সাতটি কলেজ নিয়ে প্রস্তাবিত ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সেই লক্ষ্যে প্রকাশিত হয় বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশের খসড়া যা নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে আলোচনা সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। এমনকি এর পক্ষে বিপক্ষে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিও পালিত হচ্ছে।
এমন সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় আন্দোলনের বিরোধিতা করে ছাত্রদের দিয়ে ‘কাউন্টার বা মবের’ পরিকল্পনা করে বিশ্ববিদ্যালয় আন্দোলন দমন করার পরিকল্পনার একটি জুম রেকর্ডিং ফাঁস হয়েছে।
শনিবার (৬ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় সাত কলেজকে প্রস্তাবিত ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি অথবা হাইব্রিড মডেল ও স্কুলিং পদ্ধতি অথবা এ ধরনের যে কোনো পদ্ধতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের রূপরেখা অবিলম্বে বাতিলের দাবিতে অনলাইন জুম মিটিং অনুষ্ঠিত হয়।
বিসিএস জেনারেল এডুকেশন অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে এই জুম মিটিংয়ে ঢাকা কলেজ শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও সমাবিজ্ঞানের সহযোগী অধ্যাপক আ.ক.ম রফিকুল আলম ‘ছাত্রদের দিয়েই কাউন্টার বা মব করতে হবে’ বলে মন্তব্য করেন। তার এমন মন্তব্যে তীব্র সমালোচনা করছেন শিক্ষার্থীরা।
ফাঁস হওয়া বক্তব্যে রফিকুল আলম সাত কলেজকে শিক্ষা ক্যাডারের হৃৎপিণ্ড উল্লেখ করে বলেন, শিক্ষা ক্যাডারে মেধাবীদের আকর্ষণ করতে হলে সাত কলেজকে সামনে রেখেই একটি শক্তিশালী ও মানসম্মত কাঠামো বজায় রাখা জরুরি। কিন্তু আজ আমরা খুব কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি। সাত কলেজ যদি হাতছাড়া হয়ে যায়, তবে আস্তে আস্তে তারা বড় বড় কলেজগুলার দিকে হাত বাড়াবে। সুতরাং, আমাদের সমিতির ব্যানারে সম্মিলিতভাবে আরও সুসংগঠিত ও ধাপে ধাপে বৃহত্তর আন্দোলনের দিকে যেতে হবে। প্রয়োজন হলে সমিতির সঙ্গে বসে আরও জোরালোভাবে আলোচনাও করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, এই আন্দোলনের উৎপত্তি ঢাকা কলেজ থেকে। তাই ঢাকা কলেজের শিক্ষকরা আসলে প্রতিনিয়তই একটা চাপের মধ্যে থাকেন। আমাদের ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়মিত কথা হয়। তারা পরিষ্কারভাবে জানিয়েছে যে তারা কোনো স্কুলিং মডেল চায় না। তারা চায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় কাঠামো, তবে সেটা অবশ্যই হতে হবে এফিলিয়েটেড (অধিভুক্ত) বিশ্ববিদ্যালয়। যেখানে সাত কলেজের স্বার্থ সুরক্ষিত থাকবে।
রফিকুল আলম বলেন, সাত কলেজের সম্পাদকরা যদি ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতাদের সঙ্গে একটি যৌথ বৈঠক করতে পারেন, তাহলে তারা মাঠে নেমে আসতে আরও সংগঠিত হবে। ছাত্রদের যুক্ত করতে না পারলে আন্দোলন ফলপ্রসূ হবে না। ছাত্রদের দিয়েই কাউন্টার বা মব করতে হবে। ইডেন কলেজ যে দিনটি যেভাবে শক্ত অবস্থান নিয়েছিল চমৎকার উদাহরণ। যদি প্রতিটি কলেজ থেকে এমনভাবে ছাত্রদের সক্রিয় করা যায়, তাহলে ফলাফল অবশ্যই আসবে।
শিক্ষকের বিতর্কিত মন্তব্যের বিষয়ে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী নাঈম হাওলাদার বলেন, রফিকুল স্যারের একটি মন্তব্য সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে, আমরা শিক্ষকদের থেকে সবসময় নৈতিকতা শিখি। সেখানে তিনি একজন শিক্ষক হয়ে কীভাবে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের মুখোমুখি দাঁড় করানো যায়, কীভাবে মব করে শিক্ষার্থীদের একটি যৌক্তিক আন্দোলনকে প্রতিহত করা যায় সেটা নিয়ে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার সমিতির সঙ্গে পরিকল্পনা করেন?
তিনি বলেন, কিছুদিন আগে ঢাকা কলেজের উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার্থীরা স্নাতক শিক্ষার্থীদের মুখোমুখি হয়, পাশাপাশি ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাদেশের বিরোধিতা করে, আইনের খসড়ায় উচ্চমাধ্যমিকের সবকিছু স্পষ্ট থাকার পরেও যখন তাদের হঠাৎ উত্থান হয় ঠিক তখনই আমার সন্দেহ জাগে যে, এর পেছনে কোনো অদৃশ্য শক্তি কাজ করছে কিনা! কিন্তু কোনো তথ্য প্রমাণ না থাকার কারণে কথা বলার সুযোগ হয়নি। আজকে যখন সম্পাদক সাহেবের বক্তব্যটি ভাইরাল হয়, তখন তার কথার পরিপ্রেক্ষিতে আমার সব সন্দেহ যেন বাস্তবে রূপ নিয়েছে।
এ ছাড়া একই কলেজের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ রোমান জাবির ফেসবুকে লিখেন, শিক্ষকগণ যদি আমাদের সমস্যা সমাধানের জন্য নিজে থেকে কাজ করত তাহলে আমরা কখনো আন্দোলনই করতাম না! এখন যখন আমরা আন্দোলন করতেছি অধিকার আদায়ের জন্য, তখন হাসিনা স্টাইলে আমাদের ওপর মব তৈরি করার পরিকল্পনা। হাসিনার তৈরি করা লাঠিয়াল বাহিনী আর যাই হোক সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষে কথা বলবে না। আমাদের শিক্ষকগণের মধ্যে কয়েকজন এই উক্তির জ্বলন্ত প্রমাণ।
মন্তব্য করুন