আতাউর রহমান ও আবদুল্লাহ আল জোবায়ের
প্রকাশ : ০৬ মার্চ ২০২৪, ০২:২৩ এএম
আপডেট : ০৬ মার্চ ২০২৪, ০৭:২৭ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ঝুঁকি নিয়ে ক্লাসে শিক্ষার্থীরা

অগ্নিঝুঁকিতে ঢাকায় ৭৮৪ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান
ঝুঁকি নিয়ে ক্লাসে শিক্ষার্থীরা

রাজধানীর যাত্রাবাড়ী-দনিয়া এলাকায় পরিচিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ‘ব্রাইট স্কুল অ্যান্ড কলেজ’। কাছাকাছি দূরত্বে ‘পুরোনো শাখা’ ও ‘নতুন শাখা’ নামে দুটি ভবন। গতকাল মঙ্গলবার পুরোনো শাখায় গিয়ে দেখা গেছে, সাততলা ভবনে একটি মাত্র সিঁড়ি দিয়ে শিক্ষার্থীদের ওঠানামা করতে হয়, তাও অনেকটা সরু। সাততলা ভবনটির পাঁচতলা পর্যন্ত শ্রেণিকক্ষ। আর আবাসিক শিক্ষার্থীদের থাকার ব্যবস্থা উপরের দুই তলায়। সেখানে গ্যাসের চুলায় রান্না করা হয়। নতুন শাখার ৯ তলা ভবনের প্রতি তলায় অন্তত চারটি করে শ্রেণিকক্ষ রয়েছে। কিন্তু এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হঠাৎ আগুন লাগলে দ্রুত বের হওয়ার বিকল্প কোনো সিঁড়ি নেই। কোথাও অগ্নিনির্বাপণের কোনো সরঞ্জাম চোখে পড়েনি। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের তালিকায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এই ভবনটি আগুনের ঝুঁকিতে রয়েছে।

বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বেনবেইস) তথ্যানুযায়ী, ঢাকা জেলায় সরকারি-বেসরকারি প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক ও মাদ্রাসা মিলিয়ে ১২ হাজার ২২২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। বেসরকারি মিলিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে ৫৭টি। এর মধ্যে ঢাকা শহর বা রাজধানীতে অবস্থিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ২০১৮ সাল থেকে শুরু করে ২০২৩ সালে ৮০১টিতে অগ্নিনিরাপত্তা বা অগ্নিঝুঁকির বিষয় পরিদর্শন করে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স। তাতে দেখা যায়, মাত্র ১৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অগ্নিনিরাপত্তা রয়েছে। বাকি ৭৮৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৭২০টি ঝুঁকিপূর্ণ এবং ৬৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভবনকে উচ্চ অগ্নিঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

ঝুঁকিপূর্ণ ৭৮৪ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পূর্ণাঙ্গ তালিকা দেখতে ক্লিক করুন

কালবেলার পক্ষ থেকে ওই তালিকা ধরে গত কয়েক দিনে রাজধানীর বেশকিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়েও এর সত্যতা মেলে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মূল গেট বন্ধ থাকে সবসময়, ভবনে প্রবেশের সিঁড়িতে থাকা কলাপসিবল গেটেও থাকে তালা। এ অবস্থায় অগ্নিদুর্ঘটনা ঘটলে শিক্ষার্থীরা বের হতে চাইলে প্রতিবন্ধকতায় পড়তে হবে। কোনো কোনো সরকারি ভবনে একাধিক সিঁড়ি থাকলেও একটিমাত্র সিঁড়িতে ওঠানামা করা হয়, বাকিগুলো বন্ধ। ভয়ংকর ব্যাপার হলো, বেশিরভাগ কিন্ডারগার্টেন আবাসিক ভবনে চলছে, অনেকগুলো আবার ঘুপচি গলিতে। অগ্নিদুর্ঘটনা বা অন্য কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে উদ্ধার কর্মীদের গাড়ি পৌঁছানোর রাস্তা নেই অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে।

বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা নিজেরাও অগ্নিনিরাপত্তার বিষয়ে অবগত নয়। আগুন লাগলে জীবন রক্ষার মহড়াও হয়নি কখনো।

অগ্নিঝুঁকিতে থাকা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর তালিকা করা হয়েছিল ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের উপপরিচালক দিনমনি শর্মার নেতৃত্বে। তিনি এখন চট্টগ্রাম বিভাগীয় উপপরিচালক।

যোগাযোগ করা হলে গতকাল মঙ্গলবার দিনমনি শর্মা কালবেলাকে বলেন, তারা পরিদর্শন করে যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অগ্নিঝুঁকি অবস্থায় পেয়েছিলেন, সেসব প্রতিষ্ঠানে চিঠি দিয়ে সতর্ক করা হয়েছিল। প্রতিষ্ঠানগুলোকে যথাযথ অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছিল।

যদিও ব্রাইট স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মইদুর রহমান জেম কালবেলাকে বলেন, তারা ফায়ার সার্ভিস থেকে অগ্নিঝুঁকির বিষয়ে চিঠি পাননি। তাদের যে অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র নেই, তা স্বীকার করে এই অধ্যক্ষ বলেন, এগুলো লাগানোর বিষয়ে চিন্তাভাবনা করছেন তারা। করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন শ্রেণির পাঁচজন শিক্ষার্থীর অভিভাবকের সঙ্গে কথা হয় কালবেলার। তারা জানিয়েছেন, অগ্নিঝুঁকি বিষয়ে জানাতে প্রতিষ্ঠান কখনো মহড়া করেছে—এমনটি তারা দেখেননি। অভিভাবকদের নিয়ে মাঝেমধ্যেই সভা করা হয়, তবে সেখানে এসব বিষয় স্থান পায় না।

যাত্রাবাড়ী আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজটিও নামকরা। গতকাল সেখানে ঢুকতে চাইলে অভিভাবক ছাড়া কাউকে ঢুকতে দেওয়া হয় না বলে জানালেন নিরাপত্তাকর্মী। তবে আলাপের একপর্যায়ে ১৬ বছর ধরে ওই প্রতিষ্ঠানটির নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা মোহাম্মদ সুলতান জানান, প্রতিষ্ঠানটিতে কোনো অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র নেই। তিনিসহ অনেকেই জানেন না হঠাৎ করে আগুন লাগলে তাদের কী করতে হবে। তবে গত বছর একবার ফায়ার সার্ভিসের মাধ্যমে অগ্নিঝুঁকির বিষয়ে মহড়া দেওয়া হয়েছিল।

ফায়ার সার্ভিসের তালিকায় এই প্রতিষ্ঠানটিও অগ্নিঝুঁকিতে রয়েছে। অবশ্য ফোনে ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ মরিয়ম বেগম বলেন, তাদের প্রতিষ্ঠানটিতে অগ্নিঝুঁকিতে রয়েছে—এমন কোনো চিঠি ফায়ার সার্ভিস দেয়নি। যদিও স্কাউটের মাধ্যমে মাঝেমধ্যেই অগ্নিঝুঁকি বিষয়ে মহড়ার ব্যবস্থা করা হয়।

নারিন্দা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়টিও রয়েছে অগ্নিঝুঁকির তালিকায়। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, একটি টিনশেড ও তিনটি তিনতলা পাকা ভবন রয়েছে। দুটি গেট দিয়ে শিক্ষার্থীরা যাতায়াত করতে পারে। কোনো ভবনেই অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র নেই। শিক্ষার্থী বা স্কুলটির কর্মচারীরা জানেন না যে আগুন লাগলে তারা কী করবেন।

জানতে চাইলে স্কুলটির প্রধান শিক্ষিকা সৈয়দা আক্তার কালবেলাকে বলেন, ‘স্কুল থেকে দুই পাশ দিয়ে শিক্ষার্থীরা বের হতে পারে। তারপরও কেন ঝুঁকির তালিকায়, তা বুঝতে পারছি না।’

তিনি স্বীকার করেন, ভূমিকম্পের বিষয়ে একাধিকবার মহড়া হলেও অগ্নিঝুঁকির বিষয়ে তেমন কোনো কাজ করা হয়নি তাদের। তবে এখন যেহেতু আলোচনা হচ্ছে, নিশ্চয়ই বিষয়টি নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। রেড ক্রিসেন্ট দিয়ে একটা মহড়ার পাশাপাশি অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্রও রাখার ব্যবস্থা করা হবে।

পুরান ঢাকার লক্ষ্মীবাজারে সরু গলির আবাসিক ভবনে অবস্থিত উইনস্টন আইডিয়াল স্কুল নামে একটি কিন্ডার গার্টেন। এটিও ফায়ার সার্ভিসের তালিকায় অগ্নিঝুঁকিতে রয়েছে। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, আবাসিক ভবনের লোকজন ও শিক্ষার্থীদের একটি সিঁড়ি দিয়েই চলাচল করতে হয়। তা-ও সরু, দুজন একসঙ্গে উঠতে চাইলে অন্যজনকে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ সাইদুল আল গালিব বলেন, প্রতিটি ফ্লোরে তাদের পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র রয়েছে। দুয়েকবার ফায়ার সার্ভিসের মাধ্যমে মহড়া দেওয়া হয়েছে।

অধ্যক্ষের তথ্যানুযায়ী, ফ্লোরে দুটি করে অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র (এক্সটিংগুইশার) পাওয়া গেছে। কিন্তু সেগুলোর মেয়াদ শেষ হয়েছে ৬ বছর আগে! তাতে দেখা যায়, ২০১৭ সালে এগুলো স্থাপন করা হয়, পরের বছর মেয়াদ শেষ হলেও নতুন করে আর তা স্থাপন করা হয়নি। স্কুলটির চতুর্থ ও অষ্টম শ্রেণির দুজন শিক্ষার্থী জানিয়েছে, অগ্নিনির্বাপণ বিষয়ে তারা কোনো মহড়া পাননি।

ঢাকা গভর্নমেন্ট মুসলিম হাই স্কুলটিও অগ্নিঝুঁকিতে। সেখানেও নেই কোনো অগ্নিনিরাপত্তা সরঞ্জাম। ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষিকা মাহবুবা হক কালবেলাকে বলেন, ‘স্কাউটের সদস্যদের দিয়ে স্কুলে মহড়া দেওয়া হয়। তবে কেউ তো আগুনে নেভানোর যন্ত্র আমাদের দেয়নি।’

অগ্নিঝুঁকি তালিকায় রয়েছে পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কবি নজরুল সরকারি কলেজও। প্রতিষ্ঠানটির কোনো ভবনেই নেই অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র। অগ্নিঝুঁকির বিষয়ে প্রতিষ্ঠানে ঠিকমতো মহড়াও হয় না। জানতে চাইলে কলেজটির অধ্যক্ষ অধ্যাপক আমেনা বেগম গতকাল তার কার্যালয়ে কালবেলাকে বলেন, অগ্নিঝুঁকির বিষয়ে প্রতিষ্ঠানে দুয়েকবার মহড়া দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া শুনেছি আমাদের একটি ভবন ঝুঁকিপূর্ণ। তবে কোনো চিঠি পাইনি।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে অগ্নিঝুঁকির বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক কালবেলাকে বলেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে কীভাবে অগ্নিঝুঁকির বাইরে রাখা যায়, সে বিষয়ে সবার আগে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। যেসব প্রতিষ্ঠানের ভবন নতুন করে নির্মাণ করা হবে বা হচ্ছে, সেগুলোর নকশায় সিঁড়িকে যেন প্রশস্ত করা হয়। স্কুল থেকে শিক্ষার্থীদের বের হওয়ার বিকল্প গেট যেন থাকে, তা নিশ্চিত করতে হবে। প্রয়োজনীয় অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্রও রাখতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভবন পুরোনো, সেগুলো চাইলেও ভাঙা যাবে না। সেক্ষেত্রে বিকল্প পদ্ধতিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। মন্ত্রণালয়কে এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে এবং সে বিষয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্দেশনা দিতে হবে।’

অগ্নিঝুঁকিতে থাকা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভবনগুলোর বিষয়ে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) চেয়ারম্যান মো. আনিছুর রহমান মিঞা বলেন, ‘বেশিরভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই আবাসিক এলাকায় অবস্থিত। এসব চলামান স্কুল। এজন্য উচ্ছেদের পদক্ষেপ নিয়েও তাদের পেছাতে হয়েছে। কারণ, এগুলো কেউ ভালোভাবে নেবে না।’

তিনি বলেন, ‘যেসব স্কুলভবন অগ্নিঝুঁকিতে রয়েছে, সেগুলোর বিষয়ে তারা একটি সিদ্ধান্তে এসেছেন আজকেই (মঙ্গলবার)। এসব স্কুলে ইমার্জেন্সি এক্সিট থাকতে হবে, গার্মেন্টসে যেমন স্টিল বা লোহার অবকাঠামো দিয়ে সিঁড়ি তৈরি হয়, সেই ধরনের সিঁড়ি থাকতে হবে। তবে আবাসিক ভবনে থাকা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো অবশ্যই সরাতে হবে। তার আগ পর্যন্ত ইমার্জেন্সি এক্সিট সিঁড়ি স্থাপনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’

যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অতিঝুঁকিপূর্ণ তালিকায়: ফায়ার সার্ভিসের তৈরি করা অগ্নিঝুঁকিতে থাকা ৮০১ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে অতি উচ্চঝুঁকিতে রয়েছে ৬৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভবন। ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা বলছেন, এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্লাস চলাকালে অগ্নিকাণ্ড ঘটলে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে। এই তালিকায় বারিধারা ফায়ার স্টেশনের আওতাধীন ১০০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরিদর্শনে গিয়ে রাজধানীর বাড্ডার বড় বেরাইদ এলাকার রশনআরা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, বনানীতে অবস্থিত আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ভবন এবং বাড্ডার বেরাইদ মুসলিম হাইস্কুল ভবন অতিঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় পায় ফায়ার সার্ভিস। বাকি ৯৩টির চারটি সন্তোষজনক এবং ৮৯টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

সিদ্দিকবাজার ও সদরঘাট ফায়ার স্টেশনের আওতাধীন ৫৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করে সবগুলোই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় পাওয়া যায়। মিরপুর ও ভাষানটেক ফায়ার স্টেশন এলাকার ১০৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করে ১০৩টি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় পাওয়া যায়। ডেমরা ও পোস্তগোলা ফায়ার স্টেশনের আওতাধীন ৬৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করে সবগুলোই ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। অন্যদিকে তেজগাঁও ফায়ার স্টেশন এলাকার ৪৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করে এর সবগুলোই ঝুঁকিপূর্ণ পায় ফায়ার সার্ভিস। এগুলো হলো—তেজগাঁও শিল্প এলাকায় বি জি প্রেস উচ্চ বিদ্যালয়, আহ্ছান উল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় তেজগাঁও আদর্শ স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ইস্কাটন এলাকার ইস্পাহানী বালিকা বিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয়, ইস্কাটন, বড় মগবাজার এলাকার শাহ-নূরী মডেল হাই স্কুল, মধুবাগ এলাকার শের-ই-বাংলা স্কুল অ্যান্ড কলেজ, শিল্পাঞ্চলের বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব গ্লাস অ্যান্ড সিরামিকস ও টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা পলিটেকনিক ল্যাবরেটরি স্কুল, মহাখালীর রাজধানী পলিটেকনিক অ্যান্ড টেক্সটাইল কলেজ, দক্ষিণ বেগুনবাড়ির গ্রিনল্যান্ড ল্যাবরেটরি স্কুল, নাখালপাড়া হোসেন আলী উচ্চ বিদ্যালয়, পূর্ব নাখালপাড়ার নিউ আনন্দ ইংলিশ স্কুল, তেজগাঁও শিল্প এলাকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সিদ্দিকী স্কুল, মগবাজারের বিটিসিএল আইডিয়াল স্কুল, তেজগাঁওয়ের জাতীয় আইন কলেজ, উত্তর বেগুনবাড়ীর জামিয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসা, সমিতি বাজার এলাকার কাছেমূল উলুম হাফিজিয়া মাদ্রাসা, সাউথ ইস্ট ইউনির্ভাসিটি, সিভিল এভিয়েশন উচ্চ বিদ্যালয়, রহীম মেটাল মাদ্রাসা কমপ্লেক্স, শহীদ মনু মিঞা উচ্চ বিদ্যালয়, বনানীর বনানী মডেল স্কুল, তেজগাঁও রেলওয়ে নূরানী মাদ্রাসা, মহাখালীর টি অ্যান্ড টি বালক আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়, টি অ্যান্ড টি বালিকা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়, সরকারী তিতুমির কলেজ, আই পি এস স্কুল অ্যান্ড কলেজ, সোনারগাঁও ইউনিভার্সিটি, মহাখালী মডেল হাই স্কুল, তেজগাঁও সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, নাখালপাড়ার হাজী মরণ আলী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা, ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, তেজগাঁও সরকারি মহিলা কলেজ, হলিক্রস কলেজ, সরকারি বিজ্ঞান কলেজ সংযুক্ত হাইস্কুল, সরকারি বিজ্ঞান কলেজ, বটমালী হোম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, মহাখালীর বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, কারওয়ান বাজারে নর্দান ইউনিভার্সিটি ভবন, বড় মগবাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং তেজগাঁও রেলওয়ে জামিয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসা ভবন অগ্নিকাণ্ডের উচ্চঝুঁকিতে রয়েছে।

উত্তরা ফায়ার স্টেশনের আওতাধীন এলাকার ১১৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করে ফায়ার সার্ভিস। ১৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভবন উচ্চ অগ্নিঝুঁকি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এর মধ্যে উত্তরা ১১ নম্বর সেক্টরের ৫/এ নম্বর রোডে অবস্থিত সিঙ্গাপুর ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের এক নম্বর শাখা, শান্তা মারিয়াম ইউনির্ভাসিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনিক্যাল, উত্তরার গরিবে নেওয়াজ এভিনিউ ও গাউছুল আজম এভিনিউতে অবস্থিত মাস্টার মাইন্ড স্কুলের চারটি শাখা, ১১ নম্বর সেক্টরের বিভিন্ন রোডে অবস্থিত মাইলস্টোন কলেজের ৬টি শাখা এবং উত্তরা ৬ নম্বর সেক্টরে আগাখান স্কুল ভবন উচ্চ অগ্নিঝুঁকির তালিকায় চিহ্নিত করা হয়। কুর্মিটোলা ফায়ার স্টেশনের আওতাধীন ৩৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরিদর্শন করে ২৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অগ্নিঝুঁকি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। উচ্চ অগ্নিঝুঁকির শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না থাকলেও এই এলাকায় সবচেয়ে বেশি ৯টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে অগ্নিনিরাপত্তায় সন্তোষজনক হিসেবে চিহ্নিত করে ফায়ার সার্ভিস।

মোহাম্মদপুর ফায়ার স্টেশন এলাকার ৮৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করে উচ্চঝুঁকি না পেলেও সবগুলো প্রতিষ্ঠানকেই ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে ফায়ার সার্ভিস। খিলগাঁও ফায়ার স্টেশন এলাকার ১২২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করে সবগুলোকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এ ছাড়া নিউমার্কেট, লালবাগ ও হাজারীবাগ এলাকার ৬৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করে সবগুলোকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে তালিকাভু্ক্ত করে ফায়ার সার্ভিস।

অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা আছে যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে: ফায়ার সার্ভিসের তালিকায় থাকা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজ, আদমজী ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল, বি এ এফ শাহীন কলেজ, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট গার্লস পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ, শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজ, খিলক্ষেতের তাহসীনুল কোরআন বালিকা মাদ্রাসা, আল মানার মডেল হাই স্কুল, জান্নাতুল বানাত কিন্ডারগার্টেন ও মহিলা মাদ্রাসা, ভাটারায় বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় অবস্থিত ইন্টারন্যাশনাল স্কুল-ঢাকা, গুলশান-২-এর ১০৬ নম্বর রোডে অবস্থিত মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনির্ভাসিটি, নর্থ সাউথ ইউনির্ভাসিটি, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় অবস্থিত ইনডিপেনডেন্ট ইউনির্ভাসিটি অব বাংলাদেশ, মিরপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং বাংলাদেশ ইউনির্ভাসিটি অব প্রফেশনাল, মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, মতিঝিলে টি অ্যান্ড টি উচ্চ বিদ্যালয় এবং কাকরাইলে উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজে অগ্নিনিরাপত্তা সন্তোষজনক তালিকাভুক্ত করে ফায়ার সার্ভিস।

ঝুঁকিপূর্ণ ৭৮৪ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পূর্ণাঙ্গ তালিকা দেখতে ক্লিক করুন

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

প্রিন্স মামুনের সেলুন কেনা নিয়ে মুখ খুললেন অপু বিশ্বাস

দুপুরের মধ্যে ঢাকায় বজ্রবৃষ্টির পূর্বাভাস 

দেশে কত দামে স্বর্ণ বিক্রি হচ্ছে আজ

আফগানিস্তানে কেন বারবার ভয়াবহ ভূমিকম্প আঘাত হানছে

সাদাপাথরে যে সৌন্দর্য ফিরবে না আর

আগস্টের ৩০ দিনে রেমিট্যান্স আসেনি ৯ ব্যাংকে

বায়ুদূষণের তালিকায় শীর্ষ পাঁচে ঢাকা

মাথায় টাক পড়ছে? ৫ অসুখের লক্ষণ হতে পারে চুল পড়া

৪৭তম ট্রফি জেতা হলো না মেসির, ফাইনালে মায়ামির লজ্জার হার

১৩০ বছরের ‘জিয়া বাড়ি’ আজও অবহেলিত

১০

ফের আলোচনায় ভারতের সুপার স্পাই অজিত দোভাল

১১

বিবিসি নাকি ভাই ভাই চ্যানেল, নারী সংবাদিক ভাইরাল

১২

সুস্থ থাকতে রাতে ভাত খাবেন, না রুটি? যা বলছেন পুষ্টিবিদ

১৩

তাহসানের সংগীতের রজতজয়ন্তী পালন হবে অস্ট্রেলিয়ায় 

১৪

পাকিস্তানের বিপক্ষে শি জিনপিংয়ের সহায়তা চাইলেন মোদি

১৫

১ সেপ্টেম্বর: কী ঘটেছিল ইতিহাসের এই দিনে

১৬

বিদ্যুৎ কোম্পানিতে চাকরির সুযোগ, আবেদন করুন আজই

১৭

ডিএমপির দুই অতিরিক্ত কমিশনারের দপ্তর বদল

১৮

মঙ্গলবার ২৪ ঘণ্টা গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকবে যে জেলায়

১৯

উইমেন এমপাওয়ারমেন্ট ফেলোশিপ পেলেন মহিলা দল নেত্রী সুমাইয়া

২০
X