ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আলোচিত স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল ইসলাম আলম ওরফে হিরো আলমের ওপর হামলার ঘটনার জের কাটছেই না। শুরুতে বিষয়টিকে তেমন গুরুত্ব দেওয়া না হলেও জাতিসংঘ, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ প্রভাবশালী বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার চাপের মুখে এবার আরও হার্ডলাইনে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নিজেদের ইমেজ পুনরুদ্ধারে এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তে এবার বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করতে চায় সাংবিধানিক এ সংস্থাটি। কমিশনের অনুমোদন পেলে যে কোনো সময়ই সরকারের কাছে এ প্রস্তাবনা পাঠানো হবে। ইতোমধ্যেই কমিশন গঠনের প্রস্তাব দিয়ে চিঠির খসড়াও তৈরি করা হয়েছে। ইসি সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। এর আগে হামলার ঘটনায় দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়ে ইসিকে অবহিত করতে ডিএমপি কমিশনারকে নির্দেশ দেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গতকালও এ ঘটনায় জড়িত দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে। এর আগে সাতজনকে গ্রেপ্তার করে দুজনকে রিমান্ডে নেয় পুলিশ। সোমবার ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে ভোট গ্রহণের শেষ দিকে বনানী
বিদ্যানিকেতন কেন্দ্রে পরিদর্শনে গেলে হামলার শিকার হন আলোচিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আশরাফুল ইসলাম আলম ওরফে হিরো আলম। তবে হিরো আলমের ওপর হামলার এ ঘটনাকে শুরুতে তেমন আমলে নেয়নি নির্বাচন কমিশন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এটিকে সামান্য বিষয় ও বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করা হয়। ভোটকেন্দ্রের বাইরে হামলা হওয়ায় কিছুই করার নেই বলে প্রায় একইরকম বক্তব্য আসে ইসি ও পুলিশের পক্ষ থেকে। বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং গণমাধ্যমে হামলার চিত্র ফলাও করে ফুটে ওঠা এবং জাতিসংঘসহ বিদেশি প্রভাবশালী দেশগুলোর প্রতিক্রিয়ায় বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে নির্বাচন কমিশন। ফলে নড়েচড়ে বসেন ইসি ও সরকারের দায়িত্বশীলরা। টনক নড়ে পুলিশেরও। হিরো আলমের ওপর হামলাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে ডিএমপি কমিশনারকে ফোনও করেন সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল। শুধু তাই নয়, ব্যবস্থা নিয়ে নির্বাচন কমিশনকে জানানোর জন্যও নির্দেশ দেওয়া হয়। অন্যদিকে হিরো আলমের সমালোচনা থেকে সরে এসে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তিরাও বিষয়টিকে ষড়যন্ত্রমূলক হিসেবে উল্লেখ করে নানা বক্তব্য দিচ্ছেন। ইসি সূত্র জানায়, একজন বিচারপতির নেতৃত্বে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি হতে পারে। কমিটি চেয়ে ইতোমধ্যেই মন্ত্রিপরিষদ সচিবের কাছে লেখা চিঠি প্রস্তুত করা হয়েছে। এ চিঠিতে হিরো আলমের ওপর হামলার কারণ, নির্বাচনী দায়িত্বপ্রাপ্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা, দায়দায়িত্ব নির্ধারণসহ জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করে ব্যবস্থা ও সুপারিশের জন্য এ বিচার বিভাগীয় কমিটি গঠনের প্রয়োজনীয়তার কথা বলা হয় বলে জানা গেছে। নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ কালবেলাকে বলেন, ‘স্বতন্ত্র প্রার্থীর ওপর হামলার ঘটনা তদন্তে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠনের বিষয়ে আলোচনা চলছে। তবে সেটি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। নির্বাচন কমিশন অনুরোধ করতে পারে। কমিটি গঠন করবে সরকার।’ আরও দুজন গ্রেপ্তার, আওয়ামী লীগের অধীনে আর নির্বাচনে যাবেন না হিরো আলম: এদিকে হিরো আলমের ওপর হামলার ঘটনায় মানিক গাজী ও আল আমিন নামে আরও দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে গত বুধবার রাতে রাজধানীর তেজগাঁও ও কারওয়ান বাজার এলাকায় বনানী থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে তাদরে গ্রেপ্তার করে। পুলিশের দাবি, গ্রেপ্তার হওয়া মানিক ও আল আমিন হিরো আলমের ওপর মূল হামলাকারী। এ নিয়ে মোট ৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হলো। মেহেদী হাসান হৃদয়, লিটন, শোয়েব, মাসুদসহ আরও কয়েকজনকে চিহ্নিত করে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। বনানী থানার ওসি মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, হামলার ঘটনায় মানিক ও আল আমিন সরাসরি জড়িত। হামলার সময় হিরো আলমের কোমর ধরে রেখেছিল মানিক, আর তাকে মারধর করেছে আল আমিন। ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে এ দুজনকে শনাক্ত করা হয়েছে। পুলিশ জানায়, গতকাল বৃহস্পতিবার তাদের আদালতে হাজির করে তিন দিন করে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। এদিকে গতকাল বিকেলে রাজধানীর মিন্টো রোডে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কার্যালয়ে যান হিরো আলম। সেখানে তিনি ডিবিপ্রধানের সঙ্গে কথা বলেন। পরে সাংবাদিকদের সঙ্গেও কথা বলেন হিরো আলম। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘এই সরকারের আমলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে তিনবার নির্বাচন করে মার খেয়েছি। বগুড়ায় উপনির্বাচনে জিতেও ফল দেয়নি। ঢাকায় নির্বাচন করতে এসে মার খেলাম। আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে আর নির্বাচনে যাব না। তিনি বলেন, ‘এই নির্বাচনে হামলায় আমি মারাও যেতে পারতাম। নির্বাচন নির্বাচন করে অনেক মায়ের কোল খালি হয়েছে। বউ স্বামী হারিয়েছে। যারা ক্ষমতাশালী দলের লোক, তারা ঠিকই ক্ষমতা দেখায় ক্ষমতা আদায় করে। নির্বাচন করতে এসে যেন কোনো মায়ের বুক খালি না হয়। যারা হামলা করেছে, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।’ জড়িত হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করায় ডিবির প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান তিনি।
মন্তব্য করুন