সদ্য অনুষ্ঠিত ভারতের লোকসভা নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে ব্যর্থ হয়েছে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)। এটাকে বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জন্য বড় বার্তা বলে মনে করছে রাজপথের বিরোধী দল বিএনপি। দলটির নেতাদের মতে, ভারতের নির্বাচন কমিশন বাংলাদেশের মতো সরকারপ্রভাবিত নয়। দেশটিতে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো কার্যকর। সেজন্যই ভারতের জনগণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পেরেছে। ফলে এককভাবে বিজয়ের পথে হোঁচট খেয়েছে নরেন্দ্র মোদির দল বিজেপি। একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় ‘সাম্প্রদায়িক’ ভারত প্রতিষ্ঠার জন্য মোদির যে পরিকল্পনা, তা রুখে দিয়েছে দেশটির গণতন্ত্রকামী জনগণ। অন্যদিকে বাংলাদেশের জনগণের ভোটাধিকার পুনরুদ্ধার ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য বিএনপি আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে এবং এটি অব্যাহত থাকবে বলেও জানিয়েছেন দলটির নেতারা।
ভারতের ৫৪৩ আসনের লোকসভার চূড়ান্ত ফল ঘোষণা করা হয়েছে। এই নির্বাচনে নরেন্দ্র মোদির বিজেপি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। দেশটিতে সরকার গঠনের জন্য ২৭২ আসনের সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রয়োজন হলেও বিজেপি এককভাবে ২৪০ আসন পেয়েছে। এখন সরকার গঠনের জন্য ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স বা এনডিএর শরিকদের ৫৩ আসনের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে বিজেপিকে। বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট ২৯৩ আসনে জয় পেয়েছে। অন্যদিকে দেশটির বিরোধী দল কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইন্ডিয়া জোট ২৩৩ আসন পেয়েছে। এর মধ্যে কংগ্রেস এককভাবে পেয়েছে ৯৯ আসন।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, লোকসভার নির্বাচনে জনমতের প্রতিফলন ঘটেছে। ভারতবর্ষে ভোটের অধিকার আছে বলেই অন্তত তিনবার নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে মোদির ক্ষমতায় যাওয়ার যে ইচ্ছা-ভাবনা, সেটাকে জনগণ রোধ করে দিয়েছে। একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা তারা পাচ্ছে না। বিষয়টি খেয়াল করেই আমাদের ভোটাধিকারের সেই অবস্থাটা ফিরিয়ে আনতে হবে। মানুষ যেন ভোট দিয়ে তার পছন্দমতো প্রতিনিধি নির্বাচিত করতে পারে, তার ব্যবস্থা করতে হবে।
বিএনপির অন্যতম ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু গতকাল বৃহস্পতিবার কালবেলাকে বলেন, ভারতের সাম্প্রতিক নির্বাচন তাদের নিকট প্রতিবেশীদের প্রতি নীতিগত পরিবর্তন হবে কি না, তা দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। এবারও সরকারটা বিজেপির, তবে আগেরটার থেকে কিছুটা পার্থক্য আছে। এজন্য একটু অপেক্ষা করা ভালো হবে।
তিনি বলেন, ভারতের নির্বাচন মোটামুটি সুষ্ঠু হয়েছে, এটা ওখানকার রাজনৈতিক দলগুলো বলছে। ওখানকার নির্বাচন কমিশন আমাদের মতো নয়। তাদের কিছুটা শিরদাঁড়া আছে। ওখানে তো আওয়ামী লীগ নেই! আমি মনে করি বাংলাদেশের জনগণ তাদের ভোটাধিকার ফিরে পাবেই। কিন্তু লড়াই ছাড়া পাবে না। বিএনপি জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সে লক্ষ্যে লড়াই করছে।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ভারতের নির্বাচন হচ্ছে গণতন্ত্রকামীদের জন্য স্বস্তির নিঃশ্বাস। কেননা বিজেপি আরও বেশি আসনে বিজয়ী হলে সেখানে যেভাবে ফ্যাসিজমের যাত্রা চলছিল, সেটিতে নতুন মাত্রা যোগ হতো। ভারতের জনগণ সেটা আটকে দিয়েছে। আজকে দেশে আওয়ামী লীগের নেতা-মন্ত্রীদের ক্রোধ ও হিংসার শিকার হয়ে আছে বাংলাদেশের সমস্ত গণতন্ত্রকামী মানুষ। এ অবস্থার অবসান ঘটাতে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হবে। সেজন্য দলমত নির্বিশেষে সবাইকে আন্দোলনে শরিক হতে হবে।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ভারতের মতো এত বড় একটি গণতান্ত্রিক দেশের মানুষ তাদের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে। আওয়ামী লীগ এখান থেকে শিক্ষা না নিলে বাংলাদেশের জন্য বার্তা হলো, শাসক দল ও তাদের বশংবদদের জন্য এর চেয়েও ভয়ংকর পরিণতি হয়তো অপেক্ষা করছে।