চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে দুই ছাত্রদল নেতাকর্মী নিহত হয়েছেন। নিহতরা হলেন চিকনদণ্ডী ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি অপি দাশ (৩০) এবং ছাত্রদল কর্মী মুহাম্মদ তানিম (২৫)।
মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) রাতের একই ঘটনায় তারা গুরুতর আহত হয়েছিলেন। অপি ঘটনাস্থলেই মারা যান, আর গুরুতর আহত তানিম চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার (১৫ অক্টোবর) ভোরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে মারা যান।
ঘটনাটি ঘটেছে মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে উপজেলার চৌধুরীহাট বাজারের দাতারাম সড়কে।
স্থানীয়রা জানান, ওই সময় হঠাৎ করে কয়েকজন যুবক ধারালো অস্ত্র নিয়ে অপি ও তানিমের ওপর হামলা চালায়। এ সময় দুজনেই রক্তাক্ত হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। পরে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে চমেক হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক অপিকে মৃত ঘোষণা করেন।
চিকিৎসকরা জানান, অপির গলা ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন ছিল। তানিমের পেটেও গভীর ক্ষত পাওয়া যায়।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ি ইনচার্জ নুরুল আলম আশেক বলেন, সারা রাত আইসিইউতে চিকিৎসাধীন থাকার পর বুধবার ভোরে তানিমের মৃত্যু হয়। তার মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
হাটহাজারী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মুহাম্মদ তারেক আজিজ কালবেলাকে বলেন, একদল যুবক ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। অপি ঘটনাস্থলেই মারা যান, তানিমকে গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়া হয়। ভোরে তারও মৃত্যু হয়।
ঘটনার পরপরই এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করেছে।
হাটহাজারী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনজুর কাদের ভূঁইয়া বলেন, প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, হত্যাকাণ্ডে নিহতদের সমবয়সী কয়েকজন তরুণ জড়িত। এ ঘটনায় কক্সবাজারের এক তরুণকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গ্রেপ্তার ব্যক্তির নাম মো. আফসার উদ্দিন (১৮)। তার বাড়ি কক্সবাজার সদরের পানখালী এলাকার সুজন কলোনিতে। আফসারও ঘটনায় জখম হন এবং গোপনে ফতেয়াবাদ এলাকার একটি ক্লিনিকে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন।
ওসি বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে তাকে ক্লিনিক থেকে আটক করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে তার অংশগ্রহণের তথ্য মিলেছে।
ওসি আরও জানান, এখনো মামলা দায়ের হয়নি। তবে গ্রেপ্তারকৃত আফসারকে থানায় ২৪ ঘণ্টার বেশি রাখা যাবে না বিধায় তাকে ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮ এর ৫৪ ধারায় আদালতে চালান দেওয়া হয়েছে। ঘটনার পেছনের কারণ তদন্তে কাজ করছে পুলিশ।
এদিকে, অপি দাশ হত্যার পেছনে সহকর্মীরা অভিযোগ তুলেছেন সুদীপ্ত মহাজন নামে এক তরুণের দিকে। অপির সহকর্মী আরফাইন জুনায়েদ ইফতু বলেন, ‘অপি ভাইকে খুন করেছে সুদীপ্ত মহাজন।’
জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী, সুদীপ্ত চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার হাবিলাসদ্বীপ ইউনিয়নের হারাধন মাস্টারের বাড়ির দীপক মহাজনের ছেলে।
তবে এ বিষয়ে পুলিশ আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি। তদন্ত কর্মকর্তারা বলছেন, প্রাথমিকভাবে ঘটনাটির পেছনে ‘ব্যক্তিগত বিরোধ’ বা ‘প্রতিশোধ’ কাজ করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, নিহত অপি দাশ চৌধুরীহাট এলাকায় বেশ জনপ্রিয় ছিলেন। তিনি হাটহাজারী উপজেলার চিকনদণ্ডী ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি ছিলেন। তার বাড়ি ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বণিকপাড়া এলাকায়। তিনি মিন্টু দাশের ছেলে।
জানা যায়, অপি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি চট্টগ্রাম বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দীনের অনুসারী।
অপির মৃত্যুর খবরে এলাকাজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। বন্ধুবান্ধব ও সহকর্মীরা বুধবার সকালে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভিড় করেন।
মন্তব্য করুন