আবিদ রাইহান
প্রকাশ : ০৭ মার্চ ২০২৫, ১২:৪৩ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ধ্বংসস্তূপের মধ্যে গাজাবাসীর রমজান আয়োজন

ধ্বংসস্তূপের মধ্যে গাজাবাসীর রমজান আয়োজন

গাজার জনগণ টানা দ্বিতীয় বছরের মতো কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে রমজান পালন করছে। অধিকাংশ মানুষ এখন নিঃস্ব—কেউ ঘরবাড়িহীন, কেউ ধ্বংসস্তূপের মধ্যে, আবার কেউ জরাজীর্ণ তাঁবুতে দিন কাটাচ্ছে ইসরায়েলি আগ্রাসনের ফলে। এ বছর পবিত্র রমজানের প্রথম দিনে ফিলিস্তিনিরা ইফতারের জন্য একত্রিত হয়েছিল, তবে এবার তা ছিল তাদের ধ্বংসপ্রাপ্ত ঘরবাড়ির ধ্বংসাবশেষের ওপর বা ন্যূনতম জীবনযাত্রার উপকরণবিহীন তাঁবুর ভেতরে।

গাজার দক্ষিণের রাফাহ শহর ও গাজার মধ্যকার শুজাইয়া এলাকায় ধ্বংসস্তূপের মধ্যে শত শত ফিলিস্তিনি একত্র হয়ে সম্মিলিত ইফতার আয়োজন করেছে। এ ধরনের মুহূর্তের ছবি ও দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপকভাবে শেয়ার হয়েছে। গাজার উত্তর অংশ, যেখানে সম্পূর্ণ আবাসিক এলাকা ধ্বংস হয়ে গেছে, সেখানেও কামাল আদওয়ান হাসপাতালের আশপাশে ফিলিস্তিনিরা সম্মিলিত ইফতারের আয়োজন করেছে, যাতে রমজানের আবহ কিছুটা হলেও অনুভূত হয়। অন্যদিকে খান ইউনিসের কিছু ফিলিস্তিনি পরিবার তাদের ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া ঘরের ওপর বসেই ইফতার করেছে। এটি তাদের মাতৃভূমির প্রতি অটল থাকার সংকল্প এবং জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতির পরিকল্পনাকে প্রত্যাখ্যানের বহিঃপ্রকাশ।

এসব ধ্বংসযজ্ঞের মধ্যেও গাজার ঐতিহ্যবাহী মশারাতি দল (সেহরির সময় ডেকে তোলার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি) তাদের দায়িত্ব পালন শুরু করেছে। খান ইউনিসের রাস্তায় প্রথম রাত থেকেই এসব ব্যক্তি ঘুরে বেড়াচ্ছেন, রমজানের ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করছেন, যদিও পুরো অঞ্চলই ইসরায়েলি আগ্রাসনের ধ্বংসযজ্ঞের শিকার। ধ্বংসের মধ্যেও ফিলিস্তিনিরা বেঁচে থাকার আকাঙ্ক্ষা ধরে রেখেছেন। তারা তাদের ভেঙে যাওয়া বাড়ির অবশিষ্টাংশে ফানুস ঝুলিয়েছেন, দেয়ালে রঙিন চিত্র অঙ্কন করেছেন—যেন ধ্বংসস্তূপের মধ্যেও আশার আলো জ্বলে থাকে।

এ দৃশ্যগুলো ফিলিস্তিনি জনগণের সাহস ও সংকল্পের প্রতিফলন। যুদ্ধের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা সত্ত্বেও তারা জীবনের স্বাভাবিক ছন্দ বজায় রাখার চেষ্টা করছে এবং পবিত্র রমজান উদযাপন করছে। ইফতারের পর ধর্মীয় সংগীত ধ্বনিত হতে থাকে, শিশুরাও আনন্দে মেতে ওঠেÑযেন রমজানের আধ্যাত্মিক পরিবেশ ফিরে পাওয়ার চেষ্টা।

গাজার কর্তৃপক্ষ ইসরায়েলকে মানবিক সহায়তা প্রবেশে বাধা দেওয়ার অভিযোগ করেছে, বিশেষত ২ লাখ তাঁবু ও ৬০ হাজার অস্থায়ী ঘর সরবরাহের ক্ষেত্রে, যা বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের আশ্রয়ের জন্য জরুরি ছিল। এ বাধা দিয়েই ইসরায়েল ১৯ জানুয়ারি কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তির লঙ্ঘন করেছে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে ২০২৫ সালের ১৯ জানুয়ারি পর্যন্ত ইসরায়েল গাজায় গণহত্যা চালিয়েছে, যার ফলে ১ লাখ ৬০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত বা আহত হয়েছে, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। এ ছাড়া ১৪ হাজারের বেশি মানুষ এখনো নিখোঁজ। গত ১৯ জানুয়ারি হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি ও বন্দিবিনিময় চুক্তি কার্যকর হয়েছে, যা মিশর, কাতার ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় তিনটি ধাপে ৪২ দিনব্যাপী চলার কথা রয়েছে।

(আলজাজিরা আরবি অবলম্বনে)

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

মাহিন সরকারের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার

মতপার্থক্য সত্ত্বেও একসঙ্গে দাঁড়ানোই আসল শক্তি : তাসনিম জারা

প্রায় ৪ কোটি টাকার হেরোইন ফেলে চোরাকারবারিদের নদীতে ঝাঁপ

গণঅধিকার পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হলেন ফারুক হাসান

এশিয়া কাপের সুপার ওভারে ভারতের রোমাঞ্চকর জয়

বিমানবন্দরে আটকে দেওয়া হয়েছে সোহেল তাজকে

গুপ্ত রাজনৈতিক মহলের কাঁচা নাটক ব্যর্থ হয়েছে : তারিকুল ইসলাম

পার্কে ঘুরতে গিয়ে ছাত্রদল নেতাদের হামলায় শিশুসন্তানসহ ২ সাংবাদিক আহত

জাতিসংঘে ড. ইউনূসের সফরসঙ্গীর সংখ্যা জানালেন প্রেস সচিব

সম্প্রীতির জন্য নিজের মূল্যবোধকে জাগ্রত করতে হবে : পার্বত্য উপদেষ্টা

১০

শিশুদের জন্য আমাদের আরও অনেক কিছু করা বাকি : ডা. শাহাদাত

১১

তুচ্ছ ঘটনায় সিলেটে যুবককে পিটিয়ে আহত

১২

আমরা ভ্রাতৃত্ববোধ ও ঐক্যের বার্তা ছড়িয়ে দিতে চাই : শরীফ

১৩

পাচার হওয়া সম্পদ ফিরিয়ে দেওয়ার আহ্বান ড. ইউনূসের

১৪

টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পেইন / খুলনা বিভাগে রেজিস্ট্রেশন করেছে লক্ষ্যমাত্রার ৩১ শতাংশ শিশু-কিশোর

১৫

ঢাকা-১৮ আসনে বিএনপি নেতা কফিল উদ্দিনের গণসংযোগ

১৬

শখের রঙিন মাছে লাখপতি জয়

১৭

সরকার একটি দলকে বিশেষ সুবিধা দিচ্ছে : মুহাদ্দিস আব্দুল খালেক

১৮

মিয়ানমারের চলমান সংঘাত সমগ্র অঞ্চলের জন্য উদ্বেগজনক : প্রধান উপদেষ্টা

১৯

অভিষেকের ঝড়ো ফিফটিতে ভারতের রানের পাহাড়

২০
X