কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে ছাত্র-জনতার পক্ষ থেকে বরাবরই বৈষম্য দূর করে একটি অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সমাজ প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছে। তাদের এ আন্দোলনের মুখে সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে এখন ভারতে অবস্থান করছেন। শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর দেশ পরিচালনার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। মুক্তি পাচ্ছেন ১ থেকে ৫ জুলাই পর্যন্ত কোটা আন্দোলনে আটকরাও। আর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ ভেঙে দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। বঙ্গভবনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতির সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধান, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকের সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে সংসদ বিলুপ্ত করা হয়েছে। নির্বাহী আদেশে এ সংসদ বিলুপ্ত করা হলো।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঘিরে কয়েক দিন ধরে চলা সহিংসতার কারণে সর্বত্র আতঙ্ক বিরাজ করছে। গতকাল শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা ও আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এর ফলে পুলিশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আতঙ্ক বিরাজ করছে। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর বেশিরভাগ রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশের উপস্থিতি দেখা যায়নি। কোথাও কোথাও সেনাবাহিনীর সদস্য ও শিক্ষার্থীরা রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে ট্রাফিক সিগন্যাল নিয়ন্ত্রণ করছেন। এদিন সকাল সাড়ে ১০টায় রাজধানীর বিজয় সরণি, জাহাঙ্গীর গেট, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, বাংলা মোটর, শাহবাগ মোড়ে এই চিত্র দেখা যায়। শিক্ষার্থীদের ভাষ্য, সকালে বাসায় ফেরার সময় লক্ষ করলেন রাস্তায় কোনো ট্রাফিক পুলিশ নেই। এতে চতুর্দিকে এক ধরনের বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়। তাৎক্ষণিক কয়েকজন মিলে রাস্তার দায়িত্ব নিয়েছেন। ট্রাফিক পুলিশ যে দায়িত্বটুকু পালন করে তারা সেটুকু পালন করছেন। অর্থাৎ গাড়ির শৃঙ্খলা ফেরাতে তারা রাস্তায় দায়িত্ব পালন করছেন। যতক্ষণ না ট্রাফিক পুলিশ এখানে আসবে ততক্ষণ তারা দায়িত্ব পালন করবেন। ট্রাফিক পুলিশ না এলে তাদের বিকল্প আরেকটি গ্রুপ প্রস্তুত আছে। তারা বেলা ৩টার পর দায়িত্ব গ্রহণ করবে। একইভাবে রাজধানীর বিভিন্ন রাস্তায় শিক্ষার্থীদের ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। এদিকে বাংলাদেশ পুলিশের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমের কাছে পাঠানো এক বিবৃতিতে জানানো হয়— পুলিশের পুরো বাহিনী নয় বরং নেতৃত্বে সমস্যা। যারা দোষ করেছেন, তারা শাস্তি পাবেন, দয়া করে নিরীহদের আক্রমণ করবেন না। বিবৃতিতে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে যারা শাহাদাতবরণ করেছেন তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বলা হয়েছে, এ মুহূর্তে দেশ ও জাতির মতো বাংলাদেশ পুলিশও একটি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। দৃশ্যত বাংলাদেশ পুলিশ এখন সম্পূর্ণরূপে নেতৃত্বহীন। অভিযুক্তরা গা ঢাকা দিয়েছে। জুনিয়র কর্মকর্তা ও সদস্যরা দিশেহারা। তারা সবাই নিরীহ সদস্য। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে দেশের স্বার্থে রাষ্ট্রীয় একটি প্রতিষ্ঠান রক্ষার উদ্দেশ্যে সবার সহযোগিতা চাওয়া হয় বিবৃতি থেকে।
আমরা মনে করি, ছাত্র-জনতা আন্দোলনের মাধ্যমে একটি বৈষম্যহীন, অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বিনির্মাণের পথ উন্মুক্ত হয়েছে। দেশের মানুষকে তারা নতুন করে উজ্জীবিত করেছে। এই আন্দোলন কোনো ধ্বংসচক্রের জন্য নয়, কোনো হানাহানি বা লুটতরাজের জন্য নয়। ধর্মীয়ভাবে সংখ্যালঘুদের রক্ষা করা আমাদের পবিত্র দায়িত্ব। ছাত্র-জনতার এ আন্দোলনে যে বড় বিজয় এসেছে, তা যেন কোনো স্বার্থান্বেষী মহলের প্ররোচনায় কলঙ্কিত না হয়, সেদিকে আমাদের বিশেষভাবে নজর দিতে হবে।