

সমসাময়িক বাস্তবতা, রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং সমাজজুড়ে ছড়িয়ে পড়া নৈরাজ্যকে ভিত্তি করে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী সাংবাদিক ও কলামিস্ট আবুল কালাম আজাদের লেখা তৃতীয় গ্রন্থ ‘নির্বিকার নৃশংসতা’ প্রকাশিত হয়েছে। সম্প্রতি প্রকাশিত বইটিতে তিনি আধুনিক সমাজের রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন, সহিংসতা, নৃশংসতা এবং মানবিক অবক্ষয়ের প্রতিটি অধ্যায় অত্যন্ত সূক্ষ্মতা ও সাহসিকতার সঙ্গে বিশ্লেষণ করেছেন।
লেখক দেখিয়েছেন—আমাদের সময়টা কীভাবে ধীরে ধীরে এক অদ্ভুত সন্ধিক্ষণে এসে দাঁড়িয়েছে। চারদিকে ঘটনাপ্রবাহ এমন দ্রুত বদলায় যে, মানুষ কখন নিজের ভেতরের স্বাভাবিকতা হারিয়ে ফেলে—তা নিজেও আর টের পায় না। প্রতিদিন জন্ম নেওয়া নতুন নতুন ট্র্যাজেডি আমাদের আর বিস্মিত করে না; বরং আমরা যেন এক অদ্ভুত স্বাভাবিকতার সঙ্গে নৃশংসতাকে মেনে নিচ্ছি। অমানবিকতা এখন আর ব্যতিক্রম নয়—এটা যেন দৈনন্দিন জীবনেরই অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আজাদ তার নতুন বইয়ে সেই অনুভূতিশূন্য হয়ে যাওয়া সমাজের যন্ত্রণার গল্পই তুলে ধরেছেন—যে যন্ত্রণা আমরা দেখতে পাই, কিন্তু অনুভব করি না।
রাজনীতি এখন দেশের উন্নয়ন বা জনস্বার্থের জায়গা থেকে ক্রমশ সরে গিয়ে অপরাধীদের নিরাপদ আশ্রয়স্থলে পরিণত হয়েছে। ক্ষমতার লিপ্সা, বিলাসী জীবনের মোহ, দলীয় আধিপত্য—সব মিলিয়ে গড়ে উঠেছে এক ভয়ংকর দানবীয় কাঠামো। এই দানব গ্রাস করছে শিক্ষা, অর্থনীতি, সমাজব্যবস্থা, তরুণ প্রজন্মের স্বপ্ন—এমনকি মানুষের বিবেকও। ক্ষমতার খেলায় ব্যস্ত নেতৃত্বের কাছে নীতি, আদর্শ, ন্যায়—এসব কেবল বক্তৃতার শব্দমাত্র। বাস্তবে তারা দেখে শুধু স্বার্থ, ক্ষমতা আর প্রতিপত্তির অন্ধ দাপট।
একই সঙ্গে বইটিতে আলোচিত হয়েছে ইসলামী মূল্যবোধের কথা—যে মূল্যবোধ মানুষকে মানুষ হিসেবে বাঁচতে শেখায়, শৃঙ্খলা ও ন্যায়ের পথ দেখায়। কিন্তু আজকের মানুষ সেই মূল্যবোধ শুনলেও অনুসরণ করে না; জানলেও মানে না। সেই বিচ্যুতির বেদনা বইয়ের পাতায় স্পষ্টভাবে ধরা দিয়েছে।
‘নির্বিকার নৃশংসতা’ কোনো কল্পকাহিনি নয়—এটা বাস্তবতার নির্মম খতিয়ান। দেশের রাজনীতির মিথ, ভণ্ডামি, ক্ষমতার অপব্যবহার, নৈতিক পতন—সবই এখানে উন্মোচিত হয়েছে। কোনো ব্যক্তি বা দলকে কেন্দ্র করে নয়, বইটির আলো পড়েছে সেই বিকৃত সিস্টেমের ওপর—যে সিস্টেম তরুণের ভবিষ্যৎ লুটে নেয়, মায়ের চোখ শুকিয়ে দেয়, মনীষীর কণ্ঠ স্তব্ধ করে।
লেখক আবুল কালাম আজাদ বলেন, নির্বিকার নৃশংসতা শুধু পড়ার জন্য নয়; এটি ভাবার জন্য, উপলব্ধি করার জন্য, প্রশ্ন তোলার জন্য। আমরা যদি সামান্য মানবিকতাকেও বাঁচিয়ে রাখতে চাই, তাহলে নীরবতা ভাঙতেই হবে। পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র—সব জায়গায় ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়ানোর সাহস থাকতে হবে। এ বই সেই সাহসের কথাই বলে।
মন্তব্য করুন