

হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার দক্ষিণাঞ্চলে মিরপুর-রাউদগাঁও-ফদ্রখলা হয়ে লস্করপুরের পাকা সড়কসহ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ সড়কের রেলক্রসিংয়ে লোহার শিক পুঁতে ব্যারিকেড দিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। গত শুক্রবার স্থানীয়দের অনুরোধ উপেক্ষা করে প্রতিটি সড়কে ৮-১০টি করে শিক সিসি ঢালাই দিয়ে পুঁতে দেন রেল শ্রমিকরা। এতে সব ধরনের যানবাহন চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে পড়ে। বিকল্প পথ না থাকায় ১০-১২ গ্রামের স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, রোগী, কর্মজীবী মানুষসহ সাধারণ পথচারীরা মারাত্মকভাবে ভোগান্তিতে পড়েছেন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, কোনো পূর্বঘোষণা বা নোটিশ ছাড়াই এভাবে রেলক্রসিং বন্ধ করে দেওয়ায় নিত্যদিনের যাতায়াত চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে, জরুরি সেবাও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বহু বছর ধরে এসব রেলক্রসিং দিয়ে স্বাভাবিকভাবে যাতায়াত করা হলেও হঠাৎ করে শিক পুঁতে দেওয়ায় মানুষকে এখন কয়েক কিলোমিটার ঘুরে বিকল্প পথ ব্যবহার করতে হচ্ছে। এতে সময়, শ্রম, ঝুঁকি ও বাড়তি খরচ সবই বৃদ্ধি পেয়েছে।
বাসিন্দাদের দাবি, রেলওয়ের নিরাপত্তা কার্যক্রম গ্রহণের আগে স্থানীয়দের সঙ্গে আলোচনার পাশাপাশি যৌক্তিক বিকল্প ব্যবস্থা নিশ্চিত করা প্রয়োজন ছিল। তা না হলে এই ভোগান্তি আরও তীব্র হবে।
রেললাইনের দক্ষিণপাশের কালুটুলা গ্রামের বাসিন্দা সাইদুজ্জামান নিজাম বলেন, আমরাও তো মানুষ! প্রতিদিন শত শত মানুষ এই সড়ক দিয়ে যানবাহন নিয়ে চলাচল করে। হঠাৎ করে শুধু রেলের নিরাপত্তার কথা বলে আমাদের একমাত্র চলাচলের পথ বন্ধ করে দেওয়া মোটেও ঠিক হয়নি। দ্রুত সমাধান চাই।
গিয়াস উদ্দিন নামের আরেক বাসিন্দা বলেন, এ সড়কটি এলজিইডির। ব্যারিকেড দেওয়ার আগে এলজিইডি ও এলাকাবাসীর সঙ্গে আলোচনা করা উচিত ছিল। রেল কর্তৃপক্ষ দ্রুত ব্যারিকেড অপসারণ করে জরুরি চলাচল নির্বিঘ্ন করার দাবি জানাচ্ছি।
স্থানীয় ইউপি সদস্য ছায়েদ মিয়া বলেন, এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি সড়ক। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের মিরপুর থেকে শায়েস্তাগঞ্জ পর্যন্ত বিকল্প রোড হিসেবে এই পথ ব্যবহার হয়। রেল কর্তৃপক্ষের উচিত ছিল ব্যারিকেড না দিয়ে এখানে একটি নিরাপত্তা গেট স্থাপন করা।
এ বিষয়ে মিরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শামীম আহমেদ বলেন, এ সড়কটি দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের চলাচলের অত্যন্ত গুরত্বপূর্ণ সড়ক। এই সড়কে ব্যারিকেড দেওয়াটা জনস্বার্থ পরিপন্থি। জনস্বার্থ বিবেচনা করে ব্যারিকেড তুলে দিয়ে যানবাহন নিয়ে স্বাভাবিকভাবে চলাচলের ব্যবস্থা করে দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি। এছাড়া এখানে রেল ও জনগণের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে স্থায়ীভাবে একটি গেট স্থাপনের দাবি জানায়।
রেলওয়ের প্রকৌশল বিভাগ সূত্র জানায়, হবিগঞ্জে অরক্ষিত রেলওয়ে লেভেল ক্রসিংকে কেন্দ্র করে প্রতিদিনই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। বাড়ছে প্রাণহানির ঝুঁকি। এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় কঠোর উদ্যোগ নিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ। এর অংশ হিসেবে জেলার অনুমোদনহীন ও ঝুঁকিপূর্ণ ২০টি লেভেল ক্রসিং বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। ধাপে ধাপে সব অরক্ষিত লেভেল ক্রসিং বন্ধ করে দেওয়া হবে। প্রথম পর্যায়ে সর্বোচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ ২০টি ক্রসিং বন্ধ হচ্ছে। পরে বাকি ২৬টিও পর্যায়ক্রমে বন্ধ করা হবে।
মন্তব্য করুন