মাহমুদা টুম্পা
প্রকাশ : ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:৫৮ এএম
আপডেট : ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:০২ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
চারদিক

প্রতিবন্ধীরা থাকুক মূলধারায়

প্রতিবন্ধীরা থাকুক মূলধারায়

কিছু মানুষ জন্মগতভাবেই প্রতিবন্ধী হয়ে জন্মগ্রহণ করে। আবার কেউ কেউ দুরারোধ্য ব্যাধি, দুর্ঘটনা বা যুদ্ধকবলিত হয়ে হন প্রতিবন্ধী। সমাজে মূক বধির বিকলাঙ্গ জড়বুদ্ধি—এরা সবাই প্রতিবন্ধী। এদের জীবনে সমস্যা পদে পদে। এরা পৃথিবীর রং-রূপ-রসের বিলাস-বৈচিত্র্য অনেক কিছু উপভোগ করতে অক্ষম। সুস্থ মানুষের মতো হেঁটে চলে বেড়াতে অক্ষম। নিত্যপ্রভাবিত বিচিত্র কর্মধারায় যোগ দিতে অপারগ। কর্মের জগতে এদের অনাদর, উপেক্ষা। শুধু দেহ-মনেই যে এরা পঙ্গু তা নয়, অর্থনৈতিক দিক থেকেও এরা অনেক পরিবারের বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। আরও নানাভাবে এদের জীবন বিপর্যস্ত। ভালোবাসার মানবিক উষ্ণ স্পর্শ থেকে এরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বঞ্চিত। সামাজিক আনন্দ অনুষ্ঠানে, মানুষের বিচিত্র কর্মযজ্ঞে এদের কুণ্ঠিত প্রবেশ।

আসলে এরা যে আমাদেরই স্বজন, আত্মীয়-পরিজন—এ কথাটা আমরা স্বীকার করতে চাই না। যে জন্ম দৈবের অধীন, যে পঙ্গুতা নিয়তির বিধান, তাকে কর্মের মহিমায় বরণ করার সহৃদয়তা কোথায়? কম ভালোবাসা এদের জীবনের সহজ বিকাশকে করে তুলেছে আরও অসহায়। এরা আত্মনির্ভর হতে পারে না। হারিয়ে ফেলে আত্মবিশ্বাসও। জাতিসংঘ বিংশ শতাব্দীর অপরাহ্ণ প্রহরে প্রতিবন্ধীদের প্রতি পৃথিবীর সমাজ ও রাষ্ট্রগুলোকে দায়িত্বশীল করার জন্য ১৯৮১ সালকে ‘বিশ্ব প্রতিবন্ধী বর্ষ’ রূপে ঘোষণা করেন। জাতিসংঘের উদ্যোগেই প্রতি বছর ৩ ডিসেম্বর বিশ্বে আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস উদযাপিত হয়। ফলে মানবজাতির একটি উপেক্ষিত দিক বিশ্বমানবের দৃষ্টির সম্মুখে উদ্ভাসিত হওয়ার সুযোগ পায়। এ সিদ্ধান্ত বিশেষ তাৎপর্যমণ্ডিত। প্রতিবন্ধীরা দেশ, জাতি বা পরিবারের বোঝা নয়। নয় সমাজের অগ্রগতি বিচিত্র ধারাপথের অন্তরায়। বরং এদের অংশগ্রহণে সেই সমাজপ্রবাহ হবে আরও প্রাণময়, আরও গতিময়। সম্মিলিত কর্মতরঙ্গের মধ্য দিয়েই গড়ে উঠবে এক সমৃদ্ধ বিশ্ব। দীর্ঘকালে পুঞ্জিত গ্লানির অবসান হবে। মনে হবে নতুন প্রত্যয়ে উজ্জীবিত।

বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার গড় হিসাব অনুযায়ী, পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার প্রায় শতকরা দশ ভাগ কোনো না কোনোভাবে প্রতিবন্ধী। শারীরিক ও মানসিক পঙ্গুত্ব মানুষকে প্রতিবন্ধী করে তোলে। মানুষের এ শারীরিক ও মানসিক পঙ্গুত্ব সংঘটিত হয় নানা কারণে। যেমন—জন্মগত, ব্যাধিগত, অপুষ্টি কিংবা দুর্ঘটনাজনিত অথবা অজ্ঞতার কোনো কারণে। এ কারণগুলোর কোনোটির জন্যই প্রতিবন্ধীরা দায়ী নয়। বরং এর জন্য পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের ব্যর্থতাকে দায়ী করা হয়। সমাজ প্রতিবন্ধীদের প্রতি যুগে যুগে অত্যন্ত হৃদয়হীন আচরণ করেছে। ফলে এরা তীব্র মনঃকষ্ট ভোগে। চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যব্যবস্থার অপ্রতুলতা এবং দারিদ্র্য ও অশিক্ষা প্রতিবন্ধী হওয়ার মূল কারণ। আমাদের প্রয়োজন জাগ্রত চেতনার যথার্থ ও সুষ্ঠু কর্মসূচি গ্রহণ। চাই মহৎ অনুভবের বাস্তব রূপায়ণ। এরই মধ্যে প্রতিবন্ধীদের জন্য সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সাহায্যের হাত সম্প্রসারিত করেছে। গত কয়েক বছরে সাত হাজারের ওপর প্রতিবন্ধীর কর্মসংস্থান সম্ভব হয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের সমাজ কল্যাণ অধিদপ্তর প্রতিবন্ধীদের জন্য পাতিপুকুরে প্রশিক্ষণকেন্দ্র খুলেছে। এসব কেন্দ্রে শেখানো হয় সেলাই, কাটিং, ছাপাখানা ও বই বাঁধানোর কাজ। শেখানো হয় হালকা ধরনের যন্ত্রপাতি চালানোর কাজ। শুধু সরকারি উদ্যোগ নয়, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানেও এ ব্রত উদযাপনে নিয়েছে সক্রিয় ভূমিকা। এগিয়ে এসেছে আর্থসামাজিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত বেশ কিছু সংস্থা। প্রতিবন্ধীদের সাহায্যের জন্য ইউএনও, আইএলও এবং বিভিন্ন রাষ্ট্র আজ সচেষ্ট।

বাংলাদেশে পথেঘাটে ঘুরে বেড়ায় সংখ্যাতীত অন্ধ-খঞ্জ। এদের কাতর আর্তনাদে আকাশ-বাতাস বিষাদে ভারাক্রান্ত হয়। আজও এখানে লাখ লাখ প্রতিবন্ধী অন্যের কৃপাপ্রার্থী। ভিক্ষাবৃত্তিই ওদের জীবনধারণের একমাত্র মুশকিল আসান। আসলে প্রতিবন্ধীরা পরিবার, সমাজ কিংবা রাষ্ট্রের গলগ্রহ নয়, নয় করুণার পাত্র, পৃথিবীতে এদেরও কিছু দেওয়ার আছে। আমরা চাই প্রতিবন্ধীরা সমাজের মূলধারায় ফিরে আসুক। এদের মর্যাদা প্রতিষ্ঠা পাক। সেজন্য আমাদের কিছু কাজ করতে হবে। দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে হবে গণমাধ্যমকে। প্রতিবন্ধিতা বিষয়ে গণমাধ্যমের ইতিবাচক ভূমিকা জোরদার করতে হবে। গণমাধ্যমের বার্তাকক্ষ ও অনুষ্ঠানের মূলধারায় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্তি বাড়াতে হবে। সেজন্য সংবেদনশীল নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের জন্য সাংবাদিকসহ গণমাধ্যম ব্যক্তিদের সচেষ্ট থাকতে হবে। গণমাধ্যম কাঠামোতে প্রতিবন্ধিতা বিষয়টি আরও শক্তিশালীভাবে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। প্রতিবন্ধিতাকে এখনো নেতিবাচক বিষয় হিসেবে ধরা হয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এ বিষয়ে দৃশ্যমান উদ্যোগ থাকলেও গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন করপোরেট খাতে এ নিয়ে কাঙ্ক্ষিত সংবেদনশীলতা তৈরি হয়নি। বিদ্যমান ঘাটতি চিহ্নিত করে এগিয়ে যেতে হবে। এ ছাড়া প্রতিবন্ধীদের গণমাধ্যমে নিয়োগের সুযোগ দিয়ে, অনুষ্ঠান ও অন্যান্য আধেয় তৈরি, গণমাধ্যমের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে সংবেদনশীলতা সৃষ্টি, রিপোর্টারদের দক্ষতা উন্নয়ন, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা যেন গণমাধ্যম আধেয় পড়তে, দেখতে ও শুনতে পারে তার জন্য প্রযুক্তিগত পরিকল্পনার ওপর জোর দিতে হবে।

আমাদের উচিত প্রতিবন্ধীদের প্রতি সদয় হওয়া এবং এদের মন থেকে ভালোবাসা। যদি আমরা এদের একটু আদর স্নেহ ও ভালোবাসা দিয়ে গড়ে তুলি, তাহলেই চির অবহেলিত প্রতিবন্ধীরা খুঁজে পাবে তাদের দুর্লভ মানবজন্মের একটি গৌরবময় অধ্যায়।

মাহমুদা টুম্পা, শিক্ষার্থী, এমবিএ

ব্যবস্থাপনা বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

শ্রমিকদল নেতাকে গুলি করে হত্যা

ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধে চসিকের ক্রাশ প্রোগ্রাম

‘তারেক রহমানের নেতৃত্বে আগামীর বাংলাদেশ হবে শান্তি ও সমৃদ্ধির’

হাটহাজারীতে তিন দিনে ৪ মরদেহ

কিশোরীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ, ৩ ধর্ষককে ধরে পুলিশে দিল জনতা 

যে কারণে জাতীয় নির্বাচনের সঙ্গে গণভোটে সমস্যা দেখছেন না মির্জা গালিব

বিচারকের ছেলেকে হত্যা / এক সপ্তাহ আগে জিডিতে বিচারকের স্ত্রী যে অভিযোগ করেছিলেন

৪ বিভাগে নতুন কমিশনার

বাসে আগুন দিয়ে পালানোর সময় ১ জনের মৃত্যু

বিমানবন্দর এলাকায় ২ স্থানে ককটেল বিস্ফোরণ

১০

এএমএফ এশিয়া মার্কেটিং এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড পেলেন ইমরান কাদির

১১

বিএনপি জনগণের দল : বাবুল

১২

প্রশাসনকে জনগণের পাশে থাকতে হবে : গয়েশ্বর

১৩

জনগণের সুখে-দুঃখে পাশে থাকতে চাই : সেলিমুজ্জামান 

১৪

সম্পাদক পরিষদের নতুন কমিটি 

১৫

২৩ জেলায় নতুন ডিসি

১৬

বিএনপি কর্মীর মাথা ফাটালেন জামায়াত নেতারা

১৭

ঝিনাইদহে শেখ মুজিবের ‘এক তর্জনি’ স্তম্ভ গুড়িয়ে দিল ছাত্র-জনতা

১৮

ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধে চসিকের ক্রাশ প্রোগ্রাম

১৯

চট্টগ্রামে ৫০টি অবৈধ ভ্রাম্যমাণ দোকান উচ্ছেদ

২০
X