দীর্ঘ ১৪৮ বছরের টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসে এমন দৃশ্য আগে দেখা যায়নি। অস্ট্রেলিয়ার মিচেল স্টার্ক তার ১০০তম টেস্টে লিখে ফেলেছেন এক অনন্য রূপকথা। জ্যামাইকার স্যাবাইনা পার্কে অনুষ্ঠিত ডে-নাইট টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটিং লাইনআপকে ধ্বংস করে দিয়েছেন মাত্র ১৫ বলে পাঁচ উইকেট নিয়ে, যা টেস্ট ইতিহাসে সবচেয়ে কম বলে পাঁচ উইকেট নেওয়ার রেকর্ড।
দ্বিতীয় ইনিংসে অস্ট্রেলিয়া গুটিয়ে যায় মাত্র ১২১ রানে, ওয়েস্ট ইন্ডিজের সামনে ২০৪ রানের লক্ষ্য। কিন্তু লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে প্রথম ওভারেই স্টার্কের পেস আক্রমণে ভেঙে পড়ে স্বাগতিকরা। ইনিংসের প্রথম বলেই জন ক্যাম্পবেলকে ফিরিয়ে দেন স্টার্ক। একই ওভারে কেভলন অ্যান্ডারসন ও ব্র্যান্ডন কিংকেও ফিরিয়ে দেন, প্রথম ওভারে হ্যাটট্রিক না হলেও তিন উইকেটের ‘মেইডেন’ ওভার উপহার দেন।
প্রথম ছয় বলে ৩-০ স্কোরে পড়ে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। স্টার্ক থামেননি, তৃতীয় ওভারে শাই হোপ ও মিকাইল লুইসকে ফিরিয়ে মাত্র ১৫ বলেই পূরণ করেন পাঁচ উইকেট। ১৯৪৭ সালে আর্নি টশাক, ২০১৫ সালে স্টুয়ার্ট ব্রড ও ২০২১ সালে স্কট বোল্যান্ড ১৯ বলে পাঁচ উইকেটের রেকর্ড করেছিলেন। এবার সেই রেকর্ড ভেঙে ইতিহাস গড়লেন স্টার্ক।
স্টার্কের চতুর্থ উইকেটটি ছিল তার টেস্ট ক্যারিয়ারের ৪০০তম, যা এসেছে শততম টেস্টে। এভাবে তিনি শেন ওয়ার্ন (৭০৮), গ্লেন ম্যাকগ্রা (৫৬৩) এবং নাথান লায়ন (৫৬২)-এর পর অস্ট্রেলিয়ার চতুর্থ বোলার হিসেবে ৪০০ উইকেটের ক্লাবে প্রবেশ করলেন। বিশ্ব ক্রিকেটে তিনি তৃতীয় বাঁহাতি পেসার, যিনি এই মাইলফলক স্পর্শ করলেন।
এরপর জশ হ্যাজেলউড উইকেট নেন একটি। তখন মনে হচ্ছিল সর্বনিম্ন স্কোরের লজ্জার রেকর্ড মনে হয় তারা নিজেদের করে নিচ্ছে। যদিও সেটি হয়নি, তবে শেষে বোলান্ডের হ্যাটট্রিকে টেস্টে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন রানে অলআউট হয় ক্যারিবিয়ানরা।
এর আগে, অস্ট্রেলিয়ার প্রথম ইনিংসে ২২৫ রান, যেখানে স্টিভেন স্মিথ ৪৮ ও ক্যামেরন গ্রিন ৪৬ রান করেন। শামার জোসেফ নেন ৪ উইকেট, সিলস ও গ্রেভসের শিকার যথাক্রমে ৩টি করে উইকেট।
দ্বিতীয় ইনিংসে মাত্র ১২১ রানে গুটিয়ে যাওয়া অস্ট্রেলিয়ার ইনিংসের পর মনে করা হচ্ছিল, ২০৪ রানের লক্ষ্য পেরিয়ে যেতে পারবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। কিন্তু স্টার্কের সেই প্রথম ওভারেই সবকিছু বদলে যায়।
মিচেল স্টার্কের এই অবিশ্বাস্য কীর্তি প্রমাণ করল, বাঁহাতি এই পেসার এখনো ক্রিকেট বিশ্বের অন্যতম সেরা ভয়ংকর অস্ত্র। টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে এমন নজরকাড়া মুহূর্ত হয়তো বারবার আসে না—এ যেন ক্রিকেটের এক অনবদ্য রূপকথা।
মন্তব্য করুন