তরুণ বয়সে চোখে ছিল বড় স্বপ্ন। প্রযুক্তি দিয়ে বিশ্বকে বদলে দেওয়াই ছিল একধরনের পণ। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার ছোট্ট একটি গ্রাম শাহবাজপুর থেকে সেই স্বপ্ন নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিলেন নাসিম মিয়া। আর আজ মালয়েশিয়ায় বসে তিনি বিশ্বজুড়ে ওয়ার্ডপ্রেস কমিউনিটিকে সমৃদ্ধ করছেন।
তার এই নিরলস অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ, সম্প্রতি তিনি নির্বাচিত হয়েছেন সম্মানজনক Yoast Care Fund -এ। এটি কেবল তার ব্যক্তিগত সাফল্য নয়, বরং বাংলাদেশের প্রযুক্তি খাতের জন্য এক অনন্য মাইলফলক।
Yoast Care হচ্ছে বিশ্বব্যাপী স্বেচ্ছাসেবী ওয়ার্ডপ্রেস কন্ট্রিবিউটরদের সম্মান জানাতে প্রতিষ্ঠিত একটি রিওয়ার্ড প্রোগ্রাম। এ ফান্ডে অন্তর্ভুক্ত হওয়া মানে শুধু অর্থনৈতিক সম্মাননা নয়— এটি একজন কন্ট্রিবিউটরের কমিউনিটির প্রতি দায়বদ্ধতা ও অবদানকে বিশ্বমঞ্চে তুলে ধরা।
নাসিম মিয়া এই ফান্ডে নির্বাচিত হয়েছেন ১৩তম বাংলাদেশি হিসেবে। পুরস্কার হিসেবে তিনি পেয়েছেন ৫০০ ইউরো সম্মানী, একটি ডিজিটাল সার্টিফিকেট এবং Yoast ব্যাজ— যা তার ওয়ার্ডপ্রেস প্রোফাইলে গর্বের চিহ্ন হয়ে থাকবে।
২০১৫ সালে এসএসসি ও ২০১৭ সালে এইচএসসি পাস করার পর, ২০১৮ সালে মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমান নাসিম। বর্তমানে তিনি কর্মরত আছেন মালয়েশিয়ার একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি Laminor (M) Sdn Bhd -তে। তবে অফিসের বাইরেও তিনি আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ পরিচয়ে পরিচিত— একজন উৎসর্গিত ওয়ার্ডপ্রেস কন্ট্রিবিউটর হিসেবে।
ওয়ার্ডপ্রেস প্রোফাইল অনুযায়ী, তিনি একজন দক্ষ থিম ও প্লাগইন ডেভেলপার, কাস্টম সলিউশনের স্রষ্টা, এসইও অপটিমাইজার এবং পারফরম্যান্স-বুস্টিং এক্সপার্ট। ২০১৫ সাল থেকেই তিনি ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করে আসছেন, ইতোমধ্যে হাজারেরও বেশি ওয়েবসাইট তৈরি করেছেন বিশ্বজুড়ে ক্লায়েন্টদের জন্য।
নাসিম মিয়া শুধু কোড লেখায় দক্ষ নন, তিনি একাধারে একজন কমিউনিটি অর্গানাইজার, প্রশিক্ষক ও মোটিভেটর। মালয়েশিয়ার ওয়ার্ডপ্রেস মিটআপ ও ওয়ার্ডক্যাম্প আয়োজনের সঙ্গে তিনি সক্রিয়ভাবে যুক্ত। নতুন প্রজন্মকে এগিয়ে নিতে তিনি নিয়মিত আয়োজন করেন কর্মশালা ও মিটআপ, যেখানে নবীন ও অভিজ্ঞ ডেভেলপারদের মধ্যে হয় অভিজ্ঞতা বিনিময়।
নাসিম মিয়ার এই স্বীকৃতি শুধু তার একক প্রচেষ্টার ফসল নয়, এটি গোটা বাংলাদেশের জন্য এক গৌরবের মুহূর্ত। প্রবাসে থেকেও তিনি প্রমাণ করেছেন, একজন ব্যক্তি চাইলে কীভাবে নিজ দেশের নাম বিশ্বমানচিত্রে তুলে ধরতে পারেন। তার এই সাফল্য তরুণদের অনুপ্রাণিত করবে— বিশেষ করে যারা প্রযুক্তিকে পেশা ও সম্ভাবনার মাধ্যম হিসেবে নিতে চান।
আজ নাসিম মিয়া শুধু একজন ওয়ার্ডপ্রেস ডেভেলপার নন, তিনি বাংলাদেশের প্রযুক্তি সম্ভাবনার এক উজ্জ্বল প্রতিচ্ছবি। তার এই অর্জন আমাদের মনে করিয়ে দেয়, মেধা ও পরিশ্রমের কোনো ভৌগোলিক সীমা নেই।
মন্তব্য করুন