বেকারদের একটি বড় অংশ স্নাতক, স্নাতকোত্তর শেষ করে সরকারি বা বেসরকারি চাকরিতে প্রবেশের চেষ্টা করে থাকেন। কিন্তু বাংলাদেশের বেশিরভাগ সরকারি বা বেসরকারি চাকরি পরীক্ষা ঢাকাকেন্দ্রিক হওয়ায়, তা বোঝা দাঁড়িয়েছে বেকারদের জন্য।
ঢাকাকেন্দ্রিক সরকারি বা বেসরকারি চাকরির পরীক্ষা হওয়ায় সবচেয়ে বেশি সমস্যার সম্মুখীন হয় প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আসা মানুষজন। সেসব মানুষ সারা রাত যাতায়াত করে ঢাকায় আসেন পরীক্ষা দেওয়ার জন্য। কিন্তু ঢাকা এসে মুখোমুখি হতে হয় বিভিন্ন সমস্যার। দুষ্কর হয়ে পড়ে পরীক্ষার কেন্দ্র খুঁজে বের করা। এ ছাড়াও যাতায়াতের সমস্যা তো আছেই।
চাকরির পরীক্ষা ঢাকাকেন্দ্রিক হওয়ায় ঢাকার বাইরে থেকে আসা প্রার্থীদের লম্বা একটা সময় যাতায়াত করে আসতে হয়। এতে তারা যেমন শারীরিকভাবে ক্লান্ত হচ্ছে; ঠিক তেমনি যাতায়াত ভাড়া হিসেবে অনেক টাকা ব্যয় করতে হচ্ছে। বেশিরভাগ চাকরিপ্রার্থীরা বেকার হওয়ায় এই ব্যয় ভার বহন করা তাদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। ফলে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও তারা চাকরির পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারছেন না।
বর্তমান বাংলাদেশ তথা সারা বিশ্বে জনবহুল এবং যানজটে জর্জরিত শহরের মধ্যে অন্যতম শহর ঢাকা। ঢাকাকেন্দ্রিক চাকরির পরীক্ষায় নিরাপত্তা একটি বড় উদ্বেগের বিষয়। বিশেষ করে নারী চাকরিপ্রত্যাশীদের জন্য। নিরাপত্তার অভাবের জন্য অভিভাবকরা নারী প্রার্থীদের ঢাকায় আসতে দিতে চায় না। ফলস্বরূপ অংশগ্রহণ করতে পারছেন না নারীরা। প্রায়ই সময় শোনা যাচ্ছে রাস্তায় ডাকাতি, চুরি, হাইজ্যাকের মতো ঘটনা। এতে মৃত্যুর ঝুঁকিও থেকে যাচ্ছে। পর্যাপ্ত নিরাপত্তা না থাকায় চাকরি পরীক্ষায় আবেদন করেও অংশগ্রহণ করতে পারছেন না চাকরিপ্রত্যাশীরা।
সরকারি চাকরির পরীক্ষা জেলা শহরে আয়োজন করার দাবি একটি যৌক্তিক এবং সময়োপযোগী দাবি। এতে চাকরিপ্রার্থীদের ভোগান্তি যেমন কমবে, তেমনি দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবস্থানরত শিক্ষিত বেকার যুবকদের দুর্দশাও ঘুচবে। স্বাচ্ছন্দ্যে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষাগুলোয় অংশ নিতে পারবে প্রান্তিক পর্যায়ের শিক্ষিত নারী এবং পুরুষরা। চাকরির পরীক্ষা দিতে বেগ পোহাতে হবে না কাউকে। এটি দেশের প্রতিটি অঞ্চলের প্রার্থীদের জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি করবে এবং তাদের ওপর অর্থনৈতিক, শারীরিক ও মানসিক চাপ কমাবে। তাই, সরকারের উচিত এ বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা এবং দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা। এতে করে শুধু চাকরিপ্রার্থীদের জন্যই নয়; বরং দেশটির সার্বিক উন্নয়নে বড় ভূমিকা রাখা সম্ভব হবে।
তাহমিদুল হাসান আকন্দ
শিক্ষার্থী, গণিত বিভাগ
সরকারি তিতুমীর কলেজ