একই রাসায়নিক, একই শক্তি, একই ধরনের ওষুধ—তবু কোম্পানিভেদে তার দাম দ্বিগুণ, কখনো তিনগুণ! এ অসম ব্যবস্থার সবচেয়ে বড় শিকার হচ্ছে গ্রামের সেই বৃদ্ধ মানুষটা, যিনি হাঁটতে পারেন না কিন্তু প্রেসক্রিপশন হাতে নিয়ে ফার্মেসিতে যান ওষুধ কিনতে; কিংবা শহরের ফুটপাতের নিচে বসে থাকা অসুস্থ মা, যিনি সন্তানের জন্য প্যারাসিটামল কিনতে গিয়ে জেনে যান—একটা কোম্পানির দাম ২ টাকা, আরেকটার ৫ টাকা! এটা শুধু সংখ্যা নয়, এটা বাঁচা-মরার ব্যবধান। আমরা যারা সচল, স্বাস্থ্যবান, হয়তো পারছি সামলাতে কিন্তু সমাজের সেই বিপুলসংখ্যক মানুষ যারা প্রতিদিন ওষুধের দাম দেখে দুশ্চিন্তায় পড়ে, তাদের জন্য এটা নিছক বৈষম্য নয়, একপ্রকার নিষ্ঠুরতা। আমরা কীভাবে নিশ্চুপ থাকি, যখন আমাদের দেশের সবচেয়ে দুর্বল মানুষগুলো জীবন রক্ষার মৌলিক অধিকার থেকেও বঞ্চিত হয়? একই পরিমাণ সক্রিয় উপাদান থাকা সত্ত্বেও বাজারে কোম্পানিভেদে ওষুধের দামে এত বিশাল পার্থক্য কেন—এ প্রশ্ন আজ কোটি মানুষের। বড় বড় কোম্পানি তাদের ব্র্যান্ড ধরে রাখতে বিপুল অঙ্কে মার্কেটিং করে, চিকিৎসকদের মাধ্যমে প্রেসক্রিপশন বাজার নিয়ন্ত্রণ করে, যা শেষমেশ খরচ হিসেবে ওষুধের দামে চাপিয়ে দেয়। গরিব রোগীকে জোর করে দেওয়া হয় সেই দামি ব্র্যান্ড, অথচ পাশের শেলফেই থাকে একই ওষুধ, সস্তা দামে, যা সে কখনো চিনতেই পারে না। আর প্রেসক্রিপশন না থাকলে ফার্মেসিও নিরাপদ না। ফলাফল? রোগীর জীবন আর পকেট—দুটোই ঝুঁকিতে। এ ব্যবস্থার বিরুদ্ধে প্রশ্ন তোলাই এখন সময়ের দাবি। সম্প্রতি সরকারের স্বাস্থ্যবিষয়ক সংস্কার কমিশন হাসপাতালে চিকিৎসকদের সঙ্গে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা আর সরাসরি দেখা করতে পারবে না। চিকিৎসকদের ই-মেইলের মাধ্যমে তাদের ওষুধের কথা জানাতে হবে বলে প্রস্তাব করেন। এ ছাড়া তারা ওষুধের দাম, টেস্ট ও ডাক্তারের পরামর্শ ফি নির্ধারিত করে দেওয়ার ব্যাপারে জোর দেন কিছু ‘অত্যাবশ্যকীয় ওষুধ’-এর দাম নির্ধারণ করে দিলেও, বাকিগুলো যেন করপোরেটের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। ক্যান্সার, কিডনি, লিভার বা থাইরয়েডের মতো রোগে আক্রান্তরা প্রতিনিয়ত ওষুধ কিনতে গিয়ে অর্থনৈতিক নিঃস্বতার মুখে পড়ছে, অথচ একই ওষুধ ভিন্ন কোম্পানিতে পাওয়া যায় একেকরকম দামে। জনগণ জানে না, সরকারও জানার ভান করে না। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর কি শুধুই কাগজে-কলমে আছে, নাকি বাস্তবে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর কোনো ইচ্ছাও আছে। এ দামের বৈষম্য অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। সরকারকে কঠোরভাবে প্রতিটি ওষুধের জন্য সর্বোচ্চ মূল্য নির্ধারণ করতে হবে, কোম্পানিভেদে দামের সীমা বেঁধে দিতে হবে, যাতে গরিব মানুষ ঠকছে না—এ নিশ্চয়তা দেওয়া আজকের মানবিক দায়িত্ব। ওষুধ জীবনরক্ষার উপকরণ, তা কখনোই পণ্যে রূপ নিতে পারে না। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উচিত দ্রুত এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া।
ফিয়াদ নওশাদ ইয়ামিন, শিক্ষার্থী, কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ মিডিয়া কমিউনিকেশন অ্যান্ড জার্নালিজম ডিপার্টমেন্ট
মন্তব্য করুন