সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীতে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পদে উন্নীত হয়েছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত শরিফুল এম খান। তাকে ঘিরে ইতোমধ্যেই বাংলাদেশের গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার ঝড় উঠেছে। অনেকেই এ অর্জনকে জাতীয় গৌরব হিসেবে দেখছেন।
মঙ্গলবার ঢাকায় অবস্থিত মার্কিন দূতাবাস তাদের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে শরিফুল খানকে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিনন্দন জানিয়েছে।
দূতাবাসের বার্তায় উল্লেখ করা হয়, ‘ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শরিফুল এম খান আমেরিকার উৎকর্ষের প্রতীক এবং বাংলাদেশি-আমেরিকানদের জন্য এক অনন্য অনুপ্রেরণা। যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবাহিনীতে এই পদে পৌঁছানো প্রথম বাংলাদেশি-আমেরিকান হিসেবে তার নিবেদন ও নেতৃত্ব মাতৃভূমির গৌরব বৃদ্ধির পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা অগ্রযাত্রায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’
গত জুনে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যে ৫৫ জন সামরিক কর্মকর্তাকে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পদে পদোন্নতির অনুমোদন দেন, শরিফুল খান ছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম। পরবর্তীতে ১৩ জুন মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে তার পদোন্নতি আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করা হয়।
এরপর ২০ আগস্ট ওয়াশিংটনের পেন্টাগনে এক আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানে শরিফুল খানসহ অন্য কর্মকর্তাদের অভিষেক সম্পন্ন হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম মুসলিম রাষ্ট্রদূত এম ওসমান সিদ্দিক। তিনি এক্স-এ দেওয়া পোস্টে আনন্দ প্রকাশ করে জানান, মার্কিন বিমানবাহিনীর ভাইস চিফ জেনারেল শন ব্র্যাটোন স্বয়ং শরিফুল খানকে শপথবাক্য পাঠ করান।
বাংলাদেশে জন্ম নেওয়া শরিফুল খান এখন পর্যন্ত মার্কিন সামরিক বাহিনীতে এই পদে উন্নীত হওয়া একমাত্র বাংলাদেশি-আমেরিকান। বর্তমানে তিনি ‘গোল্ডেন ডোম ফর আমেরিকা’ প্রকল্পের স্টাফ ডিরেক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এ দায়িত্বে তিনি বহুস্তরের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার কৌশল, নীতি, পরিকল্পনা ও সমন্বয় তত্ত্বাবধান করছেন। পাশাপাশি শিল্প খাত, বিশ্ববিদ্যালয়, গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও সরকারি সংস্থার সঙ্গে অংশীদারত্ব গড়ে তুলছেন, যাতে দ্রুত ও কার্যকরভাবে নতুন প্রজন্মের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা তৈরি করা যায়।
১৯৯৭ সালে শরিফুল খান ইউনাইটেড স্টেটস এয়ার ফোর্স একাডেমি থেকে কমিশনপ্রাপ্ত হন এবং রাজনৈতিক বিজ্ঞানে স্নাতক সম্পন্ন করেন। এরপর মহাকাশ ব্যবস্থা, নিয়ন্ত্রণ ও উৎক্ষেপণ প্রকল্পে কাজ করে তিনি একজন দক্ষ স্যাটেলাইট অপারেটর হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন। কর্মজীবনে তিনি কৌশলগত বুদ্ধিমত্তা, সামরিক কৌশল ও জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ে একাধিক মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেছেন।
২০০১ সালে কুয়েতের আলী আল সালেম বিমানঘাঁটিতে এবং ২০০৭ সালে ‘অপারেশন সাইলেন্ট সেন্ট্রি’তে ডিপ্লয়মেন্ট কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। কর্মজীবনে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে নেতৃত্ব দেওয়ার পাশাপাশি ডিফেন্স মেরিটোরিয়াস সার্ভিস মেডেল, মেরিটোরিয়াস সার্ভিস মেডেলসহ বহু সামরিক পদক ও সম্মাননা অর্জন করেছেন এই বাংলাদেশি-আমেরিকান সেনা কর্মকর্তা।
মন্তব্য করুন