কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১০ অক্টোবর ২০২৫, ১২:০০ এএম
আপডেট : ১০ অক্টোবর ২০২৫, ০৮:১২ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

উন্নয়নের রোল মডেল ভিয়েতনাম

ড. মইনুল ইসলাম
উন্নয়নের রোল মডেল ভিয়েতনাম

ভিয়েতনাম প্রকৃত প্রস্তাবে স্বাধীনতা-যুদ্ধে বিজয় অর্জন করেছে ১৯৭৫ সালে। বিশ্বের জনগণের কাছে তারা হলো সবচেয়ে বেশি রক্ত-ঝরানো স্বাধীনতা যুদ্ধে বিজয়ী দেশ। সমাজতন্ত্রী ভিয়েতনাম বিশ্বের একমাত্র দেশ, যারা বিশ্বের দুই-দুটি সুপার-পাওয়ার ফ্রান্স ও যুক্তরাষ্ট্রকে পরাজিত করে নিজেদের স্বাধীনতা যুদ্ধে বিজয় অর্জন করেছে, ফ্রান্স পরাজয় বরণ করেছে ১৯৫৪ এবং যুক্তরাষ্ট্র ১৯৭৫ সালে। ১৯৭৫ সালের সেপ্টেম্বরে সমাজতান্ত্রিক ভিয়েতনাম যখন স্বাধীন দেশ হিসেবে যাত্রা শুরু করেছিল, তখন তারা ছিল বিশ্বের দরিদ্রতম দেশগুলোর একটি

২০০৮ সালের পর শুরু হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ব-একাধিপত্যের পতনের ধারা। ১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সমাপ্ত হওয়ার পর, ৮০ বছর ধরে চলেছে যুক্তরাষ্ট্রের সাম্রাজ্যবাদী বিশ্ব-আধিপত্য (হেজিমনি)। কিন্তু ২০২৫ সালে তাদের সেই একাধিপত্য অনেকখানি খর্ব হতে চলেছে বলা চলে। বিশেষত, ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকার নেতৃত্বে ব্রিকস প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর ক্রমেই মার্কিন আধিপত্যের পরিবর্তে বিশ্ব একটি ‘মাল্টিপোলার ওয়ার্ল্ড’ গড়ে তোলার পথে এগিয়ে চলেছে। ১৯৪৫-৯১ সালের বিশ্বে সোভিয়েত ইউনিয়ন সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোর নেতা হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের হেজিমনিকে বারবার রুখে দাঁড়ানোর কারণে মার্কিনিরা প্রায়ই চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ত। প্রায় সব দেশেই ওই পর্বে সরকার পরিবর্তনের পেছনে হয় মার্কিন হস্তক্ষেপে, নয়তো সোভিয়েত সহযোগিতা কার্যকর থাকত। ওই পর্বে লাতিন আমেরিকায় কিউবা ও নিকারাগুয়া ছাড়া অন্য কোনো দেশে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র গড়ে উঠতে দেয়নি যুক্তরাষ্ট্র। বেশ কয়েকটি লাতিন আমেরিকার দেশে বেশ কয়েকবার সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব সফল হলেও, যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ আগ্রাসন কিংবা গোপন ক্যু-দেতার কারণে সেসব সরকারের পতন ঠেকানো যায়নি। গ্রানাডায় সরাসরি মার্কিন সেনাবাহিনী সরকারের পতন ঘটিয়েছে, আবার চিলিতে সিআইএ সামরিক অভ্যুত্থান ঘটিয়ে সালভাদোর আলেন্দেকে হত্যা করে সরকারকে উৎখাত করেছে। নিকারাগুয়ায় সান্দিনিস্তা সরকারকে সিআইএ উৎখাত করলেও তারা আবার জনগণের ভোটে ক্ষমতায় ফিরে এসেছে। বলা হয় যে, লাতিন আমেরিকার প্রায় সব দেশে সামরিক একনায়কদের ক্ষমতায় বসানোর পেছনে ওই সময় সিআইএর কালোহাত প্রত্যক্ষ ভূমিকা পালন করত। আফ্রিকার বিভিন্ন দেশেও রাষ্ট্রক্ষমতার পটপরিবর্তনে প্রায়ই মার্কিন অথবা ফ্রান্স ও ব্রিটেনের গোপন ভূমিকা থাকত ওই পর্বে। এতদ্সত্ত্বেও এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশে ১৯৪৫-৯১ পর্বে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ঠেকাতে পারেনি যুক্তরাষ্ট্র। ১৯৫০-৫৩-এর কোরিয়া যুদ্ধের মাধ্যমে উত্তর কোরিয়ায় সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, যা আজও টিকে রয়েছে। ১৯৫৪ সালে ভিয়েতনামের সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রের হাতে পরাজয় বরণ করতে হয়েছে ফ্রান্সকে, কিন্তু ১৯৫৫ সালে আবার মার্কিন পুতুল সরকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দক্ষিণ ভিয়েতনামে জেঁকে বসেছে যুক্তরাষ্ট্র। ফলে, ২০ বছর ভিয়েতনামে চলেছে যুক্তরাষ্ট্র বনাম উত্তর ভিয়েতনামের সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রের মহারক্তক্ষয়ী যুদ্ধ। প্রায় ২০ লাখ ভিয়েতনামীর মৃত্যুর বিনিময়ে ওই যুদ্ধে বিজয় ছিনিয়ে নিয়েছিল ভিয়েতনাম, লজ্জাজনক পরাজয় মেনে নিয়ে দক্ষিণ ভিয়েতনাম থেকে ১৯৭৫ সালে পালাতে হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রকে। ওই সময় কাম্পুচিয়া ও লাওসেও সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ১৯৪৯ সালে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের মাধ্যমে গণপ্রজাতন্ত্রী চীন প্রতিষ্ঠিত হলেও মার্কিনিরা ১৯৭১ সাল পর্যন্ত চীনের ওই রাষ্ট্রকে স্বীকার করে নেয়নি (১৯৭১ সালে চীন সফরে গিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিক্সন চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক স্থাপন করেছিলেন সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রতিপক্ষ হিসেবে গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে)। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে পাকিস্তানকে আত্মসমর্পণে বাধ্য করে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে মার্কিনিদের প্রত্যক্ষ বিরোধিতা সত্ত্বেও। আশির দশকে পোল্যান্ডে সমাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন সফল হওয়ায় পূর্ব ইউরোপের সব সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রে জনগণের সংগ্রামের মাধ্যমে ডমিনো স্টাইলে ভেঙে পড়ে সমাজতন্ত্র। সবশেষে ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিলোপ ঘোষণা করে রাশিয়া। এসব পরিবর্তনের পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের কালোহাত প্রতিটি ক্ষেত্রেই সক্রিয় ছিল।

এই ঐতিহাসিক প্রতিবিপ্লবের ধারার কারণে মনে করা হয়েছিল, সমাজতন্ত্র ক্রমেই বিশ্ব থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাবে। কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়ন ও পূর্ব ইউরোপের রাষ্ট্রগুলোতে সমাজতান্ত্রিক মডেলগুলোর পতন শুরু হওয়ার আগেই অথবা সমসাময়িককালে চীন ১৯৭৮ ও ভিয়েতনাম ১৯৮৬ সালে তাদের সমাজতান্ত্রিক মডেলগুলোয় যুগোপযোগী পরিবর্তন সাধন করে উন্নয়নকে ত্বরান্বিত ও টেকসই করায় চমকপ্রদ সফলতা অর্জন করতে সমর্থ হয়। সোভিয়েত স্টাইলের সমাজতান্ত্রিক মডেল যে একসময় স্থবিরতায় আক্রান্ত হবে, সে বাস্তবতা উপলব্ধি করে চীনে ১৯৭৮ সালে অভূতপূর্ব বিপ্লবী-সংস্কার কার্যক্রম গৃহীত হয়, যেখানে কৃষি খাতে আবার ‘ফ্যামিলি রেসপনসিবিলিটি সিস্টেম’ চালু করে সম্পত্তির ওপর জনগণের মালিকানা ফিরিয়ে আনা হয়; অন্যদিকে সারা দেশের শহর ও গ্রামগুলোতে ‘টাউনশিপ অ্যান্ড ভিলেজ এন্টারপ্রাইজ’ (টিভিই) চালুর মাধ্যমে সীমিত পরিসরে প্রাইভেট এন্টারপ্রিনিউরশিপ ও সমবায় কার্যক্রম অনুমোদনের ব্যবস্থা করা হয়। চীনে কয়েক লাখ টিভিই গড়ে উঠেছে গত ৪০ বছরে। একই সঙ্গে, প্রবল ও সুদূরপ্রসারী প্রণোদনা দিয়ে বৈদেশিক শিল্পপুঁজি, বহুজাতিক করপোরেশন ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে চীনে আমন্ত্রণ জানায়। সারা বিশ্ব থেকে অভূতপূর্ব দ্রুততায় চীনে ছুটে আসে বহুজাতিক পুঁজিবাদী বিনিয়োগ। দেশটি গ্রহণ করে রপ্তানিমুখী শিল্পায়নের একটি চমকপ্রদ মডেল, যেখানে রাষ্ট্র সুপরিকল্পিতভাবে রপ্তানি খাতে প্রাইভেট সেক্টরের বিকাশের পথের সব বাধাবিঘ্ন দূর করার ক্ষেত্রে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করে। গত তিন দশক ধরে চীন বিশ্বের সবচেয়ে বড় রপ্তানিকারক দেশে পরিণত হয়েছে। বলা হয়, অধিকাংশ শিল্পের ক্ষেত্রে তারা এখন ‘বিশ্বের ফ্যাক্টরি’। অথচ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক নিরাপত্তা খাতে চীন রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি বহাল রেখে দিয়ে বৈষম্য বৃদ্ধিকে রুখে দাঁড়ায়। পাশাপাশি, অত্যন্ত সুচতুর পরিকল্পনার মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় শিল্প-বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোকেও প্রণোদনা ও পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে দ্রুত উন্নতি সাধনের পথে এগিয়ে নিয়ে গেছে। এর ফলে, অর্থনীতির ৫০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ ২০২৫ সালেও বহাল রয়ে গেছে রাষ্ট্রের মালিকানায়, বাকি ৫০ শতাংশের ওপর প্রাইভেট সেক্টরের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় কোনোরকমের বাধা খাড়া করেনি রাষ্ট্র। সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ হলো, এ নতুন মডেলের বাস্তবায়নে চীন রাষ্ট্রক্ষমতার ওপর কমিউনিস্ট পার্টির নিয়ন্ত্রণ এতটুকুও শিথিল করেনি, অর্থনীতির ওপর কমিউনিস্ট পার্টির নিয়ন্ত্রণও পুরোপুরি অটুট রয়ে গেছে। তারা এ মডেলকে নাম দিয়েছে ‘সমাজতান্ত্রিক বাজার অর্থনীতি’। ২০০৮ সালের মধ্যেই চীন দেশ থেকে দারিদ্র্য দূরীকরণে শতভাগ সফলতা অর্জন করে। আইএমএফ ঘোষণা করেছে, ক্রয়ক্ষমতা সাম্যের নিক্তিতে ২০১৪ সালেই যুক্তরাষ্ট্রকে হটিয়ে চীন বিশ্বের সর্ববৃহৎ অর্থনীতিতে পরিণত হয়েছে। ২০৩০-৩১ সাল নাগাদ চীন নমিনাল ডলারেও বিশ্বের সর্ববৃহৎ অর্থনীতিতে পরিণত হবে।

অন্যদিকে, ভিয়েতনাম প্রকৃত প্রস্তাবে স্বাধীনতা-যুদ্ধে বিজয় অর্জন করেছে ১৯৭৫ সালে। বিশ্বের জনগণের কাছে তারা হলো সবচেয়ে বেশি রক্ত-ঝরানো স্বাধীনতা যুদ্ধে বিজয়ী দেশ। সমাজতন্ত্রী ভিয়েতনাম বিশ্বের একমাত্র দেশ, যারা বিশ্বের দুই-দুটি সুপার-পাওয়ার ফ্রান্স ও যুক্তরাষ্ট্রকে পরাজিত করে নিজেদের স্বাধীনতা যুদ্ধে বিজয় অর্জন করেছে, ফ্রান্স পরাজয় বরণ করেছে ১৯৫৪ এবং যুক্তরাষ্ট্র ১৯৭৫ সালে। ১৯৭৫ সালের সেপ্টেম্বরে সমাজতান্ত্রিক ভিয়েতনাম যখন স্বাধীন দেশ হিসেবে যাত্রা শুরু করেছিল, তখন তারা ছিল বিশ্বের দরিদ্রতম দেশগুলোর একটি। এতদ্সত্ত্বেও ভিয়েতনাম কখনোই কোনো দেশের কাছে মাথানত করেনি, ভিক্ষার জন্য হাত পাতেনি। এমনকি, অনুদান ও ‘সফট লোনের’ আশায় জাতিসংঘের স্বল্পোন্নত দেশের ক্যাটাগরিতে অন্তর্ভুক্ত হতেও আবেদন করেনি। অথচ, কী দারুণ কষ্টকর ছিল ১৯৭৫-পরবর্তী বছরগুলোতে ভিয়েতনামের জনগণের জীবন! জনগণের মাথাপিছু জিডিপি ১৯৭৪ সালে ছিল মাত্র ৬৫ ডলার, ১৯৮৫ সালে ছিল ২৮৫ ডলার। ২০২৫ সালে আইএমএফের প্রাক্কলন মোতাবেক ভিয়েতনামের মোট জিডিপি ৪৯০ বিলিয়ন ডলার। ২০২৫ সালে মাথাপিছু নমিনাল জিডিপি ৪৮০৬ ডলারে পৌঁছে গেছে, যেটাকে ‘মিরাকল’ বলা হচ্ছে। ক্রয়ক্ষমতার সমতার ভিত্তিতে মাথাপিছু জিডিপি ২০২৪ সালে পৌঁছে গেছে ১৭ হাজার ৪৮৪ পিপিপি ডলারে। জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ২০০৫ সালে সর্বোচ্চ ৮.৫ শতাংশে পৌঁছে গিয়েছিল। সর্বশেষ ২০২৪ সালে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৬.৫ শতাংশ। ২০২৪ সালে মাত্র ২ শতাংশ জনগণ দারিদ্র্যসীমার নিচে অবস্থান করছিল। ১৯৮৬ সালে ভিয়েতনামও ‘দোই মোই’ বা রিনোভেশন নাম দিয়ে ব্যাপক সংস্কার কার্যক্রম গ্রহণ করে। ১৯৮৬ সালে ‘দোই মোই’ সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়ন শুরু হওয়ার ৩৯ বছর পর এখন পাশ্চাত্যের অর্থনৈতিক উন্নয়ন-চিন্তকরা ভিয়েতনামের অর্থনীতিকে ‘সোশ্যালিস্ট-ওরিয়েন্টেড মার্কেট ইকোনমি’ হিসেবে বর্ণনা করছেন। ‘দোই মোই’ কর্মসূচিতে ‘কালেকটিভ ফার্মিং’ নিষিদ্ধ হয়েছে, জমির ওপর জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং অর্থনীতিতে ব্যক্তিগত উদ্যোগ ও রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ উভয়কে উৎসাহিত করা হয়েছে। ‘দোই মোই’ অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংস্কারের প্রধান তিনটি ডাইমেনশন হলো—১. অত্যন্ত শক্তহাতে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য উদারীকরণ; ২. অত্যন্ত দ্রুত অভ্যন্তরীণ অর্থনীতির বি-নিয়ন্ত্রণ এবং সরকারি হস্তক্ষেপে হ্রাসের মাধ্যমে ব্যবসা করার খরচ ও বাধাবিঘ্ন কমিয়ে ফেলা এবং ৩. রাষ্ট্রীয় খাতের বিনিয়োগ প্রবলভাবে জোরদার করার মাধ্যমে মানব উন্নয়ন (শিক্ষা) ও ভৌত অবকাঠামো উন্নয়নকে প্রথম অগ্রাধিকারে পরিণত করা। বিশেষত, প্রাইমারি শিক্ষা ও বৃত্তিমূলক (ভোকেশনাল) শিক্ষাকে সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দিয়ে ভিয়েতনাম ২০০০ সালের মধ্যেই তার পুরো জনসংখ্যাকে শতভাগ শিক্ষিত করে তুলেছে এবং জনগণের বিশাল একটি অংশকে প্রযুক্তিগত দক্ষতা অর্জনে সফল করে তুলেছে। একইভাবে উল্লেখযোগ্য যে, ভিয়েতনাম তার শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় বৈষম্য তেমন একটা বাড়তে দেয়নি। অর্থনৈতিক উন্নয়নের সুফলকে কয়েকটি নগরে কেন্দ্রীভূত না করে গ্রামীণ জনগণের মধ্যে উন্নয়নের সব ডাইমেনশনকে পৌঁছে দিতে বদ্ধপরিকর। বৈদেশিক বিনিয়োগ প্রবলভাবে উৎসাহিত করে চলেছে। স্যামসাং, এলজি, অলিম্পাস, পাইওনিয়ার—এসব কোম্পানির দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় হাব এখন ভিয়েতনামে। এখন তাদের প্রতি বছর বৈদেশিক বিনিয়োগ প্রবাহ দাঁড়াচ্ছে ২০-২৫ বিলিয়ন ডলার। ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন চমকপ্রদ। বন্দর, মহাসড়ক ও সুলভ গণপরিবহনের ক্ষেত্রে ভিয়েতনাম দ্রুত আধুনিকায়নে সফল একটি দেশ। তৈরি পোশাক রপ্তানিতে দেশটি এখন বাংলাদেশকে হটিয়ে মাঝেমধ্যে গণচীনের পর বিশ্বের দ্বিতীয় অবস্থানটি দখল করে নিচ্ছে। ইলেকট্রনিকস পণ্য রপ্তানিতে এখন সিঙ্গাপুরের পর ভিয়েতনাম দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় দ্বিতীয় অবস্থানে উঠে এসেছে। চাল রপ্তানিতে থাইল্যান্ডকে হটিয়ে ভারতের পর বিশ্বের দ্বিতীয় অবস্থানে উঠে এসেছে। ব্রাজিলের পর কফি রপ্তানিতে বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে। সাড়ে ৯ কোটি জনসংখ্যার দেশটির মোট রপ্তানি আয় বাংলাদেশের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি। ২০২৪ সালে ভিয়েতনামের রপ্তানি আয় ছিল ৪০৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। সোভিয়েত স্টাইলের সমাজতন্ত্রকে যে যুগোপযোগী সংস্কার করতেই হবে, এটা বুঝে নিয়েই ‘দোই মোই’ সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে চলেছে।

লেখক: সাবেক সভাপতি, বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি, একুশে পদকপ্রাপ্ত অর্থনীতিবিদ এবং অবসরপ্রাপ্ত প্রফেসর, অর্থনীতি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

শিশু শান্তি ‘নোবেল’ পুরস্কারে মনোনীত সাতক্ষীরার সুদীপ্ত

এই ৪ ভুল করছেন? তাহলে নিজেই ত্বকের ক্ষতি ডেকে আনছেন

শিশুকে হত্যার পর ৭০ ফুট গাছের ওপর ওঠেও রক্ষা পেল না যুবক

মাত্র ১৫০ টাকা খরচ করে ঘরে বসেই সুগন্ধি পারফিউম তৈরি করবেন যেভাবে

ধর্ম অবমাননায় সমান শাস্তির বিধান চায় জাতীয় হিন্দু যুব মহাজোট

শান্তিতে নোবেল ঘোষণার আগে ওবামাকে নিয়ে ট্রাম্পের ‘বিস্ফোরক’ মন্তব্য

অতিরিক্ত মাথাব্যথা কি ব্রেন টিউমারের লক্ষণ?

দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে ব্রাজিলের সম্ভাব্য একাদশ

সড়কে উঠতে বাধা, ট্রাফিক পুলিশের মাথা ফাটালেন অটোরিকশা চালক

টানা ৩ দিন ৪ ঘণ্টার কম ঘুমালে কী হতে পারে, জানেন?

১০

ব্রাজিলের খেলোয়াড়দের কাছে মাঠে প্রমাণ চাইলেন আনচেলত্তি

১১

হংকং ম্যাচে হারের পর যা বললেন হামজা

১২

বিশ্ব ডিম দিবস আজ

১৩

ছুটির দিনেও ঢাকার বায়ু ‘অস্বাস্থ্যকর’

১৪

দেশে প্রথমবার অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আরাফাত রহমান কোকো মেমোরিয়াল বিচ ক্রিকেট 

১৫

আ.লীগ নেতা তাজুল ইসলাম তাজ গ্রেপ্তার

১৬

নিউজিল্যান্ড ম্যাচের আগে সুখবর পেল বাংলাদেশ

১৭

ক্যাবরেরা নিয়ে সমালোচনার ঝড়, বাফুফে সভাপতির সংযত প্রতিক্রিয়া

১৮

বিয়ে করে বিপাকে সারা খান

১৯

বন্ধ হলো শরৎ উৎসব

২০
X