ক্যানসার একটি মারণ রোগ, যার লক্ষণ সাধারণত শুরুতে বোঝাই যায় না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)-এর তথ্য অনুযায়ী, ক্যানসার এখন বিশ্বজুড়ে মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ। সংস্থাটি জানায়, ২০২০ সালে ক্যানসারে প্রায় ১ কোটি মানুষের মৃত্যু হয়, যা প্রতি ছয়টি মৃত্যুর মধ্যে একটি। সবচেয়ে বেশি দেখা যায় স্তন, ফুসফুস, কোলন, রেকটাম ও প্রোস্টেট ক্যানসার।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শরীরে কিছু সাধারণ লক্ষণই হতে পারে ক্যানসারের পূর্বাভাস। এর মধ্যে একটি হলো সকালে ঘুম থেকে উঠেই নিরবচ্ছিন্ন কাশি।
অনেকেই সকালে ঘুম থেকে উঠেই কাশি দেন, এটিকে আমরা সাধারণত তেমন গুরুত্ব দিই না। কিন্তু এই অভ্যাস যদি দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে চলতে থাকে, বিশেষ করে আপনি যদি ধূমপায়ী হন, তাহলে বিষয়টি অবহেলা করা বিপজ্জনক হতে পারে।
এক সাক্ষাৎকারে যুক্তরাজ্যের ফার্মাসিস্ট আব্বাস কানানি বলেন,‘ধূমপায়ীরা প্রায়ই সকালে কাশিতে ভোগেন। তবে যদি এই কাশি দুই সপ্তাহেরও বেশি স্থায়ী হয়, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। কারণ, এটি ক্যানসারের প্রাথমিক ইঙ্গিত হতে পারে।’
একইভাবে, ঘুম থেকে উঠেই গলা ব্যথা বা জ্বালাপোড়া যদি দুই সপ্তাহ ধরে থাকে এবং উন্নতির কোনো লক্ষণ না দেখা যায়, সেটিও হতে পারে শরীরে বড় কোনো সমস্যার ইঙ্গিত।
কীভাবে শরীরে জন্ম নেয় ক্যানসার
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ব্যাখ্যা অনুযায়ী, ক্যানসার তখনই হয় যখন শরীরের স্বাভাবিক কোষগুলো হঠাৎ অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গিয়ে টিউমার কোষে রূপ নেয়। এই কোষগুলো ধীরে ধীরে প্রি-ক্যানসারাস অবস্থা থেকে ম্যালিগন্যান্ট টিউমারে রূপ নেয়, যা ছড়িয়ে পড়ে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে।
ক্যানসারের উৎস হতে পারে তিন ধরনের কার্সিনোজেন থেকে
১. শারীরিক কার্সিনোজেন : অতিবেগুনি রশ্মি বা আয়নিত বিকিরণ
২. রাসায়নিক কার্সিনোজেন : তামাকের ধোঁয়া, অ্যাসবেস্টস, মদ্যপান, খাদ্যে থাকা আফ্লাটক্সিন ও পানিতে থাকা আর্সেনিক
৩. জৈব কার্সিনোজেন : নির্দিষ্ট ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া ও পরজীবী
ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায় যেসব কারণ
ডব্লিউএইচও বলছে, ধূমপান, অতিরিক্ত মদ্যপান, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, শরীরচর্চার অভাব এবং বায়ুদূষণ ক্যানসারের বড় ঝুঁকির কারণ। এ ছাড়া দীর্ঘস্থায়ী কিছু সংক্রমণও ক্যানসারের দিকে ধাবিত করতে পারে।
২০১৮ সালে বিশ্বজুড়ে শনাক্ত ক্যানসারের প্রায় ১৩ শতাংশ ছিল সংক্রমণজনিত। এর মধ্যে আছে হেলিকোব্যাক্টর পাইলরি, হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (HPV), হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাস এবং এপস্টেইন-বার ভাইরাস।
কীভাবে ক্যানসার প্রতিরোধ করা যায়
বিশেষজ্ঞদের মতে,জীবনধারায় কিছু সহজ পরিবর্তন এনে ক্যানসারের ঝুঁকি অনেকটাই কমানো সম্ভব —
১. ধূমপান ও মদ্যপান সম্পূর্ণভাবে ত্যাগ করা
২. স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলা
৩. নিয়মিত শরীরচর্চা করা
৪. সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি থেকে নিজেকে সুরক্ষিত রাখা
৫. হেপাটাইটিস বি ও এইচপিভি টিকার মাধ্যমে সংক্রমণ প্রতিরোধ করা
সতর্কতা
সকালে ঘুম থেকে উঠেই দীর্ঘস্থায়ী কাশি বা গলার জ্বালাপোড়া কেবল সাধারণ ঠান্ডা নয়, কখনো কখনো এটি শরীরে ক্যানসারের নীরব ইঙ্গিতও হতে পারে। তাই এই লক্ষণ দীর্ঘদিন ধরে টিকে থাকলে দেরি না করে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
সূত্র : টাইমস অব ইন্ডিয়া
মন্তব্য করুন