টানা দুই বছরের গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞের পর অবশেষে গাজায় যুদ্ধবিরতির দিকে ধাবিত হওয়ার মতো বহুলপ্রতীক্ষিত ঘটনাটি ঘটতে যাচ্ছে, যা শুধু গাজাবাসী নয়; গোটা বিশ্বের মানুষের কাছেই এক বিরাট স্বস্তির খবর।
দীর্ঘ বিভীষিকাময় সময়ের পর যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় হামাস ও ইসরায়েল প্রথম ধাপের শান্তি চুক্তিতে উপনীত হয়েছে। চুক্তিটি বাস্তবায়িত হলে তা অবরুদ্ধ উপত্যকায় চলমান হত্যাযজ্ঞের অবসান ঘটাবে—এমনটাই আশা সবার। গাজায় যুদ্ধবিরতি এবং ইসরায়েলি জিম্মি ও ফিলিস্তিনি কারাবন্দিদের মুক্তির লক্ষ্যে উভয়পক্ষ প্রস্তাবিত শান্তি চুক্তির প্রথম ধাপে রাজি হয়েছে বলে ঘোষণাটি দেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গাজা যুদ্ধের অবসানে গত সপ্তাহে ট্রাম্পের প্রকাশিত ২০ দফা শান্তি চুক্তি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার এ ঘোষণা দেন তিনি। যুদ্ধবিরতি ও জিম্মিদের মুক্তি দেওয়ার বিষয়ে ট্রাম্পের পরিকল্পনায় অনুমোদন দেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তার কার্যালয় একটি বিবৃতিও প্রকাশ করে। এ পরিকল্পনাকে একটি ‘গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি’ বলে অভিহিত করে ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানান তিনি। জানা যায়, চুক্তি অনুমোদনের ২৪ ঘণ্টা পর, অর্থাৎ শনিবার ভোরে গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে। এর সূচনা হওয়ার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে জিম্মিদের মুক্তি দিতে হবে। ইসরায়েলের হাতে বন্দি শত শত ফিলিস্তিনিকে ইসরায়েলি কারাগার থেকে মুক্তি দিতে হবে। হামাসের নির্বাসিত গাজাপ্রধান খলিল আল-হাইয়া যুক্তরাষ্ট্র এবং মধ্যস্থতাকারীদের কাছ থেকে যুদ্ধ শেষ হয়ে যাওয়ার নিশ্চয়তা পেয়েছেন বলে দাবি করেন। এর আগে ইসরায়েলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিদিয়ন সার আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ফক্স নিউজকে বলেন, “ইসরায়েলি সরকার চুক্তি অনুমোদনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর ‘অবিলম্বেই’ যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে।” পরিকল্পনা অনুযায়ী, গাজায় যুদ্ধবিরতি হবে; সেখান থেকে ইসরায়েলি সেনাদের ধাপে ধাপে একটি নির্দিষ্ট এলাকা পর্যন্ত প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে। গাজায় সহায়তা ও ত্রাণসামগ্রীবাহী ট্রাক ঢুকতে দেওয়া হবে। হামাসের হাতে থাকা জিম্মি ও ইসরায়েলের হেফাজতে থাকা ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি দেওয়ার পাশাপাশি দুপক্ষই ফিরিয়ে দেবে মৃতদেহ। গাজায় রয়েছেন এমন ৪৮ জন জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হবে; যাদের ২০ জন এখনো জীবিত বলে মনে করা হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে যুদ্ধবিরতি পর্যবেক্ষণকারী বহুজাতিক বাহিনী নিয়োজিত থাকার কথা বলা হয়েছে চুক্তিতে। মার্কিন সামরিক বাহিনী ইসরায়েলে একটি বেসামরিক-সামরিক সমন্বয় কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করবে, যার মধ্যে প্রায় ২০০ ট্রুপ সেনা থাকবে। এতে মিশর, কাতার এবং তুরস্কসহ আরব ও মুসলিম দেশগুলোর বাহিনী অন্তর্ভুক্ত থাকবে। তারা যুদ্ধবিরতি পালন এবং যে কোনো ধরনের লঙ্ঘনের খবর দেবে। তবে কোনো মার্কিন বাহিনী গাজায় প্রবেশ করবে না।
খবরটি প্রকাশ্যে আসার সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বজুড়ে স্বস্তির ছাপ পরিলক্ষিত হয়। বিশ্বনেতারা এ পরিকল্পনা বা মধ্যস্থতার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ট্রাম্পসহ মধ্যপ্রাচ্যের তিন দেশ তুরস্ক, মিশর ও কাতারকে স্বাগত জানান। এ ছাড়া গাজার ধ্বংসস্তূপে ভরা রাস্তা এবং ইসরায়েলের হোস্টেজেস স্কয়ারে উল্লাসের বেশ কিছু মুহূর্ত দেখা যায় সাধারণ মানুষের মধ্যে। এরই মধ্যে স্থায়ী শান্তি ফেরা কিংবা যুদ্ধবিরতির দীর্ঘস্থায়িত্ব নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। তবে আমরা মনে করি, গাজায় যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়িত হওয়া এই মুহূর্তের সবচেয়ে স্বস্তির ও প্রত্যাশিত খবর। পৃথিবীর সব প্রান্তের মানুষ এ আগ্রাসন ও জুলুমের সমাপ্তি চায়। আমাদের প্রত্যাশা, চলমান এ শান্তি প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন করতে সবপক্ষ আন্তরিক ও দায়িত্বশীল হবে। এটি যেন হয়ে ওঠে লাখো মানুষের জীবন বাঁচানোর ভিত্তি। সবার সম্মিলিত দৃঢ়তাই পারবে গাজাবাসীকে চলমান বিভীষিকা থেকে মুক্তি দিতে।
মন্তব্য করুন