ঢাকার সেন্ট্রাল হসপিটালে ভুল চিকিৎসায় নবজাতকের মৃত্যুর পর মা মাহবুবা রহমান আঁখিও মারা গেছেন। রোববার দুপুর পৌনে ২টার দিকে ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গাইনি ও প্রসূতি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. সংযুক্তা সাহার চটকদার বিজ্ঞাপন দেখে স্বাভাবিক প্রসবের স্বপ্ন নিয়ে ধানমন্ডির সেন্ট্রাল হসপিটালে এসেছিলেন কুমিল্লার তিতাস উপজেলার ইয়াকুব আলী সুমন-আঁখি দম্পতি। প্রসব ব্যথা ওঠায় গত শুক্রবার (৯ জুন) মধ্যরাতে সেন্ট্রাল হসপিটালে ডা. সংযুক্তা সাহার অধীনে ভর্তি করা হয় আঁখিকে। তখন ডা. সংযুক্তা সাহা হাসপাতালে ছিলেন না। গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, তিন মাস ধরে ডা. সংযুক্তার অধীনে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন মাহবুবা রহমান আঁখি। তার শারীরিক অবস্থা স্বাভাবিক ছিল বলে চিকিৎসক জানিয়েছিলেন। স্বাভাবিকভাবেই সন্তান প্রসব সম্ভব বলে তাকে আশ্বস্ত করেছিলেন ডা. সংযুক্তা। শুক্রবার রাতভর চলে স্বাভাবিক প্রসবের চেষ্টা। একপর্যায়ে ভোররাতে সিজার করতে গিয়ে অনভিজ্ঞ চিকিৎসক আঁখির মূত্রনালি ও মলদ্বার কেটে ফেলেন। পরে প্রসূতির শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। তাকে ল্যাবএইডের সিসিইউতে ভর্তি করা হয়। এদিকে সুমন-আঁখি দম্পতির নবজাতক সেন্ট্রাল হাসপাতালে জন্মের আধঘণ্টার মধ্যে মারা যায়। এরপর ১০ থেকে ১৮ জুন পর্যন্ত আঁখির জ্ঞান ফিরে আসেনি। শেষ পর্যন্ত রোববার দুপুরে ল্যাবএইডে আঁখি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। যে স্বামী প্রসূতি স্ত্রীকে নিয়ে কুমিল্লা থেকে নিরাপদ প্রসবের জন্য ঢাকায় এসেছিলেন, তার ঘাড়ে এখন স্ত্রী ও নবজাতকের লাশ। আঁখির স্বামী ইয়াকুব আলী বলেছেন, তার স্ত্রীকে যখন অপারেশন থিয়েটারে নেওয়া হয় এবং স্বাভাবিক প্রসবের চেষ্টা শুরু করা হয়, তখনো তিনি সংযুক্তা সাহা হাসপাতালে আছেন কি না জানতে চান। কর্তৃপক্ষ জানায়, তিনি আছেন এবং চেষ্টা করছেন। পরে জানতে পারেন ডা. সংযুক্তা সাহা ছিলেন না এবং তারা রোগীর কোনোরকম চেকআপ ছাড়াই ডেলিভারির কাজ শুরু করে দেন।
ভুল চিকিৎসায় নবজাতক এবং মায়ের মৃত্যু সারা দেশের মানুষকে ব্যথিত করেছে। আর এ হৃদয়বিদারক ঘটনার মধ্য দিয়ে দেশের একশ্রেণির চিকিৎসকের দায়িত্ব ও কর্তব্যের প্রতি অবহেলার একটি দুঃখজনক চিত্র আবারও দেশবাসীর কাছে উন্মোচিত হলো।
একজন রোগী চিকিৎসকের দ্বারস্থ হন তার রোগযন্ত্রণা থেকে মুক্তির আশায়। কিন্তু চিকিৎসা নিতে গিয়ে যদি রোগীর জীবনাশঙ্কাই প্রকট হয়ে ওঠে কিংবা মৃত্যুরও কারণ হয়, তাহলে শুধু চিকিৎসকের দক্ষতা কিংবা অবহেলা নিয়েই প্রশ্ন ওঠে না; একই সঙ্গে এ প্রশ্নও দাঁড় করায়—শুধু ভুল নয় বরং এমনটি কি অবহেলাজনিত কারণেই সৃষ্ট নয়?
বলার অপেক্ষা রাখে না, মানুষের মৌলিক অধিকারের অন্যতম চিকিৎসাসেবা প্রাপ্তির পথ দেশে যেমন ব্যয়বহুল, তেমনি অনেক ক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণও।
আমরা মনে করি, স্বাস্থ্যসেবা খাতে দায়বদ্ধতা-জবাবদিহির অভাব ও শৃঙ্খলাভঙ্গের দৃষ্টান্তযোগ্য প্রতিকার তেমনভাবে দৃশ্যমান নয় বলেই মাহবুবা রহমান আঁখিদের তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে। চিকিৎসার মতো গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে ব্যবসা কোনো সভ্যসমাজে কাম্য হতে পারে না। যে কোনো উপায়ে এ নৈরাজ্য বন্ধ করা প্রয়োজন।
মন্তব্য করুন