সুন্দর সকাল সবসময় সুন্দর দিনের বার্তা দেয় না। ২৮ অক্টোবর সেই কথাটি আবার নতুন করে মনে করিয়ে দিল। সহিংসতার আগুনে পুড়ল ঢাকা। অথচ দিনের শুরুটা হয় বাংলাদেশের জন্য এক অনন্য মাইলফলক অর্জনের মধ্য দিয়ে। প্রধানমন্ত্রী বহুকাঙ্ক্ষিত কর্ণফুলী নদীর ভেতর দিয়ে বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধন করেন। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি), প্রধান দুই রাজনৈতিক দলকে তাদের পছন্দের স্থানে সমাবেশ করার অনুমতি দেয়। এটা ছিল সুস্পষ্টভাবে সমঝোতার দৃশ্যমান চেষ্টা। শান্তির বার্তা। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও আশ্বস্ত করেছিলেন, তাদের সমাবেশ হবে শান্তিপূর্ণ। কিন্তু বিএনপি মহাসচিব কথা রাখেননি। কিংবা এমন এক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল, যেখানে বিএনপি মহাসচিবের আসলে কিছুই করণীয় ছিল না। সবকিছু তার নিয়ন্ত্রণে থাকলে, দুপুরের মহাসমাবেশ সকাল থেকে শুরু হলো কেন? বিএনপি কর্মীদের একাংশ উগ্র হয়ে উঠল কেন? কেন তারা বাসে আগুন দিল, প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা করল? বিনা উসকানিতে আউট ভবনে হামলা করল বিএনপির কোনো অংশ। রাজারবাগে পুলিশ হাসপাতালে আগুন দেওয়ার মতো অপতৎপরতা কেন করল বিএনপি। আমি জানি, বিএনপি এর উত্তরে গৎবাঁধা ভাঙা রেকর্ড বাজাবে। তারা বলবে, পুলিশ বিনা উসকানিতে বিএনপিকে আক্রমণ করেছে। বিএনপি কর্মীরা সাধু। কোথাও কোনো টোকাও দেয়নি। সব করেছে আওয়ামী লীগ আর পুলিশ। কিন্তু এসব ঘটনার জন্য বিএনপি যেন প্রস্তুত ছিল। বিএনপি অপেক্ষা করছিল এরকম কিছু সহিংসতার জন্য। যাতে করে দলটি হরতাল ডাকার সুযোগ পায়। এরপর হয়তো তারা (বিএনপি) আরও সহিংস কর্মসূচি দেবে। অবরোধ, ঘেরাও, জ্বালাও-পোড়াওয়ের কর্মসূচি দিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে চেষ্টা করবে। রাজনীতিকে সহিংসতার পথে নিয়ে যাবে। বিএনপির আসল লক্ষ্য হলো, নির্বাচন করতে না দেওয়া। এমন এক পরিস্থিতি সৃষ্টি করা—যেন অনির্বাচিত সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করে। বিএনপি খুব ভালো করেই জানে তাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন সরকারকে চাপে ফেলতে পারবে না। এজন্য পরিকল্পিতভাবেই কি তারা সহিংসতার পথে পা বাড়াল? অথচ ২৮ অক্টোরব সবাই শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করতে পারত। সবাই দায়িত্বশীল আচরণ করলেই সহিংসতা এড়ানো যেত।
বাংলাদেশ যে শান্তির দেশ, এবারের শারদীয় দুর্গা উৎসবে তা প্রমাণিত হয়েছে। রাজনৈতিক উত্তেজনার ঢামাঢোলের মধ্যে দুর্গা উৎসব নিয়ে সংশয় ছিল, ছিল উৎকণ্ঠা। স্বার্থান্বেষী মহল নাশকতা করে ঘোলাপানিতে মাছ শিকার করতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি দুটি রাজনৈতিক দলই শারদীয় দুর্গা উৎসবে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়েছে। আমরা চাইলেই পারি। চাইলেই গণতন্ত্রের যাত্রাপথ মসৃণ করতে পারি। চাইলেই সন্ত্রাস, সহিংসতাকে না বলতে পারি। চাইলে বিদেশি হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে পারি, আমাদের সমস্যা আমরাই সমাধান করতে পারি। ২৮ অক্টোবর রাজনীতিতে সহিংসতা, গণতন্ত্রের সংকটের ব্যাপ্তি আরও বাড়ার একটি কঠিন বার্তা। ২৮ অক্টোবর জনগণের মধ্যে আতঙ্ক আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশে কী হতে যাচ্ছে, এ প্রশ্নগুলো আরও বড় হয়ে সামনে এসেছে। দেশের সামনে এখন প্রধান প্রশ্ন, নির্বাচন কি হবে না একটি অনির্বাচিত সরকার ক্ষমতা দখল করবে? সংবিধান অনুযায়ী, আগামী বছর ২৯ জানুয়ারির মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। কিন্তু দেশে এখন পর্যন্ত নির্বাচনী আবহ সৃষ্টি হয়নি। গত ২৬ অক্টোবর প্রধান নির্বাচন কমিশনার সম্পাদক ও সিনিয়র সাংবাদিকদের সঙ্গে সংলাপ করেন। সেই সংলাপে খোদ প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেছেন, ‘নির্বাচনের অনুকূল পরিবেশ নেই।’ এর আগে গত ২৪ অক্টোবর আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র চলছে।’ ২৬ অক্টোবর ব্রাসেলসে শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আগামী সাধারণ নির্বাচন যাতে কেউ ভণ্ডুল বা প্রশ্নবিদ্ধ করতে না পারে, সেজন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। বেলজিয়াম ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিকদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্রের কথা গত তিন মাসে প্রধানমন্ত্রী অন্তত এক ডজনবার বলেছেন। এমনকি বিদেশি কোনো রাষ্ট্র বাংলাদেশে অনির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতায় বসাতে চায়, এমন শঙ্কার কথাও প্রধানমন্ত্রী কয়েকবার উচ্চারণ করেছেন। কেন এ শঙ্কা? নির্বাচন নিয়ে কেন এই অনিশ্চয়তা? ২৮ অক্টোবর বিএনপির তাণ্ডব সেই শঙ্কাকে আরও প্রবল করে তুলল? যারা নির্বাচন চায় না, ২৮ অক্টোবরের সহিংসতার নেপথ্যে কি তারাই?
বিএনপি গত দুই বছরের বেশি সময় ধরে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন করছে। বাইরের বিভিন্ন শক্তি এবং মেরূকরণের কারণে তাদের আন্দোলন এখন ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিয়েছে। অনেকের ধারণা, বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলে, নির্বাচন হবে নিরুত্তাপ। ভোটারদের অংশগ্রহণ কমে যাবে। গত কয়েকটি উপনির্বাচন তার প্রমাণ। এসব উপনির্বাচনে কোথাও আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বিনাভোটে এমপি হয়েছেন। কোথাও ভোটের নামে প্রহসন হয়েছে। প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ ছাড়া প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন সম্ভব নয়,Ñএটি গত তিন বছরে প্রমাণিত হয়েছে। তবে ভিন্ন চিত্রও আছে। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন, উপজেলা নির্বাচন, কয়েকটি সিটি নির্বাচন বিএনপিকে ছাড়াই তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয়েছে। জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রয়োগ করেছে তাদের ভোটাধিকার। যে কোনো বিচারে সেসব নির্বাচন সুষ্ঠু এবং অংশগ্রহণমূলক বলা যায়। এর প্রধান কারণ আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী। আওয়ামী লীগই আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ ছিল। গাজীপুরের সিটি নির্বাচনের কথাই ধরা যাক। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে জাহাঙ্গীর এবং তার মা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন। জাহাঙ্গীরের মনোনয়ন বাতিল হলেও তার মা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এবং জয়ী হন। এর মাধ্যমে আগামী নির্বাচন নিয়ে অনেকটাই আশাবাদী হয়ে ওঠে টানা ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকা দলটি। মূলত গাজীপুর সিটি নির্বাচনের মাধ্যমেই আওয়ামী লীগ বিএনপিকে ছাড়া ‘অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে’র রেসিপি পায়। কিন্তু আওয়ামী লীগের এ কৌশলে কয়েকটি বাধা রয়েছে। এর মধ্যে প্রথম এবং সবচেয়ে বড় বাধা হলো আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। আরও সোজাসাপ্টাভাবে বললে যুক্তরাষ্ট্রের গ্রহণযোগ্যতা। বাংলাদেশের নির্বাচন ও গণতন্ত্র নিয়ে গত কয়েক বছর ধরেই যুক্তরাষ্ট্রের মাথাব্যথা। ফিলিস্তিন-ইসরায়েল যুদ্ধের আগপর্যন্ত বাংলাদেশের নির্বাচনই যেন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রধান অগ্রাধিকার বিষয়ে পরিণত হয়েছিল। একের পর এক মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের কর্তারা বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে তাদের মনোভাব জানাতে বাংলাদেশে এসেছিলেন। যুক্তরাষ্ট্র বারবার বলছে, বাংলাদেশে অবাধ, নিরপেক্ষ এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন তারা চান। তাদের কথাবার্তায় এটা স্পষ্ট যে, বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নিলে সেই নির্বাচন ‘অংশগ্রহণমূলক’ বলে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বিবেচিত হবে না। যুক্তরাষ্ট্রের কাছে যদি নির্বাচন গ্রহণযোগ্য না হয়, তাহলে তারা চুপচাপ বসে থাকবে না। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কী কী ব্যবস্থা নিতে পারে তার সতর্কবার্তাও দিয়েছে। এরই মধ্যে নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করেছে। নতুন ভিসা নীতির আওতায় কয়েকজনের ওপর যুক্তরাষ্ট্র ভিসা নিষেধাজ্ঞাও আরোপ করেছে। সামনে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞাসহ নানা শাস্তির খড়গ। ২৮ অক্টোবরের ঘটনারও কঠোর নিন্দা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দায়ীদের বিরুদ্ধে ভিসা নীতি প্রয়োগেরও ঘোষণা দিয়েছেন ডোনাল্ড লু। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে সবচেয়ে বড় অনিশ্চয়তার কারণ যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাব। গত ২৭ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের আন্ডার সেক্রেটারি আজরা জেয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। সেখানে নিশ্চয়ই নির্বাচন নিয়ে কথা হয়েছে। আওয়ামী লীগের বক্তব্য হলো, ‘অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন’ মানে ভোটারদের স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি। যে কোনো নির্বাচনে যদি ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ ভোটারদের উপস্থিতি থাকে, তাহলে সেই নির্বাচনকে ‘অংশগ্রহণমূলক’ বলে বিবেচনা করা যায়। কোন রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করল না করল, সেটি সুষ্ঠু নির্বাচনের মাপকাঠি হতে পারে না। আওয়ামী লীগ আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে এ বক্তব্যটি জোরালোভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করছে। আমি নিশ্চিত, সালমান এফ রহমান মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরে এ অবস্থানের পক্ষেই যুক্তিগুলো আরও শানিতভাবে উপস্থাপন করেছেন। যুক্তরাষ্ট্র যদি আওয়ামী লীগের যুক্তি মেনে নেয়, সে ক্ষেত্রে নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তার কালো মেঘ কেটে যাবে। বিএনপি প্রধান শক্তির উৎস নড়বড়ে হয়ে গেছে, এরকম আশঙ্কা থেকেই কি ২৮ অক্টোবর বিএনপি মারমুখী হয়ে উঠল?
বিএনপির আন্দোলন নিজের শক্তিতে নয়। বিএনপির অবস্থা অনেকটা চাঁদের মতো। নিজের আলো নেই। অন্যের আলোতে আলোকিত। বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে মার্কিন মনোভাব পাল্টে গেলে বিএনপি অথৈ সাগরে হাবুডুবু খাবে। তাই ওয়াশিংটনের বৈঠকের খবর জেনেই বিএনপি শান্তশিষ্ট একান্ত বাধ্য ছেলের থেকে দুষ্ট বালকে রূপান্তরিত হলো। আবার ফিরে গেল ২০১৩ ও ২০১৪-এর সময়ে। আবার বিএনপি অগ্নিসন্ত্রাসের যুগে ফিরে গিয়ে, সাংবিধানিক প্রক্রিয়াকে চ্যালেঞ্জ জানাল।
নির্বাচন বানচালের আরেক কৌশল হলো ষড়যন্ত্রের খেলা। নির্বাচন বানচালের জন্যই হয়তো বিএনপি দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দেবে। মনোনয়নপত্রও দাখিল করবে। এরপর নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ করতে একের পর এক অজুহাত দাঁড় করাবে। অভিযোগের পাহাড় তৈরি করবে। শেষ মুহূর্তে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াবে। তখন আওয়ামী লীগ বিপদে পড়বে। অনেক জায়গায় আওয়ামী লীগ বা জোটের একক প্রার্থী থাকবে। সেখানে নির্বাচন হবে না। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হবে বহু প্রার্থী। এর মধ্যে জাতীয় পার্টিও যদি নানা অজুহাত দেখিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ায়, তাহলে সংকট আরও বাড়বে। এর ফলে গোটা নির্বাচনই ভণ্ডুল হয়ে যেতে পারে। পথ তৈরি হতে পারে অনির্বাচিত সরকারের ক্ষমতায় বসার। ২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারির নির্বাচন ঠিক এভাবেই বাতিল হয়ে গিয়েছিল। এবারও তেমন একটি পরিস্থিতি সৃষ্টির সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। গত ২৪ অক্টোবর আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের বৈঠকে সংসদ নেতা এমন আশঙ্কার কথাও বলেছেন। সেরকম পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য একটি রাজনৈতিক উত্তাপ প্রয়োজন। সেজন্যই কি ২৮ অক্টোবরের নাটক?
বিএনপির নির্দলীয়-নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আসলে নির্বাচন বানচালেরই একটি অস্ত্র। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আমরা ক্ষমতায় যেতে চাই না।’ বিএনপি যদি ক্ষমতায় আসে তাহলে কে প্রধানমন্ত্রী হবেন? বেগম জিয়া এবং তারেক জিয়া, দুজনই নির্বাচনের অযোগ্য। মির্জা ফখরুলকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কি মেনে নেবে জিয়া পরিবারের সদস্যরা? বিএনপির অন্য নেতারাও কি ফখরুলকে মানবেন? এজন্য বিএনপি চায় অনির্বাচিত সরকারের অন্ধকার টানেলে দেশকে ঢুকিয়ে দিতে। আওয়ামী লীগকে ক্ষমতাচ্যুত করে একটি দীর্ঘমেয়াদি সুশীল সরকারকে ক্ষমতায় আনতে। তাহলে বিএনপি দলকে পুনর্বিন্যস্ত করার সুযোগ পাবে। তা না হলে বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি নিয়ে মাঠে নামত না। কারণ ২০০৬ ও ’০৭ সালের ঘটনাবলির পর তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা একটি বাতিল, বিতর্কিত এবং অগ্রহণযোগ্য পদ্ধতিতে পরিণত হয়েছে। এ ব্যবস্থা এমন এক পদ্ধতি, যেখানে সদ্য বিদায়ী দল কখনোই জিতবে না। এ ব্যবস্থা বিরাজনীতিকরণকে লালন করে, প্রতিষ্ঠা করে। রাজনীতিবিদদের সম্পর্কে নেতিবাচক আবহ সৃষ্টি এ ধরনের অনির্বাচিত ব্যবস্থার প্রধান লক্ষ্য। আর ইতিহাস বলে, সবচেয়ে খারাপ গণতান্ত্রিক সরকারও সবচেয়ে ভালো অনির্বাচিত সরকারের চেয়ে উত্তম। তাই, অনির্বাচিত কোনো শক্তিকে ক্ষমতার মসনদে বসতে দেওয়া হবে আত্মঘাতী। এটা দেশ ও জনগণের জন্য বিপর্যয়কর। তাই সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হতেই হবে। গণতন্ত্রের কোনো শর্টকাট পথ নেই। নানা চড়াই-উতরাই প্রতিকূলতার মধ্য দিয়েই গণতন্ত্র বিকশিত হয়। আমাদের গণতন্ত্রের অনেক সমস্যা আছে, এ কথা সত্যি। তাই বলে গণতন্ত্রকে হত্যা করে অগণতান্ত্রিক শাসন আনতে হবে, এটা যুক্তির কথা হতে পারে না। গণতন্ত্রের ত্রুটি-বিচ্যুতিগুলো সারতে হবে। এটি চলমান প্রক্রিয়া। এজন্য গণতন্ত্রকে অব্যাহত রাখতেই হবে। সেজন্য প্রয়োজন নির্বাচন, প্রয়োজন সংলাপ, সমঝোতা, আলাপ-আলোচনা। এখনো সময় আছে, সহিংস রাজনীতি কোনো সমাধান নয়। রাজনৈতিক দলগুলোকে আলোচনার টেবিলে বসতেই হবে। গণতন্ত্রের জন্য, জনগণের জন্য।
লেখক : নির্বাহী পরিচালক, পরিপ্রেক্ষিত
ই-মেইল: [email protected]