সারা বিশ্বের মানুষের নজরে থাকা ডুবোজাহাজ টাইটানের উদ্ধার অভিযানের পর্দা নেমেছে শুক্রবার। সেইসঙ্গে পরিসমাপ্তি ঘটেছে মর্মান্তিক অপেক্ষা এবং উৎকণ্ঠার। যুক্তরাষ্ট্রের কোস্টগার্ডের ফার্স্ট ডিস্ট্রিক কমান্ডার রিয়াল অ্যাডমিরাল জন ম্যাগারে জানিয়েছেন, টাইটান সাবমার্সিবলের একটি অংশ খুঁজে পাওয়া গেছে, যা টাইটানিকের ঠিক ১৬০০ ফুট গভীরে সমুদ্রের তলদেশে ছিল। একই সঙ্গে অন্যান্য অংশও খুঁজে পাওয়া গেছে। বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলাপ করে তারা জানতে পেরেছেন, এগুলো পেশার চেম্বারের অংশ বিশেষ, যা আকস্মিক কোনো ভয়াবহ বিপর্যয় থেকে হয়েছে। এরপর সঙ্গে সঙ্গে তারা অভিযাত্রীদের পরিবারকে বিষয়টি জানিয়েছেন।
অভিযানটি যারা পরিচালনা করছিল সেই আমেরিকান ডাইভিং কোম্পানি ওশানগেইট এক বিবৃতিতে জানায়, ‘এখন আমরা বলতে পারি যে, আমাদের প্রধান নির্বাহী স্টকটন রাশ, শাহজাদা দাউদ এবং তার পুত্র সুলেমান দাউন, হ্যামিশ হার্ডিং ও পল অঁরি নাজোলে আর নেই।
গত রোববার যাত্রা শুরু করে স্থানীয় সময় সকাল ৮টায় এটা যেখানে টাইটানিক ডুবে আছে আটলান্টিক মহাসাগরের সেই অংশ মূল জাহাজ পোলার প্রিন্স থেকে যাত্রা শুরু করে। কিন্তু নিচে নামার এক ঘণ্টা ৪৫ মিনিটের মাথায় মূল জাহাজের সঙ্গে এর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। কোস্টগার্ড বলেছে, এরপর ৮ ঘণ্টা পর তাদের জানানো হয় যে, টাইটান সাবমার্সিবল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। শুরু হয় যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার উদ্ধার অভিযান। এর মধ্যে টাইটান নিয়ে নানা খবর আসতে থাকে। এটার অক্সিজেন স্বল্পতা, অনুমোদন না থাকা, সারা বিশ্বের মানুষের আগ্রহের কেন্দ্রে চলে আসে টাইটান। উদ্ধার অভিযান চলতে থাকে সমুদ্রের ২০ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে। কানাডিয়ান জাহাজ থেকে রোবটিক ডুবুরি যান সমুদ্রের তলদেশে গিয়ে টাইটানের অংশবিশেষ আবিষ্কার করে। এরপর কর্তৃপক্ষ বুঝতে পারে, একটি বিপর্যয় ঘটে গিয়েছে। তবে ঠিক কখন, কোন জায়গায় এবং কীভাবে এটি বিস্ফোরিত হয়েছে—তা এখনো বলতে পারেনি কোস্টগার্ড। এ ছাড়া কোনো মৃতদেহ উদ্ধার করা যাবে কি না, এ ব্যাপারেও নিশ্চিত নন তারা। তবে বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন, পানির প্রচণ্ড চাপেই কোনো বিপর্যয় ঘটে থাকতে পারে। গভীর সমুদ্রে পানির চাপ এতটাই মারাত্মক যে, যদি কোনো কিছুতে ত্রুটি-বিচ্যুতি ঘটে, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে তা ধ্বংস হয়ে যাবে। হলিউডের বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা জেমস ক্যামেইরুন একাধিকবার টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখতে অভিযানে গিয়েছেন। তিনি বলেছেন, তিনি যখন প্রথম খবরটি পান, তখনই তিনি এরকম ভয়ংকর কিছু অনুমান করেছিলেন। বুঝতে পেরেছিলেন টাইটান আর নেই। তবে টাইটানের অভিযাত্রী পল-অঁরি নারজিওলের মেয়ে সিদোনি নারজিওলে বলেছেন, তিনি যেখানেই আছেন, আনন্দে আছেন। আমি আশা করি এ থেকে ভালো কিছু বের হয়ে আসবে। নিখোঁজ হওয়া টাইটান ডুবোযানটি যে কোম্পানি চালায়, সেই ওশানগেইটের এক সাবেক কর্মকর্তা ২০১৮ সালেই এর নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের আদালতের কিছু নথিতে দেখা যায়, কোম্পানিটির মেরিন অপারেশনের পরিচালক এক প্রতিবেদনে নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। ফলে গভীর সমুদ্রে এমন অভিযান চালু থাকা উচিত কি না, এ নিয়ে এখন বিতর্ক শুরু হয়েছে। পাঁচ আরোহীর মৃত্যুতে সারা বিশ্বের মানুষের মতো তিনিও শোকাহত। সেইসঙ্গে আমরা মনে করি, শুধু আনন্দ উপভোগের জন্য এ ধরনের প্রাণঘাতী দুঃসাহসিক অভিযান বন্ধ হওয়া প্রয়োজন।
মন্তব্য করুন