গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার উপমহাদেশের প্রখ্যাত গীতিকার ও সংগীতসাধক। বাংলা সংগীতের ভুবনে তিনি এক অসাধারণ স্রষ্টা। বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধজুড়ে বাংলা ছায়াছবি ও আধুনিক গানের জগৎকে যারা প্রেমাবেগ-উষ্ণ রেখেছিলেন তিনি তাদের একজন। তার অসংখ্য গান আমাদের সংগীতকে করেছে সমৃদ্ধ।
গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার ১৯২৫ সালের ৫ ডিসেম্বর পাবনার ফরিদপুর উপজেলার গোপালনগর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা গিরিজাপ্রসন্ন মজুমদার ছিলেন বিখ্যাত উদ্ভিদবিদ। গৌরীপ্রসন্ন শৈশবে কলকাতা গিয়ে ফিরে আসেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়। ১৯৫১ সালে তিনি কলকাতা চলে যান। ভর্তি হন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে। এখান থেকেই তিনি ইংরেজি সাহিত্যে এমএ পাস করেন। পরে আবার বাংলা ভাষা ও সাহিত্যেও তিনি স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসে গৌরীপ্রসন্ন মজুমদারের নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি মুক্তিযোদ্ধা ও শরণার্থীদের সহায়তার জন্য কলকাতাসহ পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন স্থানে সংগীতানুষ্ঠানের আয়োজন করেন। ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল মুজিবনগরে বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রিপরিষদের শপথ অনুষ্ঠানে বাজানো হয় তারই লেখা সেই বিখ্যাত গানটি, ‘শোন একটি মজিবরের কণ্ঠ থেকে লক্ষ মজিবরের কণ্ঠে সুরের ধ্বনি প্রতিধ্বনি, আকাশে বাতাসে ওঠে রণি; বাংলাদেশ আমার বাংলাদেশ...।’ গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার ১৯৮৬ সালের ২০ আগস্ট কলকাতায় মারা যান। মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে তাকে ২০১২ সালে ‘মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা’ দেওয়া হয়।