নির্বাচনের এক সপ্তাহের কম সময়ের মধ্যে নতুন মন্ত্রিসভা গঠিত হয়েছে। ১১ জানুয়ারি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ৩৭ সদস্যের নতুন মন্ত্রিসভা শপথ নিয়েছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি বরাবরই মন্ত্রিসভা গঠনে চমক দেন। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। নতুন মন্ত্রিসভার একটা বড় বৈশিষ্ট্য হলো—পুরোনো মন্ত্রীদের ঢালাওভাবে বাদ না দেওয়া। ২০০৮ সালে দ্বিতীয়বার সরকার গঠন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই মন্ত্রিসভায় তিনি ’৯৬-এর মন্ত্রীদের দু-একজন ছাড়া সবাইকে বাদ দিয়েছিলেন। বেগম মতিয়া চৌধুরী, প্রয়াত সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, প্রয়াত সৈয়দ আবুল হোসেনের মতো হাতেগোনা কজন সে সময় দ্বিতীয় দফায় মন্ত্রী হতে পেরেছিলেন। ২০১৪ সালেও ২০০৮-এর মন্ত্রীদের প্রায় সবাই বাদ যান। একই চিত্র দেখা গেছে ২০১৮ সালের মন্ত্রিসভা গঠনের সময়ও। কিন্তু এবার ব্যতিক্রম। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী, সেতুমন্ত্রী, স্থানীয় সরকার, স্বরাষ্ট্র, শিল্প এবং খাদ্য মন্ত্রণালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়গুলোতে বিগত মন্ত্রিসভার সদস্যদের ওপরই আস্থা রেখেছেন শেখ হাসিনা। স্পষ্টতই একজন মন্ত্রীকে তিনি সময় দিতে চেয়েছেন। পাঁচ বছরে তার অর্জিত দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা দেশ পরিচালনার কাজে লাগাতে চেয়েছেন। আমি মনে করি, এটা ইতিবাচক। এর ফলে অনেকেই গতবারের চেয়ে বেশি দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন বলে আমি বিশ্বাস করি। নতুন মন্ত্রিসভায় অনেকে পদোন্নতি পেয়েছেন, কয়েকজনের দপ্তর পরিবর্তন হয়েছে, কেউ কেউ একই জায়গায় আছেন। বিগত মন্ত্রিসভার যারা এবার জায়গা পাননি, তাদের কয়েকজন ব্যর্থ এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। বিশেষ করে সদ্য বিদায়ী বাণিজ্যমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী, পররাষ্ট্র ও স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ব্যর্থতা, অযোগ্যতা পাঁচ বছর ধরেই আলোচনার বিষয় ছিল। জনগণ এসব মন্ত্রীর সমালোচনা করেছে প্রকাশ্যে। তাদের কেউ কেউ জনবিরক্তির কারণ হয়েছিলেন। মন্ত্রিসভায় যদি তারা আবার থাকতেন, তাহলে অধিকাংশ মানুষ হতাশ হতেন। শেখ হাসিনা জনগণের কথা শুনেছেন। তবে আগের বারের মন্ত্রীদের মধ্যে যারা বাদ পড়েছেন, তারা সবাই যে ব্যর্থ ছিলেন—এমনটা নয়। রাজনৈতিক নানা হিসাবে কেউ কেউ এবারের মন্ত্রিসভায় নেই। তবে কয়েকজনের মন্ত্রিত্ব থাকা এবং পদোন্নতি চমক সৃষ্টি করেছে। সবচেয়ে ‘বিস্ময়কর’ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পর তিনি সবচেয়ে দীর্ঘদিন মন্ত্রী থাকার এক অনন্য রেকর্ড স্থাপন করলেন। ২০০৯ থেকে টানা মন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান ছাড়া আর কেউ নেই। নিশ্চয়ই তিনি অসাধারণ যোগ্যতাসম্পন্ন, মেধাবী, এজন্যই প্রধানমন্ত্রী তার বিকল্প কাউকে খুঁজে পাচ্ছেন না। মন্ত্রিসভার আরেক চমক হলো, মহিবুল হাসান চৌধুরীর ‘ডাবল প্রমোশন’। নতুন মন্ত্রিসভায় তারই সবচেয়ে বড় পদোন্নতি ঘটেছে। শিক্ষা উপমন্ত্রী থেকে পূর্ণমন্ত্রী হওয়াটা নিঃসন্দেহে বিস্ময়কর। তরুণ এই নেতাকে আওয়ামী লীগ সভাপতি সামনে আনতে চাইছেন, তা স্পষ্ট। নওফেলের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর স্নেহ নতুন বিষয় নয়। এবার শিক্ষামন্ত্রী করে তাকে একটি বিরাট সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। সবাই এরকম ‘সুযোগ’ পান না। এই সুযোগের সদ্ব্যবহার নতুন শিক্ষামন্ত্রী কতটা করতে পারেন—তা দেখার অপেক্ষায় রইলাম। চট্টগ্রামের আরেক নেতা ড. হাছান মাহমুদেরও এবারের মন্ত্রিসভায় পদোন্নতি হয়েছে। তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে এনে তাকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ২০০৯ সালেও ড. হাছান প্রথমে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নিয়ে এখনো যখন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর অস্বস্তি, তখন হাছান মাহমুদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিঃসন্দেহে চ্যালেঞ্জিং। ড. হাছান অবশ্য এরই মধ্যে নিজেকে একজন দক্ষ মন্ত্রী হিসেবে প্রমাণ করেছেন। ২০০৯ সালে তিনি পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে পালন করেন। গত মেয়াদে তথ্যমন্ত্রী হিসেবে তিনি ছিলেন অসাধারণ। এবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে তার সাফল্য আওয়ামী লীগের জন্য অত্যন্ত জরুরি। জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী মো. ফরহাদ হেসেন এবার পূর্ণমন্ত্রী হয়েছেন। নওফেল ও ফরহাদের পদোন্নতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক দর্শনের বহিঃপ্রকাশ। তরুণদের তিনি দায়িত্ব দিতে চান। সুযোগ দিতে চান। আগামী দিনের জন্য তৈরি করতে চান। মোহাম্মদ আলী আরাফাতকে তথ্য প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়াটা তার এই দর্শনেরই প্রকাশ। এখন দেখার বিষয় তরুণরা প্রধানমন্ত্রীর আস্থার প্রতিদান কীভাবে দেন। এই পাঁচ বছরে প্রমাণিত হবে, আগামী দিনের নেতৃত্ব গ্রহণে তারা কতটা প্রস্তুত এবং যোগ্য। এবার মন্ত্রিসভায় চার প্রতিমন্ত্রী একই অবস্থানে আছেন। তাদের পদোন্নতি হয়নি। তাদের মধ্যে নসরুল হামিদ ও জুনাইদ আহমেদ পলকের তৃতীয়বারের মতো প্রতিমন্ত্রী থাকাটা এক ধরনের বিস্ময় তো বটেই। এর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী কী বার্তা দিলেন? এর অনেক রকম ব্যাখ্যা হতে পারে। একটা ব্যাখ্যা হতেই পারে এরকম যে, তারা ভালো কাজ করেছেন ঠিকই, কিন্তু তাদের অনেক সমালোচনাও আছে। এজন্য তাদের একই ক্লাসে রাখা হয়েছে। ফেল করেও তারা বহিষ্কার হননি। এজন্য আরও পরীক্ষার জন্য ‘প্রতিমন্ত্রী’ হিসেবেই তাদের রাখা হয়েছে। আবার এমনও হতে পারে যে, গত বৃহস্পতিবার যে মন্ত্রিসভা গঠিত হয়েছে, তা পূর্ণাঙ্গ নয়। ছয়টি মন্ত্রণালয় প্রধানমন্ত্রী তার নিজের কাছে রেখেছেন। মন্ত্রিসভার সম্প্রসারণ সময়ের ব্যাপার। সেই সম্প্রসারণে তাদের ভাগ্য খুলতে পারে। এখন তাদের ধৈর্যের পরীক্ষা হচ্ছে। তবে খালিদ মাহমুদ চৌধুরী গত পাঁচ বছর দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন। তার আবার প্রতিমন্ত্রী থাকাটা আমার কাছে বিস্ময়। আমাদের বুঝতে হবে যে, মন্ত্রী নিয়োগের একক ক্ষমতা সংবিধান প্রধানমন্ত্রীকে দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী এই ক্ষমতাবলে যাকে খুশি মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দিতে পারেন। তা ছাড়া মন্ত্রিসভা বিন্যাসে তিনি নানা বাস্তবতা বিবেচনা করেন। তবে এবারের মন্ত্রিসভায় সবচেয়ে বড় চমক আমার বিবেচনায় ডা. সামন্ত লাল সেন। দগ্ধ মানুষের সেবা যিনি ‘ব্রত’ হিসেবে নিয়েছিলেন, সেই সামন্ত লালকে মন্ত্রী বানানোর মধ্য দিয়ে একটি বিষয় শেখ হাসিনা প্রমাণ করেছেন, সব ভালো কাজের খবর তার কাছে আছে। সামন্ত লাল অ্যাসিড এবং আগুনে দগ্ধ মানুষের চিকিৎসায় একজন পথপ্রদর্শক। তিনি একজন চিকিৎসক নন, একজন যোদ্ধা। লক্ষ্য অর্জনের জন্য সারাটা জীবন তিনি সংগ্রাম করেছেন। আমি জানি না, মন্ত্রী হিসেবে তিনি সফল হবেন কি না। কিন্তু এরকম কাজপাগল গুণী মানুষকে স্বীকৃতি দেওয়ার মধ্য দিয়ে সরকার মানুষের ভালো কাজের প্রবণতাকে উৎসাহিত করতে পারে। ডা. সেনের মন্ত্রী হওয়াটা এদিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ। তিনি সৃষ্টিশীল, লেগে থাকা মানুষ। রুটিন দায়িত্বের বাইরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে যে নতুন কিছু সামন্ত লাল করবেন—এ বিশ্বাস আমার আছে। বহু অযোগ্য-অথর্ব মানুষ নানা সময়ে মন্ত্রী হয়েছেন। দগ্ধ মানুষের চিকিৎসায় অবদান রাখা মানবিক একজন বিনয়ী মানুষ যদি মন্ত্রিত্বের পুরস্কার পান, সেটা মন্দ কী।
২০১৮-এর মন্ত্রিসভায় রাজনীতিবিদরা কোণঠাসা অবস্থায় ছিলেন। ব্যবসায়ী এবং আমলাদের দখলে ছিল সরকার। এবার মন্ত্রিসভায় রাজনীতিবিদদের সংখ্যা বেড়েছে। ওবায়দুল কাদের, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, ড. হাছান মাহমুদ, ডা. দীপু মনির অন্তর্ভুক্তি মন্ত্রিসভাকে একটি রাজনৈতিক চরিত্র দিয়েছে। কিন্তু এর মধ্যেও দুঃখ আর হতাশা আছে। জাহাঙ্গীর কবির নানকের কথাই ধরা যাক—ছাত্রলীগ, যুবলীগ থেকে ধাপে ধাপে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য হয়েছেন। কর্মীবান্ধব নেতা। মাঠের রাজনীতিবিদ। ত্যাগী ও পরীক্ষিত একজন রাজনীতিবিদ, যার জীবনে কোনো বিচ্যুতি নেই। এর আগে একবার প্রতিমন্ত্রী হয়েছিলেন। এবার তিনি পূর্ণমন্ত্রী হয়েছেন বটে, তবে তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের। এই মন্ত্রণালয়কে অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় মনে করা হয়। নানকের আরও গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় পাওয়া উচিত, এমন আলোচনা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরের কর্মীদের মধ্যে। কিন্তু আমি বিষয়টিকে ভিন্নভাবে দেখি। জাতির পিতা স্বনির্ভর বাংলাদেশ বিনির্মাণে যে রূপকল্প তৈরি করেছিলেন, তাতে তিনি পাটকে গুরুত্ব দিয়েছিলেন। একসময় পাট ছিল আমাদের প্রধান রপ্তানি পণ্য। কিন্তু ’৭৫-এর পর সোনালি আঁশকে বিবর্ণ করা হয় পরিকল্পিতভাবে। স্বনির্ভরতার কথা বলতে গিয়ে তিনি ‘পাট আছে’ কথাটা বেশ গর্ব করেই উচ্চারণ করেছিলেন। আমাদের জাতীয় সম্পদ পাট চরম অবহেলার শিকার হয় স্বৈরাচারদের হাতে। বিএনপি আদমজী পাটকল বন্ধ করে দিয়েছিল। বিশ্বে এখন পাটের বহুমাত্রিক চাহিদা তৈরি হয়েছে। ২০১৪ সালে মির্জা আজম পাট ও বস্ত্র প্রতিমন্ত্রী হয়ে পাটের নতুন দিনের সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছিলেন। দীর্ঘদিন ধরেই গার্মেন্টস খাতকে বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে আনার চেষ্টা চলছে। কিন্তু মন্ত্রীদের উদ্যোগ না থাকায় সেই চেষ্টা ফাইলবন্দি হয়ে আছে। একজন করিতকর্মা দক্ষ মন্ত্রী এই মন্ত্রণালয়ের চেহারা পাল্টে দিতে পারেন। এর ফলে আমাদের অর্থনীতি লাভবান হতে পারে। গার্মেন্টস শিল্পনির্ভর রপ্তানি খাতের ঝুঁকি কমাতে পারে। নানক কাজের মানুষ, তার নেতৃত্বে এই মন্ত্রণালয় হয়ে উঠতে পারে গুরুত্বপূর্ণ। ফিরতে পারে পাটের সোনালি দিন। এজন্যই কি প্রধানমন্ত্রী তার ক্রাইসিস ম্যানেজারকে এই দায়িত্ব দিলেন?
আবদুর রহমানও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য। ত্যাগী নেতা, পোড়খাওয়া রাজনীতিবিদ। তিল তিল করে রাজনীতিতে নিজের অবস্থান পোক্ত করেছেন। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে এবারই প্রথম মন্ত্রী হলেন। তাকে দেওয়া হয়েছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। এটিকেও মনে করা হয় অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়। একটা সময় এই মন্ত্রণালয় কৃষি মন্ত্রণালয়েরই অংশ ছিল। অনেকের প্রশ্ন, আবদুর রহমানের মতো জাঁদরেল নেতা কেন এরকম অগুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ে। কিন্তু আমার বিবেচনায়, দেশের খাদ্য নিরাপত্তা এবং স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে এই মন্ত্রণালয়ের গুরুত্ব অপরিসীম। গত ১৫ বছরে এই মন্ত্রণালয়কে প্রধানমন্ত্রী বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছেন। দেশের অর্থনীতি এবং খাদ্য নিরাপত্তার এই মন্ত্রণালয়ের গুরুত্ব ক্রমশ বাড়ছে। স্বাদু পানির মাছ উৎপাদনে আমরা এখন বিশ্বে প্রথম। ইলিশ উৎপাদনে শীর্ষ দেশ বাংলাদেশ। প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব ব্যক্তিগত উদ্যোগ পুঁটি, টেংরা, মলা, ঢেলার মতো বিপন্নপ্রায় মাছগুলো নতুন জীবন পেয়েছে। এখন মাছে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ। অতীতে কোরবানির সময় আমাদের ভারতের গরুর ওপর নির্ভর করতে হতো। কিন্তু সেই অনিশ্চয়তা আমরা কাটিয়ে উঠেছি। গরু, ছাগল, মুরগির উৎপাদনে বাংলাদেশে এক নীরব বিপ্লব হয়েছে। শিক্ষিত তরুণরা খামার করছেন। বিশ্বব্যাংকের সবচেয়ে বড় আর্থিক প্রকল্প এখন প্রাণিসম্পদে। লাইভস্টক অ্যান্ড ডেইরি ডেভেলপমেন্ট প্রকল্প স্মার্ট লাইভস্টক বিনির্মাণে কাজ করছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে প্রাণিসম্পদের বহুমাত্রিক বিকাশ হবে। জাতীয় সংসদে ডেইরি বোর্ড আইন পাস হয়েছে। বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদে আধুনিক যুগে প্রবেশ করছে। এরকম অবস্থায় একজন জাতীয় নেতার এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব লাভ একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। আবদুর রহমানের নেতৃত্বে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সবচেয়ে প্রয়োজনীয় একটি মন্ত্রণালয় হয়ে উঠতে পারে। এই মন্ত্রণালয় যত পাদপ্রদীপে থাকবে, তত বাংলাদেশে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। পুষ্টির চাহিদা পূরণ হবে।
ডা. দীপু মনিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়াটা অনেকে পদাবনতি মনে করছেন। বাংলাদেশে এখনো সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়কে কম গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হয়। আমি অবশ্য তেমনটি মনে করি না। বরং আমার বিবেচনায় দেশের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে এটি একটি। বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতাসহ অনেক সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি বাস্তবায়নে নেতৃত্ব দেয় এই মন্ত্রণালয়। আমরা যে কল্যাণকামী বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে চাই, সেখানে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় নেতৃত্ব দিতে পারে। বিশ্বে এখন ওয়েল ফেয়ার স্টেট বা কল্যাণ রাষ্ট্রের ধারণা জনপ্রিয় হচ্ছে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম চেতনার জায়গা হলো কল্যাণ রাষ্ট্র বাস্তবায়নের অঙ্গীকার। ডা. দীপু মনি অত্যন্ত সংবেদনশীল মানবিক একজন রাজনীতিবিদ। আমি মনে করি, এই মন্ত্রণালয়ের খোলনলচে পাল্টে দেওয়ার ক্ষমতা তার আছে। তার নেতৃত্বে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় রাষ্ট্রের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় হতেই পারে। সমতা, বৈষম্যমুক্ত, স্বনির্ভর বাংলাদেশ বিনির্মাণে উপেক্ষিত সেক্টরগুলোকে মনোযোগ দিতেই হবে। বড় নেতাদের হাতে সেই দায়িত্ব তুলে দিয়েছেন শেখ হাসিনা। তিনি যে চিন্তাভাবনায় এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে স্মার্ট—এই মন্ত্রিসভা তারই এক প্রমাণ। এখন দেখার বিষয়, যারা দায়িত্ব পেলেন তারা শেখ হাসিনার চিন্তা ও দর্শন বাস্তবায়নে কতটা অবদান রাখতে পারেন।
লেখক: নির্বাহী পরিচালক, পরিপ্রেক্ষিত