কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৯ মার্চ ২০২৪, ০৩:১৭ এএম
আপডেট : ১৯ মার্চ ২০২৪, ০৯:০১ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

বিশ্বের মহান নেতারা গেল কোথায়

ইয়াসার ইয়াকিস
বিশ্বের মহান নেতারা গেল কোথায়

ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যাবে, বিশ্বে শক্তিশালী বা মহান নেতাদের সময় যেমন এসেছে আবার তা চলেও গেছে। এই মুহূর্তে বিশ্বসম্প্রদায় এমন একটি সময় অতিক্রম করছে, যেখানে এমনটাই মনে হচ্ছে যে, বিশ্বের শক্তিশালী বা প্রধান দেশগুলোর নেতারা সবচেয়ে খারাপ পারফরম্যান্স প্রদর্শনে প্রতিযোগিতা করছেন।

সাম্প্রতিক দশকগুলোতেও আমরা নেতৃস্থানীয় দেশগুলোতে দেখেছি উইনস্টন চার্চিল, মার্গারেট থ্যাচার, চার্লস ডি গল, জন এফ কেনেডি এবং জার্মান চ্যান্সেলর উইলি ব্র্যান্ডট, হেলমুট কোহল এবং সর্বশেষ অ্যাঙ্গেলা মেরকেলের মতো অসামান্য ব্যক্তিত্ব বা নেতারা তাদের দেশ পরিচালনা করেছেন। এ কথা বলা বাহুল্য যে, আমরা এখন সেসব সময় হারিয়েছি এবং যার ফলে একটি নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। এখন বিশ্বে যেসব নেতৃত্ব রয়েছেন তারা অপেক্ষাকৃত কম প্রভাবশালী।

যুক্তরাষ্ট্রের দিকেই লক্ষ করুন। সেখানে মার্কিনিরা ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান উভয়ই প্রেসিডেন্ট পদের জন্য অত্যন্ত দুর্বল প্রার্থী তৈরি করতে পেরেছেন। কেউ অবাক হতেই পারেন যে, আমেরিকার মতো পরিশীলিত একটি সমাজ আরও উপযুক্ত প্রেসিডেন্ট প্রার্থী তৈরি করতে পারেনি কেন। নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচন। এ নির্বাচনে সম্ভাব্য নেতারা তাদের মধ্যে কে সবচেয়ে খারাপ কাজ করবেন, তা দেখানোর জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বলেই আমার কাছে মনে হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশে এ পরিস্থিতিই বলে দেয়, অন্যান্য প্রধান দেশও শক্তিশালী নেতা তৈরি করতে সমর্থ হয়নি।

অতীতের অসাধারণ সব নেতার যুগ এখন আপাতদৃষ্টিতে শেষ। আর আমরাও দেখতে পারছি, রাজনীতিবিদদের অনেক বড় বড় কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িয়ে পড়ার ঘটনা। খোদ যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম প্রবীণ রাজনীতিবিদ হিসেবে বিবেচিত বব মেনেনডেজ একটি আর্থিক কেলেঙ্কারিতে জড়িত থাকার কারণে বৈদেশিক সম্পর্ক সংক্রান্ত সিনেট কমিটির চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন। গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে তাকে একটি দুর্নীতির মামলায় অভিযুক্ত করা হয়। সেই মামলায় একটি বিলাসবহুল গাড়ি, সোনার বার এবং একটি অ্যাপার্টমেন্টের বিনিময়ে তার রাজনৈতিক প্রভাব খাটানোর অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয় তাকে ও তার স্ত্রীকে। অর্থাৎ মেনেনডেজের আর্মেনিয়ান স্ত্রী নাদিন আর্সলানিয়ানকেও অভিযুক্ত করা হয়। তাদের বাড়িতে ৪ লাখ ৮০ হাজার ডলারের বেশি নগদ অর্থ একটি বড় খামে পাওয়া যায়; যা তাদের বাসায় আলমারি ও অন্যান্য জায়গায় নিরাপদে লুকিয়ে রাখা হয়েছিল।

বিশ্বসম্প্রদায় একটি অস্থিতিশীল সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে; বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য এবং পূর্ব ইউরোপ তো বটেই, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে সম্পর্কও ভালো যাচ্ছে না। সাবেক প্রেসিডেন্ট এবং ২০২৪-এর প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প চীন ও রাশিয়ার মধ্যে কম খারাপকে বেছে নেওয়ার নীতি গ্রহণ করেছিলেন। কারণ তিনি বিবেচনা করেছিলেন যে, বেইজিং যুক্তরাষ্ট্রের জন্য একটি বড় হুমকি।

এদিকে রাশিয়া ইউক্রেনের সঙ্গে একটি গুরুতর সংঘর্ষের জন্য ক্ষেত্র প্রস্তুত করেছিল। কিন্তু পশ্চিম থেকে কিয়েভের জন্য এত শক্তিশালী সমর্থন আসবে—এমনটা প্রথম দিকে ভেবেছিলেন না পুতিন। মনে রাখতে হবে, যুদ্ধ সর্বদাই অজানা ও অনিশ্চিত পরিণতিরই পদক্ষেপ। ইউক্রেনীয় যুদ্ধের সম্ভাব্য ফল এখনো অনিশ্চিত। তবে আমাদের বিবেচনায় নিতে হবে যে, রাশিয়ার বিস্তৃত প্রাকৃতিক সম্পদ রয়েছে। ফলে তারা দীর্ঘ সময়ের জন্য যুদ্ধ চালিয়ে যেতে পারে।

অন্যদিকে যদিও সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর থেকে রাশিয়া রাজনৈতিক জীবনে অনেক বেশি উদার হয়েছে, তবে এটি এখনো এমন কোনো দেশ নয়, যেখানে নাগরিকরা সব স্বাধীনতা উপভোগ করতে পারে। শাসকশ্রেণির বিরোধী শিবির নানা নিপীড়নের শিকার হয়। দেশটির রাষ্ট্রীয় ঐতিহ্য এখনো প্রতিরক্ষার প্রশ্নে জনমতের গণতান্ত্রিক প্রকাশের অনুমতি দেয় না। এবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভ্লাদিমির পুতিন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। এটি রাশিয়ান নির্বাচন ব্যবস্থায় একটি নতুন উদ্ভাবন।

ইউক্রেনের দুর্বল প্রতিরোধ সম্পর্কে হতাশাব্যঞ্জক মন্তব্যগুলো সামনে আসতে শুরু করেছে। ইইউর পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা পলিসির উচ্চ প্রতিনিধি জোসেপ বোরেল গত নভেম্বরে স্বীকার করেন যে, ইউক্রেনের বিজয়ের সম্ভাবনা আপাতত দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু ইউক্রেনের প্রতি ইইউর জোরালো সমর্থন অব্যাহত থাকবে।

একদিকে ইউক্রেনে রুশ-নিয়ন্ত্রিত অঞ্চল সম্প্রসারণে পুতিনের সংকল্প এবং অন্যদিকে রাশিয়াকে যতটা সম্ভব দুর্বল করতে পশ্চিমাদের তৎপরতা রয়েছে অব্যাহত। এ দুটি বিপরীতমুখী বাস্তবতা এটাই ইঙ্গিত দেয় যে, এ অঞ্চলে খুব বড় রকমের যুদ্ধের ডামাডোল অপেক্ষা করছে।

ইউরোপের দেশগুলো যদি ইউক্রেন যুদ্ধে ক্লান্ত হয়ে পড়ে, তাহলে যুদ্ধে তাদের প্রচেষ্টা কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এমন অনীহা ইউরোপের কয়েকটি দেশে প্রকাশ পেতে শুরু করেছে। গাজা যুদ্ধ এরই মধ্যে বিভক্ত করেছে ইউক্রেন ও ফিলিস্তিনের মধ্যে বেশ কয়েকটি পশ্চিমা দেশের মনোযোগ। উভয় দ্বন্দ্বই যে হবে দীর্ঘস্থায়ী এ ব্যাপারে সন্দেহ কম এবং সুড়ঙ্গের শেষে কোনো আলো দেখা যাচ্ছে না।

এ কথা সত্য যে, ইউরোপ এখনো তার দীর্ঘ প্রতীক্ষিত নিজেদের তৈরি নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা কনসেপ্ট তৈরি করতে পারেনি। তবে তারা এটি করতে অবশ্যই আগ্রহী। কারণ তারাও মার্কিন আধিপত্য থেকে মুক্ত হতে চায়। এ বিষয়ে তাদের রয়েছে উভয় সংকট। কেননা তারা বিভিন্ন বিষয়ে মার্কিনদের না রেখেও পারে না, আবার সম্পূর্ণরূপে তাদের পরিত্যাগও করতে পারে না।

তুলনামূলকভাবে সস্তা রাশিয়ান গ্যাসের পরিবর্তে মার্কিন প্রাকৃতিক গ্যাসের ওপর নির্ভরতা অনেক ইউরোপীয় দেশের বাজেটের ওপর প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করছে। এ অবস্থার মধ্যে রাশিয়ান গ্যাস ক্রয় চালিয়ে যাচ্ছে বেশ কয়েকটি পূর্ব ইউরোপীয় দেশ। এটি অনির্দিষ্টকালের জন্য টেকসই নয়। আর ফ্রান্স এ খেলাটি শুধু খণ্ডকালীন ভিত্তিতে খেলে চলেছে। যুক্তরাষ্ট্রের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ চীন। এ দুই পরাশক্তির মধ্যে যদি পারস্পরিক উত্তেজনা শুরু হয়, তাহলে তা বিশ্বকে কোথায় নিয়ে যেতে পারে, এটা কেউ অনুমান করতে পারবে না। যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের জনসংখ্যা যথাক্রমে ৩৪০ মিলিয়ন আর ১.৪ বিলিয়ন। অর্থাৎ বোঝা যাচ্ছে, একটা যুদ্ধ শুরু হলে হতাহতের ঘটনা কোথায় গিয়ে ঠেকবে, তা কল্পনার বাইরে।

ট্রাম্প বলেছেন, তিনি চীনা পণ্য আমদানিতে ৬০ শতাংশ শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা করছেন। এ সিদ্ধান্ত যে বিশ্বকে আরেকটি বাণিজ্য যুদ্ধের দিকে নিয়ে যেতে পারে, এ বিষয়ে কোনোই সন্দেহ নেই। বিরাজমান পরিস্থিতিতে বিশ্বে এখন দরকার মহান নেতাদের নতুন প্রজন্মের উত্থান।

লেখক: তুরস্কের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং দেশটির ক্ষমতাসীন এ কে পার্টির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। নিবন্ধটি আরব নিউজ থেকে ঈষৎ অনুবাদ করেছেন সঞ্জয় হালদার

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি অধ্যাদেশ নিয়ে ৬ হাজারের বেশি মতামত পেল মন্ত্রণালয়

ল্যাবএইডের কর্ণধার সাকিফ শামীমকে নিয়ে ফিচার করল ‘ইউএসএ টুডে’

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক অনুষ্ঠিত

চাকসু নির্বাচন বর্জন এক প্যানেলের

খতমে নবুওয়তের মহাসম্মেলন সফল করতে মুন্সীগঞ্জে উলামায়ে কেরামের মতবিনিময় সভা 

সাংবাদিককে পুড়িয়ে হত্যার হুমকি শ্রমিক লীগ নেতার

ব্লকেড উঠিয়ে নতুন কর্মসূচির ঘোষণা শিক্ষকদের

ইউরোপের ৩ রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে এনসিপির বৈঠক

হাসপাতালে লড়েও বাঁচলেন না ছুরিকাঘাতে আহত ছাত্রদল কর্মী

দুই যুবককে গুলি করে পালিয়ে গেল দুর্বৃত্তরা

১০

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সাবেক এমপি বাদল রিমান্ডে 

১১

কেয়া হত্যা মামলা তুলতে হুমকি, তিনজনের বিরুদ্ধে আরেক মামলা

১২

৪০০ ব্যালটে স্বাক্ষর না থাকার অভিযোগ

১৩

স্পাউস ভিসার খপ্পরে অসংখ্য নারী, ভয়াবহ প্রতারণা 

১৪

চাকসুর ভোটগ্রহণ শেষ

১৫

মরুভূমিতে বালু ও পাথরচাপা অবস্থায় মিলল প্রবাসীর মরদেহ

১৬

রাকসু নির্বাচন : নিরাপত্তার চাদরে রাবি ক্যাম্পাস

১৭

কেনিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী রাইলা ওডিঙ্গা মারা গেছেন

১৮

গণতন্ত্রের অভিযাত্রায় সংকট সৃষ্টি ‘কালো ঘোড়ার অনুপ্রবেশ’ ঘটাবে : রিজভী

১৯

বাংলাদেশ বিনির্মাণে ধানের শীষের বিকল্প নেই : আইনুল হক

২০
X