গোলাম কুদ্দুস
প্রকাশ : ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:১০ এএম
আপডেট : ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:৫৭ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

শিব নারায়ণ দাসের মৃত্যু নেই

শিব নারায়ণ দাসের মৃত্যু নেই

একে একে মুক্তিযুদ্ধের নায়করা চলে যাচ্ছেন। সেই ধারাবাহিকতায়ই শিবনারায়ণ দাসের প্রয়াণেও আমরা মুক্তিযুদ্ধের আরেকজন নায়ককে হারালাম। তার প্রয়াণে গভীর শোক প্রকাশ করছি। শিবনারায়ণ দাস আজকে ইতিহাস হয়ে গেলেন। তার প্রতি আমাদের গভীর শ্রদ্ধা।

মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের সঙ্গে শিবনারায়ণ দাসের নামটি ওতপ্রোতভাবে যুক্ত। জাতির এক মহাসংকটকালে যখন বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আমরা মুক্তিযুদ্ধের সংগ্রামের দ্বারপ্রান্তে উপনীত, একটি অস্থির সময়ে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে যখন দেশে অসহযোগ আন্দোলন চলছিল, অতঃপর ঐতিহাসিক ৭ মার্চে বঙ্গবন্ধু বললেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ এ কথাটির মাধ্যমে তিনি এক অর্থে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতার ঘোষণাই দিয়ে দিলেন, যে ঘোষণাটি তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে দিয়েছিলেন ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ। আর ৭ মার্চ অনানুষ্ঠানিক ঘোষণার মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু আসলে কী বলতে চেয়েছিলেন, তা দেশবাসী ঠিকই বুঝে নিয়েছিলেন। যার ফলে যেই স্বাধীনতার জন্য গ্রামেগঞ্জে-শহরে-নগরে-বন্দরে দেশের সাধারণ মানুষ, ছাত্রছাত্রী, তরুণরা বাঁশের লাঠি নিয়েই হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করার প্রস্তুতি গ্রহণে উন্মুখ হয়ে উঠেছিলেন, ট্রেনিং নিয়েছিলেন, ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন, ৩০ লাখ শহীদ ও ২ লাখ মা-বোন সম্ভ্রম হারিয়েছিলেন, সেই স্বাধীন দেশের পতাকাটি প্রথম অঙ্কন করেছিলেন এই শিবনারায়ণ দাস।

শিব নারায়ণ দাশের জন্ম কুমিল্লায়। বাবার নাম সতীশচন্দ্র দাস। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানি সেনারা তাকে ধরে নিয়ে হত্যা করে। শিব নারায়ণ দাশের স্ত্রীর নাম গীতশ্রী চৌধুরী এবং তাদের সন্তান অর্ণব আদিত্য দাশ। শিবনারায়ণ প্রথম ভাষাসৈনিক ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের হাত ধরে রাজনীতিতে আসেন। ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন অংশগ্রহণ করে কারাবরণ করেন।

১৯৭০ সালের ৭ জুন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের রাজধানী ঢাকার পল্টন ময়দানে অনুষ্ঠিত ছাত্রদের এক সামরিক কুচকাওয়াজে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অংশগ্রহণের কথা ছিল। এই লক্ষ্যে ছাত্রদের নিয়ে একটি জয় বাংলা বাহিনী, মতান্তরে ‘ফেব্রুয়ারি ১৫ বাহিনী’ গঠন করা হয়। ছাত্রনেতারা এ বাহিনীর একটি পতাকা তৈরির সিদ্ধান্ত নেয়। এই লক্ষ্যে ১৯৭০ সালের ৬ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের (তৎকালীন ইকবাল হল) ১০৮ নম্বর কক্ষে ছাত্রলীগ নেতা আ স ম আবদুর রব, শাহজাহান সিরাজ, কাজী আরেফ আহমদ, মার্শাল মনিরুল ইসলাম পতাকার পরিকল্পনা নিয়ে বৈঠকে বসেন। এ বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন ছাত্রলীগ নেতা স্বপন কুমার চৌধুরী, জগন্নাথ কলেজের ছাত্রলীগ নেতা নজরুল ইসলাম, কুমিল্লা জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় ছাত্রনেতা শিবনারায়ণ দাস। সভায় কাজী আরেফের প্রাথমিক প্রস্তাবনার ওপর ভিত্তি করে সবার আলোচনার শেষে সবুজ জমিনের ওপর লাল সূর্যের মাঝে হলুদ রঙের বাংলার মানচিত্র খচিত পতাকা তৈরির সিদ্ধান্ত হয়। কামরুল আলম খান (খসরু) তখন ঢাকা নিউমার্কেটের এক বিহারি দর্জির দোকান থেকে বড় এক টুকরো সবুজ কাপড়ের মাঝে লাল একটি বৃত্ত সেলাই করে আনলেন; এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে (ইকবাল হল) আঁকা হলো স্বাধীন বাংলার পতাকা। শিব নারায়ণ দাশ পরিশেষে তার নিপুণ হাতে মানচিত্রটি আঁকলেন লাল বৃত্তের মাঝে, এমনি করে রচিত হলো ‘ফেব্রুয়ারি ১৫ বাহিনী’র পতাকা, যা কিছুদিন পর স্বীকৃত হয় বাংলাদেশের প্রথম পতাকা হিসেবে।

স্বাধীন দেশের পতাকাটির রূপ, আকার বা আনুষঙ্গিক বিষয়ে হয়তো সিদ্ধান্তটি ছিল যৌথ, তবে যিনি বাস্তবে পতাকাটি অঙ্কন শিল্পী হিসেবে প্রথম তৈরি করেছিলেন, তিনি হলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা শিবনারায়ণ দাস। কাজটির অবশ্যই ঐতিহাসিক ভূমিকা রয়েছে এবং সেই ঐতিহাসিক ভূমিকাটি ছিল শিব নারায়ণ দাশের। এ পতাকাই পরে ১৯৭১ সালের ২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় উত্তোলিত হয়। ১৯৭১ সালের ২৩ মার্চ পাকিস্তান দিবসে সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানের বিভিন্ন স্থানে পাকিস্তানের জাতীয় পতাকার পরিবর্তে নকশা করা বাংলাদেশের ওই পতাকা উত্তোলন করা হয়।

১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সরকার শিব নারায়ণ দাশের নকশা করা পতাকার মধ্যে মানচিত্রটি বাদ দিয়ে পতাকার মাপ, রং ও তার ব্যাখ্যাসংবলিত একটি প্রতিবেদন দিতে বলে পটুয়া কামরুল হাসানকে। কামরুল হাসান দ্বারা পরিমার্জিত রূপটিই বর্তমানে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা। সুতরাং, বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে প্রথম পতাকার নকশাকার হিসেবে শিবনারায়ণ দাসের ঐতিহাসিক ভূমিকা ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। এ কারণেই তিনি বাঙালি জাতির কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন।

লেখক: সভাপতি, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

কালবৈশাখী ঝড়ে লন্ডভন্ড সহস্রাধিক বসতবাড়ি

মার্কিন ঘাঁটিতে আস্তানা গাড়ল রুশ সেনারা

ম্যাচ ফি নয়, বোনাস বাড়ছে টাইগারদের

বৃষ্টির পরও সুখবর নেই ঢাকার বাতাসে

১৮৪ বোতল ফেনসিডিলসহ মাদক কারবারি আটক

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে কেমন হবে টাইগারদের একাদশ?

বিয়ে করতে রাজি না হওয়ায় প্রেমিকার আত্মহত্যা

কী আছে আজ আপনার ভাগ্যে?

উপজেলা নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার নিয়ে আ.লীগের দুপক্ষে সংঘর্ষ

কারা ফটকে সমর্থকদের ভিড় / আইনি জটিলতায় আটকে গেল মামুনুল হকের মুক্তি

১০

ইসরায়েলের সঙ্গে সব ধরনের বাণিজ্য বন্ধ করলেন এরদোয়ান

১১

দুপুরের মধ্যে ৬০ কিমি বেগে ঝড়ের আভাস

১২

গুচ্ছের ‘খ’ ইউনিটের পরীক্ষা আজ, প্রতি আসনে লড়বেন ১৫ জন

১৩

ঢাকাসহ যেসব অঞ্চলে বজ্রবৃষ্টি হতে পারে আজও

১৪

৩ মে : নামাজের সময়সূচি

১৫

কী ঘটেছিল ইতিহাসের এই দিনে

১৬

শুক্রবার রাজধানীর যেসব এলাকায় যাবেন না

১৭

সিলেটে বন্যার আশঙ্কা, বাড়ছে নদ-নদীর পানি

১৮

সকাল ৯টার মধ্যে তীব্র ঝড়ের আভাস

১৯

মাদ্রাসা ছাত্রীকে লঞ্চে নিয়ে ধর্ষণ

২০
*/ ?>
X