ফিলিস্তিনের গাজায় যুদ্ধ বন্ধের দাবিতে দেশে দেশে বিক্ষোভ হচ্ছে। ছাত্র আন্দোলনের এই ঢেউ ছড়িয়ে পড়েছে খোদ যুক্তরাষ্ট্রের মর্যাদাপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয় কলাম্বিয়া, ব্রাউন, ইয়েল, হার্ভার্ড, ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি, নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস অ্যাট অস্টিন, ইউসিএলএসহ আরও বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে। এসব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অসংখ্য শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা একটি একাডেমিক ভবন অধিকারে নিয়ে সেখানকার হ্যামিল্টন হলের নাম পাল্টে হিন্দ হল করেছেন। হিন্দ রজব নামের পাঁচ বছর বয়সী ফিলিস্তিনি শিশুকে ফেব্রুয়ারি মাসে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। দুই সপ্তাহ আগে সাহায্যের জন্য আবেদন জানিয়েছিল সে আর ইসরায়েলি সেনাদের গোলাগুলির মধ্যে আটকা পড়েছিল। তার নামেই এ নামকরণ। কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের হ্যামিল্টন হল সর্বশেষ এ ভবনটি শিক্ষার্থীরা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছিলেন ১৯৬৮ সালে, ভিয়েতনাম যুদ্ধের বিরোধিতা করে গড়ে ওঠা বিক্ষোভকালে। দখলকৃত ভূখণ্ডের ফিলিস্তিনিরা মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ‘ছাত্র ইন্তিফাদার’ দিকে গভীর আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে আছে। শিক্ষার্থীরা দাবি করেছেন, যেসব কোম্পানি ইসরায়েলের দখলদারি ও গাজায় চলমান গণহত্যা থেকে মুনাফা তুলছে, তাদের কাছ থেকে তহবিল নেওয়া বন্ধ করতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের পর এ বিক্ষোভ বড় আকার ধারণ করেছে ইউরোপের দেশগুলোর বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানকার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দাবি, ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে—এ দাবিতে কয়েক দিন ধরে নেদারল্যান্ডস, বেলজিয়াম, জার্মানি, ফ্রান্স, সুইজারল্যান্ড ও অস্ট্রিয়ায় বিক্ষোভ চলছে। এ বিক্ষোভের জেরে ধরপাকড় ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিরাপত্তা
বাহিনীর সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। যুক্তরাজ্যের গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের খবরে বলা হয়েছে, ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভের বড় সূচনা হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাম্পাসগুলোয়। দেশটিতে এখনো বিক্ষোভ চলছে। এ পরিস্থিতিতে বিক্ষোভ দানা বাঁধতে শুরু করেছে ইউরোপে।
শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস ছাড়তে না চাইলে মারধর এবং তাদের তাঁবু ভেঙে দেয় পুলিশ। গত সোমবারের বিক্ষোভের পর মঙ্গলবার আবারও বিক্ষোভ শুরু হয়। এদিন নেদারল্যান্ডসের ডেলফট ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি ও ইউট্রেখট ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেন। এ ছাড়া মঙ্গলবার রাতে প্যারিসের সোরবন বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি হল দখল করে দুই ঘণ্টা বিক্ষোভ করেন তারা। বিক্ষোভের সময় ৮৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্যারিসের আরেক নামকরা বিশ্ববিদ্যালয় সায়েন্সেস পো ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। ফিলিস্তিনের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, যারা প্রতিনিয়ত ইসরায়েলি সেনাদের নৃশংস নিপীড়নের মুখোমুখি হন, তারাও যুক্তরাষ্ট্রের পুলিশ শিক্ষার্থীদের ওপর যে ভয়ানক নিপীড়ন ও সহিংস আচরণ হচ্ছে, তা দেখে আঁতকে উঠছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসনবিরোধী শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলন ‘ফ্রি প্যালেস্টাইন মুভমেন্টে’ সংহতি জানিয়ে সমাবেশ ও বিক্ষোভ কর্মসূচির আয়োজন করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। আমরা মনে করি, ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের পৈশাচিক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে দেশে দেশে সাধারণ মানুষের বিক্ষোভ একটি ইতিবাচক ঘটনা। সময়ের প্রয়োজনে বিশ্বব্যাপী সাধারণ মানুষের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিরুদ্ধে একাত্ম হওয়ার ঘটনা নতুন নয়। ভিয়েতনাম যুদ্ধে, এমনকি আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময়ও বিশ্ব বিবেক গর্জে উঠেছিল। আমাদের প্রত্যাশা, দেশে দেশে গড়ে ওঠা চলমান আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে যুদ্ধবাজদের চৈতন্যদয় হবে। তারা শান্তির পথে পা বাড়াবে।