ই-স্পোর্টসকে ক্রীড়া হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে সরকার। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় ই-স্পোর্টসের সম্ভাব্যতা যাচাই করতে একটি কমিটি গঠন করেছে। ওই কমিটি নীতিমালা তৈরি করা এবং সম্ভাবনা ও অন্যান্য বিষয় খতিয়ে দেখছে। এদিকে ওই কমিটি নিয়ে রীতিমতো ‘মিউজিক্যাল চেয়ার’ খেলা শুরু হয়েছে। সে খেলায় মূল স্রোতের বাইরে চলে গেছেন দেশের ই-স্পোর্টসকে সুনির্দিষ্ট কাঠামোর ওপর দাঁড় করানো উদ্যোক্তরা!
প্রথমে ই-স্পোর্টস সম্পর্কে জানা যাক। এটি হচ্ছে ইলেকট্রনিক মাধ্যমে পেশাদার ও অপেশাদার প্ল্যাটফর্মে ভিডিও গেম। বুদ্ধিবৃত্তিক এ খেলা একদিকে যেমন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিচ্ছে, অন্যদিকে নানা ঝুঁকিও রয়েছে। বাজার গবেষণা ও পরামর্শদাতা বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠান টেকনাভিওর মতে, বর্তমানে বিশ্বে ই-স্পোর্টস বাজারের আকার ৩.৪৭ বিলিয়ন ডলার। ২০২৮ সাল নাগাদ এ বাজার প্রতি বছর ২০.৫ শতাংশ হারে বড় হবে। দেশে ই-স্পোর্টসের সম্ভাবনার বিপরীতে থাকা ঝুঁকি রোধে সরকারি একাধিক দপ্তরকে এক সুতোয় গাঁথতে হবে। বাংলাদেশে এ কাজটা শুরু হয়েছিল প্রায় অর্ধযুগ আগে। একদল উদ্যমী যুবক এ কাজ করে আসছিলেন। সরকারি বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, দপ্তর, আইটি বিশেষজ্ঞ এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে যারা ই-স্পোর্টসকে ক্রীড়া হিসেবে ঘোষণার প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছে।
কিন্তু অভিযোগ আছে, যারা ই-স্পোর্টসকে দেশে প্রতিষ্ঠিত করতে বছরের পর বছর শ্রম দিয়েছেন, তাদের পাশ কাটিয়ে বাংলাদেশ ইয়ুথ ডেভেলপমেন্ট ইলেকট্রনিক স্পোর্টস অ্যাসোসিয়েশনকে (বিওয়াইডিইএসএ) সরাসরি ক্রীড়া ফেডারেশন হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার পাঁয়তারা করা হচ্ছে। এ কাজে সরাসরি আশীর্বাদ রয়েছে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী মহলের। ভয়ংকর তথ্য হচ্ছে, বিওয়াইডিইএস নিয়মবহির্ভূতভাবে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের সঙ্গে নানা কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। প্রচলিত আইনকে তোয়াক্কা না করে বিগত সরকারের আমলে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে প্রতিষ্ঠানটিকে লাইসেন্স প্রদান করা হয়েছে। এখানেই শেষ নয়, প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে আদম পাচার, অর্থ পাচারের মতো গুরুতর অভিযোগ আছে। ২০২২ সালে এশিয়ান গেমসে খেলোয়াড় পাঠানোর জন্য বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন (বিওএ) থেকে অনাপত্তি সনদ নিয়েছিল বিওয়াইডিইএসএ। পরবর্তী সময়ে সে সনদ ব্যবহার করে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর কাছ থেকে অন্যান্য লাইসেন্স সংগ্রহ করা হয়েছিল বলেও অভিযোগ আছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বিওয়াইডিইএসের কার্যক্রম যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ই-স্পোর্টসে অংশগ্রহণের জন্য বিদেশে খেলোয়াড় পাঠানোও এ প্রতিষ্ঠানের এখতিয়ারভু্ক্ত কাজ নয় বলে তদন্তে উঠে এসেছে। সূত্র আরও জানিয়েছে, তদন্ত প্রতিবেদন সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে দেওয়া হয়েছে; কিন্তু রহস্যজনক কারণে সে প্রতিবেদনের আলোকে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার সঙ্গে প্রশ্নবিদ্ধ প্রতিষ্ঠান বিওয়াইডিইএসের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের ছবিও বিভিন্ন মাধ্যমে দেখা যাচ্ছে, যা নানা প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে।
ই-স্পোর্টস সংক্রান্ত বিষয় কোন দিকে যাচ্ছে, সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তারা এ নিয়ে কী ভাবছেন—তা জানার চেষ্টা করা হয়েছিল কালবেলার পক্ষ থেকে। আশ্চর্যজনক বিষয় হলো, এ প্রসঙ্গে সুনির্দিষ্টভাবে কোনো তথ্যই দিতে পারেননি সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের ‘ক্রীড়া শাখা’ জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের (এনএসসি) আওতাধীন বিভিন্ন ক্রীড়া ফেডারেশনের যাবতীয় কাজ দেখভাল করে থাকে। এ প্রসঙ্গে যোগাযোগ করা হলে ক্রীড়া অধিশাখার দায়িত্বে থাকা উপসচিব মো. সগীর হোসেন কালবেলাকে বলেন, ‘আমি একটা প্রোগ্রামের কারণে বাইরে আছি। ই-স্পোর্টস সম্পর্কে আমি এখন কিছু বলতে পারছি না।’ ক্রীড়া অধিশাখা-২-এর কর্মকর্তা মোহাম্মদ সিরাজুল হক বলছিলেন, ‘ই-স্পোর্টসের জন্য একটা কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে। চলতি মাসে এ কমিটি প্রতিবেদন জমা দেবে। নীতিমালা তৈরি করে তারপর কার্যক্রম শুরু করার কথা।’ এ প্রসঙ্গে জানতে এনএসসি সচিব মো. আমিনুল ইসলামকে বার্তা পাঠানো হয়েছিল; কিন্তু গতকাল এনএসসির সচিব পদ থেকে গতকাল ইলেকট্রিসিটি জেনারেশন কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক পদে বদলির আদেশ হওয়া এ কর্মকর্তাও কোনো সাড়া দেননি।
মন্তব্য করুন