

ড্রেসিংরুম থেকে মুশফিকুর রহিম যখন সংবাদ সম্মেলনের উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন, ঠিক তখনই সংবাদকর্মীদের একটা অংশও পথে তাকে পেয়ে অভিনন্দন দিতে থাকেন। প্রায় দুইশ মিটার দূরত্বের পথ পেরোনোর সময় খুনসুটিতে মেতেছিলেন তিনি। দারুণ দিনে দারুণ মাইলফলক—রোমাঞ্চিতও অভিজ্ঞ এই ব্যাটার। ২০ মিনিটের পুরো সংবাদ সম্মেলনে তৃপ্তি-অতৃপ্তি, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সব প্রশ্নেরই উত্তর দিয়েছেন ৩৮ বছর বয়সী এই ব্যাটার। কালবেলার পাঠকদের জন্য চুম্বক অংশগুলো তুলে ধরা হলো।
শততম টেস্টেই সেঞ্চুরি
আলহামদুলিল্লাহ। এটা তো আমিও বিশ্বাস করতে পারি না যে, একজন বাংলাদেশি হিসেবে একশ টেস্ট খেলতে পারব। এটা সত্যিই অনেক বড় একটা অর্জন। আমার নাম বলেই নয়, যে কোনো ক্রিকেটার, যে কোনো দেশের জন্যই দারুণ গর্বের। নিশ্চিতভাবেই ভালো লাগছে যে, সেই ব্যক্তিটা আমি হতে পেরেছি। আমার ওপর দায়িত্বটাও অন্যরকম ছিল। আর যে কটা ম্যাচ যেভাবেই খেলতে পারি, ইনশাআল্লাহ চেষ্টা থাকবে যেন সেটার প্রতিফলন দিতে পারি মাঠে। সঙ্গে সঙ্গে ড্রেসিং রুমে আমি যাওয়ার পরে এমন (শততম টেস্ট খেলার মতো) যেন এক-দুইটা খেলোয়াড় রেখে যেতে পারি।
গত কয়েকদিনের অভিজ্ঞতা
একশ টেস্ট অনেক বড় কিছু। অভিজ্ঞতা অর্জনের চেষ্টা করেছি, ঠান্ডা থাকার চেষ্টা করেছি। সত্যি বলতে বিসিবিকে ধন্যবাদ আমাকে ম্যাচের দিন সকালে এমন সম্মান দেওয়ার জন্য। এটা সত্যিই দারুণ অনুভূতি। আমি মনে করি যে, এমন রীতি থাকলে যে কোনো খেলোয়াড়ের জন্যই বাড়তি একটা অনুপ্রেরণা হবে। এখন আমার মনে হয় যে বাংলাদেশের অনেক খেলোয়াড় ভাবে যে, একশ টেস্ট খেলতে পারি। এই স্বপ্ন দেখাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
পুরো ক্যারিয়ার নিয়ে
সবমিলিয়ে যদি বলেন, আমি মনে করি, আপনি যখন তরুণ হিসেবে কোনো ফরম্যাট শুরু করবেন; আপনি সব সময়ই যে ভালো খেলতে থাকবেন, এমন না। কিন্তু যেভাবে আমি আমার উন্নতি করেছি, দিনের পর দিন কিংবা বছরের পর বছর—এটাই আমার ক্যারিয়ার হাইলাইট। আমি এখনো শেখার চেষ্টা করছি। কারণ, গত ২০ বছরে কখনোই আমি ৯৯ রানে অপরাজিত থেকে দিন শেষ করিনি, সুতরাং এটাও আমার জন্য নতুন অভিজ্ঞতা।
শততম টেস্টের পরিকল্পনা
আমার চাওয়া যদি বলেন… আসলে প্রতিটি ম্যাচেই আমার চেষ্টা থাকে যেন সেরা এফোর্ট দিতে পারি এবং দলের জয়ে যেন আমার অবদান বেশি থাকে। গতকালকের (পরশু) ম্যাচের শুরুতে আমি একটা কথা বলেছিলাম আমার একশ হোক কিংবা যে কারোর—সবকিছুর আগে দল। আমি এটাই বলেছি যে, বাংলাদেশের জন্য আমি মুশফিকুর রহিম একটা সমুদ্রের
দু-একটা ফোঁটা পানির মতোই। বাংলাদেশ সবার আগে, দল সবার আগে। এই বার্তা দিতে চেয়েছি যে আমার জন্য না, দেশের জন্য খেলি।
পরিবারের অবদান
সবচেয়ে বড় আত্মত্যাগ আমার স্ত্রী করেছে। আমাকে সমর্থন দিয়েছে। আমি হয়তো বা অন্যদের তুলনায় বেশি অনুশীলন করি। আমার ঘরে এরকম একটা পরিবেশ না থাকলে কখনোই সম্ভব হতো না। আপনারা কজন জানেন, আমরা যৌথ পরিবারে বসবাস করি। দেখা যায়, আমার স্ত্রীর ওপর যে চাহিদা আছে এবং সবাইকে ওইভাবে ম্যানেজ করা। আমার এটা অনেক বড় আত্মত্যাগ।
একশ টেস্টের স্বপ্ন
না। সত্যি বলতে কখনোই আমার এই স্বপ্ন ছিল না যে আমি বাংলাদেশের হয়ে ১০০টা টেস্ট খেলব। কিন্তু এটা সত্যি, আমি এর আগেও অনেকবার বলেছি যে, যদি তিনটা ফরম্যাটের মধ্যে কোনো একটা ফরম্যাট বেছে নিতে বলেন, টেস্ট ক্রিকেট আমার পুরো স্বপ্ন। আমি যতদিন পারব, চেষ্টা করব টেস্ট ক্রিকেট যেন খেলে যেতে পারি এবং সবার শেষে আমি টেস্ট ক্রিকেটটা ছাড়তে চাই—যেটা আমি এর আগেও বলেছি।
আর কতদূর
আপাতত এরপর তো মনে হয় চার মাসের বিরতি আছে। তারপর পাকিস্তানের সঙ্গে টেস্ট। যদি থাকি, ইনশাআল্লাহ তারপর খেলার ইচ্ছা আছে। এর বাইরে আর কোনো চিন্তা নেই। আমি ফিটনেস নিয়ে বলেন বা স্কিল সেট অনুযায়ী বলেন, আমি এখন যেখানে আছি, তাতে আমি কিছুটা খুশি। আবার বয়সের সঙ্গে আমাকে অবশ্যই আরও উন্নতি করতে হবে এবং সেই জায়গাটা আমি জানি, ইনশাল্লাহ সেভাবেই চেষ্টা করে যাব। বাংলাদেশের হয়ে প্রতিটি টেস্ট খেলা আমার জন্য অনেক বিশেষ। আশা থাকবে, যতটুকু অবদান রাখা যায় এবং যতদূর খেলা যায়, যতদিন পর্যন্ত আমার টিম ম্যানেজমেন্ট আমাকে চায় বা টিম চায় এবং আমি যেটা অনুভব করি নিজের ভেতর থেকে…হ্যাঁ, আমার দলের দরকার আছে যতদিন, ততদিন পর্যন্ত আমার খেলার ইচ্ছা আছে।
মন্তব্য করুন