ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের রাজনৈতিক নেতা, প্রভাবশালী আমলা, ব্যক্তির বিরুদ্ধে দুর্নীতি-অনিয়মের অনেক প্রমাণ উঠে এসেছিল দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কর্মকর্তা মো. শরীফ উদ্দিনের তদন্তে। দুর্নীতিবাজ প্রভাবশালীদের রোষানলে তখন চাকরি হারাতে হয়েছিল তাকে। তবে সরকার থেকে শুরু করে আমলা পর্যায়ে বদল হলেও এখনো বদলায়নি শরীফের ভাগ্য। গত ৭ আগস্ট দুদক বরাবরে দেওয়া আবেদনে চাকরি ফেরত চেয়েছিলেন তিনি। আবেদনের চার মাস পার হলেও এর কোনো সুরাহা হয়নি। চাকরি ফেরতের আশায় শরীফের দিন কাটছে সচিবালয়ের গেটের সামনে দাঁড়িয়ে।
জানা গেছে, উচ্চ আদালতে শরীফের দায়ের করা রিট পিটিশন এখনো শুনানি অবস্থায় রয়েছে। যদিও সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র বলছে শরীফকে পুনর্বহালের সিদ্ধান্ত দুদকের ওপর ছেড়ে দিয়েছেন উচ্চ আদালত। অন্যদিকে দুদকে পুনর্বহাল ও চাকরির সিনিয়রটি ফিরে পেতে বৈষম্যের শিকার হওয়া জনপ্রশাসন কমিটির কাছে আবেদন করেন শরীফ। সেটিও এখনো ঝুলে আছে।
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আখতার কবির চৌধুরী বলেন, ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত শরীফের সব সুযোগ-সুবিধাসহ নিয়মতান্ত্রিকভাবে পাবেন বলে আশা করছি।
দুদক ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত মোট ৭ বছর ৪ মাস দুদকে উপসহকারী পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন শরীফ। মেয়াদকালে দেশের জনগুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর অনেক বিষয়ে তদন্ত করেন। তার তদন্তে উঠে আসে কক্সবাজার এল এ শাখার কোটি টাকার দুর্নীতি। যেখানে কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক পৌর মেয়র মুজিবুর রহমান, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ধর্মবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সিরাজুম মোস্তফাসহ ক্ষমতাসীন দলের অনেক বড় নেতা এবং কক্সবাজারের জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে আওয়ামী আস্থাভাজন ব্যক্তিদের জড়িত থাকার প্রমাণ প্রতিবেদনে উঠে আসে। মূলত ওই তদন্ত বাধাগ্রস্ত করতে কক্সবাজারের বাসিন্দা এবং সাবেক সিনিয়র সচিব হেলাল উদ্দিন আহমদের ইন্ধনে শরীফকে চাকরিচ্যুত করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।
দুদক থেকে চাকরি হারানো ভুক্তভোগী শরীফ উদ্দিন কালবেলাকে বলেন, ৭ আগস্ট দুদক সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ সচিবের কাছে চাকরি ফিরে পেতে আবেদন করেছি। তিনি আশ্বস্ত করেছেন। আমি বৈষম্য ও অন্যায়ের শিকার, আমার চাকরি ফেরত চাই। আশা করছি এখন ন্যায়বিচার পাব।’
দুদকের সাবেক মহাপরিচালক মাইদুল ইসলাম বলেন, চাকরি ফেরতের যে আবেদন দেওয়া হয়েছে, সেটি কমিশন চাইলে আইনগতভাবে পুনর্বিবেচনা করতে পারে। হাইকোর্টের রায়েও একটা আদেশ দেওয়া হয়েছিল। ১২ দফা নির্দেশনা ছিল মনে হয়। সেই ১২ দফা নির্দেশনা পালন হয়নি, সুবিচার হয়নি, ন্যায়ানুগ আচরণ হয়নি। তবে বিনা নোটিশে বরখাস্ত করা হয়েছিল শরীফকে। সেই বরখাস্ত কমিশন বাতিল করে চাকরিতে পুনর্বহাল করতে পারে। যেহেতু ৫৪ বিধি অনুযায়ী হাইকোর্টের ১২ দফা আদেশ প্রতিপালন করেনি।