রহমতের চাদরে ঢাকা মাহে রমজানে ইবাদতের পাশাপাশি এ মাসের পবিত্রতা রক্ষা করা জরুরি। কেবল উপোস থাকলেই রোজার মাহাত্ম্য আদায় হয় না; রোজাদারকে বিরত থাকতে হয় সব ধরনের গুনাহ থেকেও। রমজানের বিশেষ আমল রোজা পালন ও তারাবি নামাজ আদায়। দুটি আমলই একনিষ্ঠ মনে, সঠিক পদ্ধতিতে আদায় করতে হবে। তা ছাড়া রমজানে নিয়মিত ফরজ নামাজ আদায়ে অবহেলার কোনো সুযোগ নেই। পুরুষরা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ মসজিদে জামাতের সঙ্গে আদায় করবে। নামাজের সময় বাইরে ঘোরাঘুরি, আড্ডা, গল্প ও অন্যান্য কর্মব্যস্ততা থেকে বিরত থাকবে।
শরিয়তসম্মত কোনো কারণে রমজানে পানাহার করতে হলে প্রকাশ্যে না করা। মুসাফিরের জন্য রোজা না রাখার অবকাশ থাকলেও কোনো মুসাফির যদি দিনের বেলা মুকিম (সফর থেকে বাড়ি ফিরে) হয়, তাহলে তার কর্তব্য দিনের অবশিষ্ট সময় পানাহার থেকে বিরত থাকা। এতে তার রোজা আদায় হবে না, কিন্তু রোজার মর্যাদা রক্ষা হবে। তেমনি ঋতুবর্তী বা সন্তান প্রসবকারী নারী যদি রোজা অবস্থায় পবিত্র হয়, তাহলে দিনের বাকি অংশ পানাহার থেকে বিরত থাকবেন। তার জন্য এটাই রোজার পবিত্রতা রক্ষা করা হবে।
রমজানে দৃষ্টিকে সব ধরনের গুনাহ থেকে হেফাজত করা। পর-নারীদের প্রতি দৃষ্টি দেওয়া, অশ্লীল দৃশ্য দেখা, টিভি, ইউটিউব বা ফেসবুকে নাটক-সিনেমা দেখা থেকেও বিরত থাকা। একই সঙ্গে জবানের হেফাজত। অর্থাৎ মিথ্যা, গিবত-পরনিন্দা, অশ্লীল ও অহেতুক কথাবার্তা, ঝগড়া-বিবাদ থেকে দূরে থাকা। হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি রোজা রেখে মিথ্যাচার ও মন্দ কাজ করা পরিত্যাগ করেনি, তার পানাহার পরিত্যাগের কোনোই গুরুত্ব আল্লাহর কাছে নেই। আল্লাহতায়ালা তার পানাহার ত্যাগ করার কোনোই পরোয়া করেন না।’ (বোখারি: ১৮০৪)।
রমজানে নিজের কান সব ধরনের গুনাহের কাজ থেকে হেফাজত করা। যেমন গানবাদ্য, গিবত, পরনিন্দা ও অশ্লীল কথাবার্তা শোনা থেকেও বিরত থাকা। এ ছাড়া অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ যেমন হাত, পা ইত্যাদিকে গুনাহ ও খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখা। সর্বোপরি সব ধরনের গুনাহের কাজ থেকে বিরত থাকা। বিশেষভাবে যেসব গুনাহের কাজ প্রকাশ্যে ও ব্যাপকভাবে করা হয়, সেগুলো থেকে নিজে বিরত থাকা, অন্যকেও বিরত রাখা।
দিনের বেলা হোটেল-রেস্তোরাঁয় পানাহার বন্ধ রাখা। সেহরি ও ইফতারে হারাম আহার পরিহার করা। ইমাম গাজ্জালি (রহ.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি সারা দিন রোজা রেখে হারাম সম্পদ দ্বারা ইফতার করল, সে যেন একটি অট্টালিকা নির্মাণ করল এবং একটি শহর ধূলিসাৎ করে দিল।’
রমজানের পবিত্রতা রক্ষায় ব্যবসায়ীদেরও করণীয় আছে। তাদের উচিত দ্রব্যমূল্য না বাড়িয়ে এ মাসকে দরিদ্র ও মধ্যবিত্তের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখা। অন্তত মুসলিম ব্যবসায়ী ও ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের তো কিছুটা ‘ত্যাগ’ স্বীকার করে হলেও এদিকে নজর দেওয়া জরুরি। আল্লাহতায়ালা রমজানের পবিত্রতা ও এর মর্যাদা অক্ষুণ্ন রেখে রোজার যথাযথ হক আদায় করার তওফিক দান করুন।
লেখক: মুহাদ্দিস ও ইসলামী চিন্তাবিদ
মন্তব্য করুন