ঢাকা কাস্টম হাউস দিয়ে ই-সিগারেটে ব্যবহৃত সরঞ্জাম ও সানগ্লাস নিয়ে আসে এমএমএস স্টার গ্লোবাল নামে এক আমদানিকারক। প্রায় কোটি টাকা দামের এসব পণ্যের মূল্য ঘোষণা দিয়েছে মাত্র তিন হাজার ডলার বা বাংলাদেশি মুদ্রায় মাত্র সাড়ে তিন লাখ টাকা। মূলত মোটা অঙ্কের শুল্ক ফাঁকি দিতে কোটি টাকার পণ্য চালানে ৬৭ লাখ টাকা শুল্ক ফাঁকির প্রমাণ মিলেছে। এর আগেও প্রায় আট কোটি টাকার ভেপের চালান আটক হয়েছে। এরকম দু-একটি ঘটনা সামনে এলেও অনেক বড় বড় ঘটনা আড়ালেই রয়ে যাচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। গতকাল মঙ্গলবারও একটি ভেপের চালান সন্দেহে কায়িক পরীক্ষা চলছে। তবে ই-সিগারেটের পার্টসের বিষয়টি কর্মকর্তারা না বুঝে শুল্কায়ন করেছিলেন বলেও জানিয়েছেন ঢাকা কাস্টম হাউসের কমিশনার।
ঢাকা কাস্টম হাউস সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর আজমপুরের আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান এমএমএস স্টার গ্লোবাল হংকংয়ের গ্রিন মিল ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি কোম্পানি থেকে সানগ্লাস ও
ই-সিগারেটের পার্টস আমদানি করে। সি-৩১২৫৭৩ নম্বর বিল অব এন্ট্রির মাধ্যমে ঢাকা কাস্টম হাউস দিয়ে খালাসের প্রক্রিয়া শুরু করে। সংশ্লিষ্ট শাখার কর্মকর্তারা পরীক্ষণ ও শুল্কায়ন করেন। খালাসের সব প্রক্রিয়া শেষে কমিশনার কর্তৃক পণ্য চালানটি আটকে দেওয়া হয়। আর আটকের পর বেরিয়ে আসে ৩৬০ কেজি ই-সিগারেটের পার্টস। শুধু ই-সিগারেটের পার্টসই নয়, এই চালানে মেলে ঘোষণার বাইরে ৭৩ হাজার ৪০০ পিস উচ্চমূল্যের সানগ্লাস। এ ছাড়া মেলে ইলেকট্রিক ল্যাম্প। আর আমদানিকারক ও সিঅ্যান্ডএফের যোগসাজশে এই শুল্ক ফাঁকির চেষ্টা করা হয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে ঢাকা কাস্টম হাউসের মামলায়। তবে এই পণ্যচালানের শুল্কায়ন প্রক্রিয়া শেষ করার পর আটক করা হলেও কর্মকর্তাদের কোনো দোষ দেখছেন না সংশ্লিষ্ট কমিশনার।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা কাস্টম হাউসের কমিশনার মুহাম্মদ জাকির হোসেন কালবেলাকে বলেন, আমদানি করা পণ্য চালানে ই-সিগারেটের পার্টস ও সানগ্লাস ছিল। এগুলো জানার পরও কর্মকর্তারা কীভাবে শুল্কায়ন প্রক্রিয়া শেষ করেন, এ বিষয়ে এই কমিশনার বলেন, এখানে কর্মকর্তাদের কোনো দোষ ছিল না। আসলে এই চালানে ই-সিগারেটের পার্টস যে ছিল, তারা বুঝতে পারেননি। সানগ্লাসের বিষয়ে তিনি বলেন, সানগ্লাস আসলে বিযুক্ত অবস্থায় আনা হয়েছে। সব মিলে কর্মকর্তারা ভুল করেছেন। ইচ্ছাকৃত করলে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হতো বলে জানান কমিশনার জাকির হোসেন।
সূত্র আরও জানায়, ঢাকা কাস্টম হাউস গত কয়েক মাসে প্রায় দশ কোটি টাকার ইলেকট্রনিক্স সিগারেট আটক করেছে। সরকারও ই-সিগারেট নিয়ে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। এর আগে ঢাকা কাস্টম হাউস দিয়ে ভোগ্যপণ্যের ঘোষণায় আমদানি হয় বিদেশি সিগারেট। শুল্ক কর্মকর্তাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে আসে ৩ লাখ ৩০ হাজার সিগারেট। এ ছাড়া ই-সিগারেটের মূল উপাদান ভেপের প্রায় ৮ কোটি টাকার চালান আটক হয়। এসব বিষয়ে কাস্টম হাউসের কার্যকর পদক্ষেপ না থাকায় ধরাছোঁয়ার বাইরে অসাধু আমদানিকারকরা। এতে প্রতিনিয়ত সরকারের মোটা অঙ্কের রাজস্ব ফাঁকি হচ্ছে। এ ঘটনাটি ঘটে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি গালফ এয়ারের ০৭২৭৩২৩৮৬৬৪ এয়ারওয়ে বিলের মাধ্যমে। এই চালানটি নিয়ে আসে ঢাকার পূর্ব শেওড়াপাড়ার মাটি বিজ ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি প্রতিষ্ঠান। এর দেড় মাস পার না হতেই আবার এলো ই-সিগারেটের পার্টস। অভিযোগ রয়েছে, গোটা কয়েক পণ্য চালান ধরা পড়লেও অধরা রয়ে যাচ্ছে অনেক পণ্য চালান। আর গত ঈদে অবাধে পণ্য চালান ছাড়করণের অভিযোগও রয়েছে, যার কারণে অসাধু আমদানিকারকরা ঢাকা কাস্টম হাউসে বেশ সক্রিয় বলেও অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের। এর আগে আকিজ সিমেন্টের পণ্য চালান নিয়ে ঘটে যায় তুঘলকি কাণ্ড। প্রতিষ্ঠানটি শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে স্পেয়ার্স পার্স ফর মোবাইল ক্রেনসহ প্রায় ১৭ ধরনের একটি পণ্য চালান শুল্কায়ন প্রক্রিয়া শুরু করে। আইজিএমে পণ্য চালানটির ভ্যালু ঘোষণা করা হয় প্রায় ৬০ হাজার ইউরো। ঘোষণা দেওয়া হয় ৫৩ হাজার ৬৯২ ইউরো। এসব ছোটখাটো শুল্ক ফাঁকির ঘটনা হরহামেশা ঢাকা কাস্টম হাউসে ঘটছে বলেও বিস্তর অভিযোগ রয়েছে।
মন্তব্য করুন