ইবি প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৬ জুলাই ২০২৫, ১২:০০ এএম
আপডেট : ০৬ জুলাই ২০২৫, ০৭:৫৫ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ছাত্রদল নেতা বলে কথা!

ইবিতে মাস্টার্সে পুনঃভর্তি
ইবি শাখা ছাত্রদল নেতা আনোয়ার পারভেজ। ছবি : সংগৃহীত
ইবি শাখা ছাত্রদল নেতা আনোয়ার পারভেজ। ছবি : সংগৃহীত

একাডেমিক অর্ডিন্যান্সের পুনঃভর্তির ধারা লঙ্ঘন করে ছয় ছাত্রদল নেতাকে নিয়মিত মাস্টার্সে (স্নাতকোত্তর) পুনঃভর্তি করিয়েছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) কর্তৃপক্ষ। অন্যদিকে যৌক্তিক কারণ থাকলেও পুনঃভর্তির সুযোগ দেওয়া হয়নি একাধিক সাধারণ শিক্ষার্থীকে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ভাষ্য, রাজনৈতিক প্রতিবন্ধকতার কারণে শিক্ষাজীবন শেষ করতে না পারা শিক্ষার্থীদের শুধু নিয়মিত মাস্টার্সে ভর্তির সুযোগ দেওয়া হয়েছে। অবশ্য এ ধরনের কোনো সমস্যা না থাকা সত্ত্বেও আনোয়ার পারভেজ নামে এক ছাত্রদল নেতাকে পুনঃভর্তির সুযোগ দিয়েছে প্রশাসন। এমন পরিস্থিতিতে ভুক্তভোগীরা প্রশ্ন তুলে বলেছেন, ছাত্রদল নেতা বলে বিশেষ বিবেচনা, তবে অন্যদের ক্ষেত্রে কেন বঞ্চনা।

একাডেমিক অর্ডিন্যান্সের পুনঃভর্তির ধারা অনুযায়ী, পরপর দুই বছর কোর্স সম্পন্ন করতে ব্যর্থ হলে নিয়মিত মাস্টার্সে পুনঃভর্তির সুযোগ পাবেন না শিক্ষার্থীরা। তবে এই নিয়ম লঙ্ঘন করে সম্প্রতি ছাত্রদলের ছয় নেতাকে ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের নিয়মিত মাস্টার্সে পুনঃভর্তি নিয়েছে প্রশাসন। কর্তৃপক্ষ বলছে, ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রাজনৈতিক প্রতিবন্ধকতার কারণে শিক্ষাজীবন শেষ করতে পারেননি এমন শিক্ষার্থীদের নিয়মিত মাস্টার্সে ভর্তির সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। একইভাবে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়েও বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েছে প্রশাসন। অর্ডিন্যান্সের বাইরে শুধুমাত্র রাজনৈতিক প্রতিবন্ধকতার বিষয়টিকে বিবেচনায় নিয়ে তাদের ভর্তি নেওয়া হয়েছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন রাজনৈতিক বিবেচনার কথা বললেও ভর্তি হওয়া সবাই রাজনৈতিক কারণ দেখিয়ে পুনঃভর্তির আবেদন করেননি।

ইবি শাখা ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আনোয়ার পারভেজ রাজনৈতিক নয়, পারিবারিক কারণ দেখিয়ে পুনঃভর্তি হয়েছেন বলে জানা গেছে। তিনি যে পারিবারিক কারণ দেখিয়েছেন, সেটিও মিথ্যা বলে জানা গেছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ইবি শাখা ছাত্রদলের নতুন কমিটিতে পদ পেতে বিভিন্ন মাধ্যমে তদবির করছেন আনোয়ার। তাই ছাত্রত্ব টিকিয়ে রাখতেই নিয়মবহির্ভূতভাবে ভর্তি হয়েছেন তিনি।

জানা যায়, ভর্তি হওয়া অন্য ছাত্রদল নেতাদের প্রকৃত রাজনৈতিক সমস্যা থাকলেও আনোয়ার পারভেজের কোনো পারিবারিক ও রাজনৈতিক সমস্যা ছিল না। আওয়ামী লীগ শাসনামলে তাকে ক্যাম্পাসে অবাধে চলাচল, আড্ডা দেওয়াসহ অন্যান্য কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করতে দেখা যেত। বিভিন্ন সময় আন্তঃবিভাগ ও আন্তঃহল ফুটবল প্রতিযোগিতায়ও অংশগ্রহণ করেন তিনি। রাজনৈতিক প্রতিবন্ধকতার কারণে যেখানে অনেক আগেই হল ছাড়তে হয়েছিল ছাত্রদলের অন্য নেতাকর্মীদের, সেখানে ২০১২ সাল থেকে ২০১৭ সালের ১৯ নভেম্বর পর্যন্ত তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলেই থাকতেন। এরপর আনোয়ার পারভেজ হলে থাকার সুযোগ না পেলেও তাকে ক্যাম্পাসে চলাফেরা, আড্ডা দেওয়াসহ আন্তঃবিভাগ ও আন্তঃহল ফুটবল টুর্নামেন্টে অংশ নিতে দেখা যেত।

একাডেমিক শাখা ও বিভাগ সূত্রে জানা যায়, আনোয়ার পারভেজ পরিসংখ্যান বিভাগের স্নাতক (অনার্স) ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। অনার্স শেষে ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষে একই বিভাগে মাস্টার্সে ভর্তি হন। তবে তখন কোর্স সম্পন্ন করতে পারেননি তিনি। ফলে ৫ আগস্টের পর পারিবারিক সমস্যার কারণে কোর্স সম্পন্ন করতে পারেননি উল্লেখ করে বিভাগের সভাপতির মাধ্যমে রেজিস্ট্রারের কাছে পুনঃভর্তির আবেদন করেন আনোয়ার। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিভাগের একাডেমিক কমিটির ১৯৩তম সভায় তাকে বিশেষ বিবেচনায় পুনঃভর্তির সুপারিশ করা হয়। পরে সেটি একাডেমিক শাখায় গেলে একাডেমিক অর্ডিন্যান্সের পুনঃভর্তির ধারা অনুযায়ী এমএসসি ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে পুনঃভর্তির সুযোগ নেই উল্লেখ করে পরবর্তী পদক্ষেপের জন্য উপাচার্য বরাবর পাঠানো হয়। এতে প্রথমে উপাচার্য পুনঃভর্তির অনুমোদন দিলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্ডিন্যান্স বহির্ভূত হওয়ায় পরে তা স্থগিত করে দেন।

পরে পারভেজসহ অন্য পাঁচ ছাত্রদল নেতার পুনঃভর্তির বিষয়টি একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় উঠলে, সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিষয়টি যাচাই-বাছাইয়ের জন্য কমিটি গঠন করা হয়। পরে কমিটির পক্ষ থেকে তাদের ভর্তির জন্য সুপারিশ করা হলে সিন্ডিকেটে তা অনুমোদন হয়।

রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মনজুরুল হক বলেন, ‘আবেদনের সময় আনোয়ার পারভেজ রাজনৈতিক কারণ দেখিয়েছিল। তবে প্রকৃত বিষয় যাচাই-বাছাই কমিটি বলতে পারবে। তারা আমাদের যেভাবে সুপারিশ করেছে, আমরা সে অনুযায়ী কাজ করেছি।’

যাচাই-বাছাই কমিটির আহ্বায়ক ড. নজিবুল হক বলেন, ‘ওই সময় আনোয়ার পারভেজের সমস্যা থাকায় সে পরীক্ষা দিতে পারেনি। মূলত একাডেমিক কাউন্সিলের আলোকেই আমরা সুপারিশ করেছি।’ তবে আনোয়ার পারভেজকে মাস্টার্সে পুনঃভর্তির সুযোগ দেওয়ায় ক্ষুব্ধ তার নিজ সংগঠন ইবি ছাত্রদলেরই অনেকে।

আনোয়ার পারভেজ বলেন, আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগগুলো ভিত্তিহীন। এদিকে লোকপ্রশাসন বিভাগের অং খুমী নামে এক শিক্ষার্থী জানান, পার্বত্য চট্টগ্রামে বাড়ি হওয়ায় ও রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে তার দুবার গ্যাপ পড়েছিল। পরে তিনি পুনঃভর্তির আবেদন করলে তা নাকচ করে দেয় কর্তৃপক্ষ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহীনুজ্জামান বলেন, বিষয়গুলো মূলত একাডেমিক কাউন্সিলেই সিদ্ধান্ত হয়। উপাচার্য ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেন, ‘একাডেমিক কাউন্সিলে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আমাকে ফোন দিয়েছেন কেন?’

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বিশ্ব শিশু দিবস আজ 

এনসিপি শাপলা প্রতীক নিয়েই নির্বাচনে অংশ নেবে : সারজিস 

ঢাকার তাপমাত্রা নিয়ে সুখবর দিল আবহাওয়া অফিস

গাজা যুদ্ধ বন্ধের দাবিতে ইউরোপজুড়ে লাখো মানুষের বিক্ষোভ

রাজধানীতে আজ কোথায় কী

ঘুম থেকে ওঠার পরই কি সারা শরীরে ব্যথা হয়, ভয়াবহ রোগের লক্ষণ নয় তো?

আকিজ গ্রুপে চাকরি, পাবেন গ্র্যাচুইটিও

ট্রাফিক জরিমানার নামে ভুয়া বার্তা পাঠিয়ে প্রতারণা, ডিএমপির সতর্কতা

আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটালেন নদীপাড়ের মানুষ

টিভিতে আজকের যত যত খেলা

১০

সোমবার রাজধানীর যেসব মার্কেট বন্ধ

১১

তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে, ডিমলার বন্যা রক্ষা বাঁধ ঝুঁকিতে

১২

৬ অক্টোবর : আজকের নামাজের সময়সূচি

১৩

তিস্তার পানির তোড়ে ভেঙে যেতে পারে ফ্লাইড বাইপাস সড়কটি

১৪

বজ্রপাতে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর মৃত্যু

১৫

দুই বাংলাদেশি যুবককে ফেরত দিল বিএসএফ

১৬

বিএনপির প্রতিটি নেতাকর্মী জনগণের পাশে রয়েছে : নীরব

১৭

শুভ প্রবারণা পূর্ণিমা আজ

১৮

ছক্কার ঝড় তুলে ম্যাচসেরা সাইফের মুখে আত্মবিশ্বাসের কথা

১৯

আফগানদের হোয়াইটওয়াশ করে তৃপ্ত জাকের

২০
X