রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কের বিভাজকে প্রায় সোয়া চার কোটি টাকা ব্যয়ে ঘাস রোপণ, গাছ লাগানো এবং এসবের পরিচর্যার প্রকল্প হাতে নিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। যার মূল লক্ষ্য হলো ঢাকার তাপমাত্রা কমানো, বাতাসে অক্সিজেনের পরিমাণ বৃদ্ধি, ধুলাবালি কমানো এবং সড়কের সৌন্দর্য বাড়ানো। সচিবালয়, বঙ্গভবন, মগবাজার মোড়, নীলক্ষেত, ধানমন্ডি-২৭, পান্থপথসহ প্রায় ৩০ কিলোমিটার সড়কের মিডিয়ান ও বিভাজকে চলছে এ কাজ।
‘জিরো সয়েল’ নামে এ প্রকল্পের আওতায় ঢাকা মহানগরীর ধুলা ও বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে উন্মুক্ত বা খোলা মাটি ঢেকে ঘাস, লতা ও গাছ লাগানো হচ্ছে। এতে খোলা মাটি থেকে ধুলা ও ধূলিকণা ওড়া বন্ধ হয়ে নগরীর পরিবেশ সবুজ ও নির্মল রাখা সম্ভব হবে বলে প্রত্যাশা ডিএসসিসি কর্তৃপক্ষের। জিরো সয়েল প্রকল্পের আওতায় সড়কের মিডিয়ানে প্রয়োজন অনুযায়ী বারমুডা ঘাস ও বিভিন্ন ধরনের ফুলগাছ রোপণ করা হচ্ছে। রোপিত গাছের মধ্যে রয়েছে রঙ্গন, টগর, জবা, চেরি, রাধাচূড়া, সিজিয়াম, মুসেন্ডা, টিকুমা, রক্তকরবী, চায়না টগর ও রংচিতা। ডিএসসিসি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, প্রথম ধাপে ১ কোটি ৫৫ লাখ টাকার কাজ চলমান রয়েছে, যা তিনটি প্যাকেজে বাস্তবায়িত হচ্ছে। দ্বিতীয় ধাপে ২ কোটি ৬২ লাখ টাকার কাজের দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে, যা আরও তিনটি প্যাকেজে বাস্তবায়ন করা হবে।
সরেজমিন দেখা গেছে, সচিবালয়, আব্দুল গণি রোড, বঙ্গভবন, সাতমসজিদ সড়ক ও ধানমন্ডি-২৭-এর সড়ক বিভাজকের মাটি উন্নয়নের কাজ সম্পন্ন হয়ে ঘাস ও বিভিন্ন ধরনের গাছ রোপণের কাজও প্রায় শেষের পথে। ডিএসসিসি জানিয়েছে, মাটি প্রস্তুতের জন্য জৈব সারসহ অন্যান্য সার ব্যবহার করা হচ্ছে এবং গাছগুলো যাতে নষ্ট না হয় তার জন্য বাঁশের বেড়া দেওয়া হচ্ছে।
প্রকল্পের আওতায় নীলক্ষেত মোড় থেকে ধানমন্ডি-২৭ পর্যন্ত, পান্থপথ সিগন্যাল থেকে মিরপুর রোড এবং সাতমসজিদ সড়ক ও শহীদ ফারহান ফাইয়াজ রোডসহ ৬.৪২ কিলোমিটার এলাকায় কাজ চলছে। এ ছাড়া বঙ্গবাজার মোড় থেকে শিক্ষা ভবন, কদমফুল ফোয়ারা থেকে শাহবাগ এবং শহীদ ক্যাপ্টেন মনসুর আলী সরণি থেকে মগবাজার মোড় পর্যন্ত অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সড়কেও চলছে সবুজায়নের কাজ।
একইভাবে বন অধিদপ্তর রাজধানীর দক্ষিণ সিটির বিভিন্ন এলাকায় ঘাস ও গাছের পরিচর্যায় কাজ করছে, যার মধ্যে রয়েছে চানখাঁরপুল থেকে বকশীবাজার হয়ে পলাশীর মোড়, আজিমপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে এতিমখানা মোড়, নিলক্ষেত রোড মিডিয়ান (গণতন্ত্র তোরণ থেকে নিউমার্কেট বটতলা) ও জহির রায়হান রোড, ধানমন্ডি ১০/এ ও ধানমন্ডির বিভিন্ন সড়ক এবং আজিমপুর রোড।
ডিএসসিসির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী খাইরুল বাকের কালবেলাকে বলেন, ‘এই প্রকল্পের মাধ্যমে ঢাকার সড়কগুলো পরিবেশবান্ধব হবে এবং যাতায়াতকারী মানুষ সুন্দর, পরিচ্ছন্ন ও প্রাকৃতিক পরিবেশে চলাচল করতে পারবে। রাস্তার মিডিয়ানের উপযোগী গাছ লাগানো হবে, যাতে বাতাসে অক্সিজেনের পরিমাণ বাড়ে এবং শহরের সৌন্দর্য আরও বৃদ্ধি পায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ প্রকল্পের মাধ্যমে শহরের বায়ুদূষণ হ্রাস, তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ ও শহরের চেহারার সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে। এ উদ্যোগ রাজধানীর পরিবেশ সচেতন নাগরিকদের জন্য ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে এবং শহরের সড়কগুলোর ল্যান্ডস্কেপকে আরও দৃষ্টিনন্দন করবে।’
মন্তব্য করুন