বাংলাদেশের আন্ডারগ্র্যাজুয়েট এমবিবিএস মেডিকেল শিক্ষায় সাইকিয়াট্রির ক্লাস বণ্টন, প্রশিক্ষণ, এটাচমেন্ট এবং মূল্যায়নে মান বণ্টন আন্তর্জাতিক মানের তুলনায় সীমিত। এটি আমাদের চিকিৎসা কারিকুলামের একটি দুর্বলতার ইঙ্গিত বহন করে।
ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন ফর মেডিকেল এডুকেশনের (ডব্লিউএফএমই) গ্লোবাল স্ট্যান্ডার্ডস স্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছে যে, আধুনিক চিকিৎসার লক্ষ্য কেবল রোগ নিরাময় নয়, বরং ব্যক্তি-কেন্দ্রিক চিকিৎসা পারসন সেন্টারড মেডিসিন (পিসিএম) নিশ্চিত করা। যেখানে রোগীর শারীরিক, মানসিক, সামাজিক এবং আচরণগত চাহিদার সমন্বিত যত্ন অন্তর্ভুক্ত ।
সাইকিয়াট্রিতে অপর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা শনাক্ত ও পরিচালনায় দক্ষতা অর্জনে সীমাবদ্ধতা সৃষ্টি করে। এটি ব্যক্তি-কেন্দ্রিক চিকিৎসা বাস্তবায়নের পথে প্রধান বাধা (Karle, 2010, PMC2834898)।
সাইকিয়াট্রি শুধুই একটি বিশেষায়িত শাখা নয়
সাইকিয়াট্রি কেবল একটি বিশেষায়িত বিভাগ নয়; এটি সার্বিক রোগী যত্নের একটি অবিচ্ছেদ্য স্তম্ভ, যা রোগ প্রতিরোধ, পুনর্বাসন এবং স্বাস্থ্য উন্নয়নের সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত। ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন ফর মেডিকেল এডুকেশনের স্ট্যান্ডার্ডস অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের মনোবিজ্ঞান, সাইকিয়াট্রি এবং আচরণগত বিজ্ঞানের প্রশিক্ষণ অবশ্যক, যাতে তারা রোগীর সঙ্গে ‘ব্যক্তি থেকে ব্যক্তি’ (পারসন টু পারসন) সংযোগ স্থাপন এবং সহানুভূতির সঙ্গে তার পাশে দাঁড়াতে সক্ষম হন (WFME, 2003)।
ডব্লিউএফএমই স্বীকৃতি অর্জনের পথে বাধা
বাংলাদেশে সাইকিয়াট্রির অপর্যাপ্ত উপস্থিতি সরাসরি ডব্লিউএফএমইর অ্যাক্রেডিটেশন অর্জনের পথে প্রধান প্রতিবন্ধকতা। কারণ এই স্বীকৃতি শুধু বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান নয়; এটি মূল্যায়ন করে শিক্ষার পূর্ণাঙ্গ কাঠামো, শিক্ষার্থীদের পেশাগত দক্ষতা এবং সামাজিক দায়বদ্ধতার প্রমাণ। গুরুত্বপূর্ণ শাখায় ঘাটতি মানে শিক্ষার সামগ্রিক মান নিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রশ্ন উত্থাপন। এর ফলে মানসিক ও আচরণগত সমস্যায় আক্রান্ত রোগীর সেবায় চিকিৎসক সীমিত সক্ষমতা নিয়ে পেশাগত জীবন শুরু করবেন।
অগ্রযাত্রার জন্য অপরিহার্য পদক্ষেপ
সুতরাং, বাংলাদেশের আন্ডারগ্রাজুয়েট মেডিকেল কারিকুলামে সাইকিয়াট্রির গুরুত্ব বৃদ্ধি এবং মানসম্মত প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করা অপরিহার্য। এটি শুধুমাত্র ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন ফর মেডিকেল এডুকেশনের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জনের জন্য নয়, বরং সহানুভূতিশীল, দক্ষ ও সার্বিক স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্যও অপরিহার্য। শিক্ষার্থীর ব্যক্তিগত দক্ষতা, রোগীর প্রতি সহমর্মিতা এবং সার্বিক চিকিৎসার মান— এই তিনটি নির্ভর করে শক্তিশালী সাইকিয়াট্রিক শিক্ষাভিত্তির ওপর, যা পিসিএমের মূল লক্ষ্য পূরণে সহায়ক।
রেফারেন্স 1. WFME. (2003). Global Standards in Medical Education. Copenhagen. 2. Karle, H. (2010). World Federation for Medical Education perspectives on person-centered medicine. International Journal of Integrated Care, 10(Suppl), e007. PMCID: PMC2834898.
লেখক : ডা. সাঈদ এনাম সহযোগী অধ্যাপক, সাইকিয়াট্রি; সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ; ইন্টারন্যাশনাল ফেলো, আমেরিকান সাইকিয়াট্রিক অ্যাসোসিয়েশন; ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েট মেম্বার, রয়েল অস্ট্রেলিয়া নিউজিল্যান্ড কলেজ অব সাইকিয়াট্রিস্ট।
মন্তব্য করুন