ভারী বৃষ্টি ও উজানের পাহাড়ি ঢলে বগুড়ার যমুনা নদী এবং কুড়িগ্রামের কালজানী, ব্রহ্মপুত্র ও দুধকুমার নদী দিয়ে কয়েকদিন ধরে ভেসে আসছে হাজার হাজার গাছের গুঁড়ি। এসবের মধ্যে কাটা গাছ যেমন আছে, আছে শেকড়সহ উপড়ানো গাছও। নদী থেকে এসব গাছ তুলতে হুমড়ি খেয়ে পড়েছেন এলাকাবাসী। কেউ কেউ ‘চন্দন কাঠ’ হিসেবে এগুলো চড়া দামে বিক্রিরও চেষ্টা করেছেন। তবে স্থানীয়দের মধ্যে কৌতূহল, এসব গাছ কোথা থেকে বা কেন ভেসে আসছে।
এ নিয়ে পাউবো, স্থানীয় প্রশাসন ও বন বিভাগের কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা হয় কালবেলার। তারা জানিয়েছেন, এটি একটি সাধারণ ঘটনা। কয়েকদিন ধরেই ভারতে প্রবল বৃষ্টিপাত হচ্ছে। সেই বৃষ্টিপাতে পাহাড়ি ঢলে এসব গাছ বা গাছের গুঁড়ি ভেসে আসছে। তারা আরও বলেন, ভারতে যখন বৃষ্টি বা বন্যা হয়, তখন নদীগুলির পানির প্রবাহ দ্রুত বৃদ্ধি পায়। এতে গাছের ডাল বা গুঁড়ি ভেসে এসে নদী দিয়ে বাংলাদেশে চলে আসে। মূলত গাছগুলো নদীর তীর বা পাহাড়ি অঞ্চলে পড়ে থাকতে পারে এবং বন্যার পানি সেগুলোকে নিয়ে চলে যায়।
বিশেষজ্ঞরা আরও বলছেন, ভারতে কিছু অঞ্চলে কাঠ সংগ্রহের জন্য গাছ কাটা হয় এবং কখনো কখনো কাঠের গুঁড়ি নদীতে ফেলে দেওয়া হয়। এগুলো নদীর স্রোতের মাধ্যমে বাংলাদেশে চলে আসতে পারে। আরও একটি কারণের মধ্যে রয়েছে—নদী যে পথে প্রবাহিত হয়, তাতে স্থানান্তরিত হতে পারে গাছের গুঁড়ি বা অন্যান্য বনজ সম্পদ। নদীর স্রোত এবং তার পরিবেশগত অবস্থা গাছগুলোর গতিপথ নির্ধারণ করতে পারে। এর বাইরেও ভারতের কিছু নদী অঞ্চলে ভূমির অব্যবস্থাপনা এবং অতি ব্যবহার গাছের গুঁড়ি নদীতে পতিত হতে সহায়তা করে, যা পরে বাংলাদেশে চলে আসে। গাছ ভেসে আসার এ দৃশ্য শুধু বাংলাদেশে নয়, ভারতেও দেখা গেছে। পশ্চিমবঙ্গের গণমাধ্যম ‘দ্য ওয়াল’-এর এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহারের তোর্সা নদীতে হাজার হাজার গাছ ও গাছের গুঁড়ি ভেসে আসছে। সেখানকার বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, তোর্সায় ভেসে আসছে অগুনতি কাঠের গুঁড়ি। এমন দৃশ্য তারা এ
যাবৎকালের মধ্যে দেখেননি। এত কাঠ একসঙ্গে ভেসে আসতে দেখে বৃষ্টি উপেক্ষা করে নদীর পাড়ে ভিড় জমিয়েছেন এলাকার মানুষ। যার যতটা সাধ্য দড়ি বেঁধে কাঠ তোলার চেষ্টা করছেন। খরস্রোতা নদীও ভয় দেখাতে পারছে না তাদের।
কোচবিহারের বন দপ্তরের ধারণা, কয়েক কোটি টাকার গাছ নষ্ট হয়েছে বৃষ্টিতে। সেই কাঠই ভেসে আসছে নদীতে।
কয়েকদিন ধরে বগুড়ার ধুনট উপজেলার ভান্ডারবাড়ি ইউনিয়নের শহড়াবাড়ি থেকে মাধবডাঙা গ্রামের প্রায় ৭ কিলোমিটার এলাকায় নদীতীরবর্তী মানুষকে বিভিন্ন উপায়ে এসব কাঠ তীরে তুলতে দেখা গেছে। স্থানীয় বাসিন্দা আমজাদ হোসেন বলেন, ‘নদীর পানিতে যত দূর চোখ যায়, শুধু কাঠ আর কাঠ। যে যেভাবে পারছে গাছ তুলছে। কাঠের উৎস নিশ্চিত না হলেও ভারতের দিক থেকেই আসছে, এটা নিশ্চিত।’
উপজেলার ভান্ডারবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান বেলাল হোসেন বাবু বলেন, ‘নদীতীরবর্তী এলাকার শত শত নারী-পুরুষ কাঠের টুকরা সংগ্রহ করছেন। কাঠের টুকরাগুলো আসবাবপত্র তৈরির কোনো কাজে আসবে না। তবে স্থানীয়রা এগুলো খড়ি কিংবা জ্বালানি হিসেবে সংগ্রহ করছেন।’
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী হুমায়ুন কবির জানান, ভারতে অতিবৃষ্টির কারণে পাহাড়ি ঢলের সঙ্গে এসব কাঠ-খড় ভেসে আসছে। প্রতিবেশী দেশের বৃষ্টির কারণে বন্যায় পাহাড়ি এলাকা ডুবে গিয়ে তা ভেসে আসছে।
বগুড়ার সামাজিক বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মতলুবুর রহমান বলেন, প্রতিবেশী দেশ আসামে প্রচুর বৃষ্টিপাতের কারণে ধারণা করা হচ্ছে বনাঞ্চল ধসে অথবা বড় বড় সমিল পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় এসব কাঠ বা খড়ি ভেসে এসেছে। এর সঙ্গে চোরাচালানির মতো কোনো ঘটনা নেই বলেই মনে হয়।
কুড়িগ্রাম জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ফিরুজুল ইসলাম বলেন, বন্যা হলে উজান থেকে গাছের গুঁড়ি বা কাঠ-বাঁশ ভেসে আসতে দেখা যায়। তবে এগুলো চোরাচালানি গাছ নয়। দুর্যোগের কারণে এগুলো ঘটে থাকে।
এসব গাছকে ‘রক্ত চন্দন’ ভেবে কিছু মানুষ চড়াদামে বিক্রির চেষ্টা করছেন। এ বিষয়ে তিনি বলেন, রক্ত চন্দন কাঠ ভেসে আসার ঘটনায় বিভ্রান্ত হওয়ার সুযোগ নেই।
মন্তব্য করুন