রাত শুরুর আগেই আমার স্বপ্ন ভেঙে গেল। বিয়ের পিঁড়িতে বসার ভাগ্য হলো না। আমি কী নিয়ে বাঁচব। আমাকে তোমরা ওর সঙ্গে রেখে আসো। কাঁদতে কাঁদতে কথাগুলো বলছিলেন প্রিয়া (২০)। গতকাল রাজবাড়ী সদর উপজেলার খানখানাপুর ইউনিয়নের কদমতলা এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত সাইফুল ইসলাম সুমনের বাড়িতে এভাবেই কাঁদতে দেখা যায় প্রিয়াকে। শুক্রবার প্রিয়ার বিয়ে হওয়ার কথা ছিল সুমনের সঙ্গে। বিয়ে ঘিরে বাড়িতে সাজানো নানা রঙের ঝলকানি রঙিন বাতি; কিন্তু একটি দুর্ঘটনায় সব শেষ হয়ে গেছে।
ছোট দুই ভাইয়ের বিয়ের অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে ময়মনসিংহ থেকে এসেছিলেন বড় ভাই মনিরুল ইসলাম মমিন। বড় ভাইকে এগিয়ে আনতে জেলার দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে যান সুমন। মোটরসাইকেলে ফেরার পথে বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে দৌলতদিয়া-খুলনা মহাসড়কের মকবুলের দোকানের পাশে বালুবাহী ডাম্পট্রাকের চাপায় ঘটনাস্থলে মৃত্যু হয় মোমিনের। স্থানীয় হাসপাতালে নেওয়ার পর সুমনও মারা যান। নিহতরা খানখানাপুর এলাকার মোকছেদ আলী সরদারের ছেলে। নিহতদের বাড়ি গিয়ে কথা হয় স্বজনদের সঙ্গে। তারা কালবেলাকে বলেন, বেপরোয়া চালক। অবৈধ গাড়ি। মহাসড়ক দখল করে রেখেছে। দেখার কেউ নেই। তাই প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা।
সুমনের চাচাতো ভাই আবেদ সরদার বলেন, অপরাধীরা উপযুক্ত শাস্তি পাবে কি না সন্দেহ। আবার তারা অপরাধ করবে।
সুমন ও মমিনের খালু মো. হালিম বলেন, চোখের সামনে দুই ভাইয়ের লাশ দেখব, কখনো ভাবিনি। একটি দুর্ঘটনায় কতগুলো জীবন নষ্ট হয়ে গেল।
মমিনের স্ত্রী রিক্তা আক্তার বলেন, আমাদের একটি সন্তান আছে। এই শোক কীভাবে সইব, কীভাবে বাঁচব আমরা; শেষ দেখাও হলো না আমার সঙ্গে। এ জীবন তো চাইনি!
সুমনের মেজো ভাই শামিউল ইসলাম শামীমের স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস হ্যাপী বলেন, আমাদের বিয়ে হয়েছে এক বছর আগে। ছোট ভাইয়ের বিয়ে ও আমাদের অনুষ্ঠান একসঙ্গে হওয়ার কথা ছিল।
শামিউল ইসলাম শামীম বলেন, দুর্ঘটনার বিষয়ে হাইওয়ে থানায় অভিযোগ করেছি। আগামীকাল নিজেদের বাড়িতে বাদ জোহর ভাইদের জন্য দোয়ার আয়োজন করা হয়েছে।
সুমনের বাবা মোকশেদ সরদার বলেন, তিন ছেলের মধ্যে দুজনই নেই। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত চলে গায়েহলুদের অনুষ্ঠান। বড় ভাই মমিনকে এগিয়ে আনতে সুমন যে যাবে, আমাকে একটিবারও বলেনি। কীভাবে ওদের ছাড়া বাঁচব। রাজবাড়ী আহলাদীপুর হাইওয়ে থানার ওসি আব্দুল হালিম বলেন, এ ঘটনায় ডাম্পট্রাক আটক করা হয়েছে। তবে চালক ও সহকারী পালিয়েছে। থানায় মামলা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে পুলিশ কাজ করছে।