কেউ সচিব, কেউ উপসচিব, কেউ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বা সেনাবাহিনীর কর্নেল। মূলত তারা গ্রামের বেকার ছেলেমেয়েদের কাছে এসব পরিচয়ে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণা করতেন। টাকার বিনিময়ে চাকরিপ্রত্যাশীদের হাতে তুলে দিতেন ভুয়া নিয়োগপত্র। এভাবে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিত চক্রটি। সরকারি বিভিন্ন অধিদপ্তরে চাকরির নামে অর্থ আত্মসাৎ করাকেই প্রধান পেশা হিসেবে নেন তারা। তদন্তে ভুয়া নিয়োগপত্র দেওয়া এমন ৩২ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
২০২০ সালের ৬ অক্টোবর সিআইডির উপপরিদর্শক সিরাজ উদ্দিন রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানায় মামলা করেন। মামলায় ছয়জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতপরিচয় ৭-৮ জনকে আসামি করা হয়। সম্প্রতি মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপপরিদর্শক এমদাদুল কবির আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন।
ভুয়া নিয়োগপত্র নিয়ে প্রতারিত ১৪ যুবক: চাকরিপ্রত্যাশী সজীবকে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে চাকরি দেওয়ার কথা বলে তার কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা নেয় আসামিরা। ভাইভা শেষে তাকে ওয়ার্ডবয় পদে ভুয়া নিয়োগপত্র দেওয়া হয়। আসাদুল হাবিবকে ডাচ-বাংলা ব্যাংকে চাকরির কথা বলে ১০ লাখ টাকা নেয় তারা। রতন মিয়াকে ভূমি অধিদপ্তরের অফিস সহকারী পদে ৯ লাখ টাকার বিনিময়ে চাকরির প্রস্তাব দিয়ে ঢাকায় আনা হয়। আল আমিনকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে ওয়ার্ড বয় পদে চাকরির কথা বলে ১০ লাখ টাকার বিনিময়ে ভুয়া নিয়োগপত্র দেওয়া হয়। আব্দুর রহমানকে ১৬ লাখ টাকার বিনিময়ে অ্যাসেনসিয়াল ড্রাগস লিমিটেডে চাকরি দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়। রাফিউল ইসলাম, সাকিল আহম্মেদকে ওয়ার্ড বয় পদে চাকরির জন্য ঢাকায় আনা হয়। একই ঘটনা হাসিবুল ইসলাম ও ফারুক হোসেনের ক্ষেত্রেও ঘটে। মহারাজ মিয়াকে অফিস সহায়ক পদে, মামুন রশিদকে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে কম্পিউটার অপারেটর পদে চাকরির জন্য ৬ লাখ টাকা নিয়ে ভুয়া নিয়োগপত্র দেওয়া হয়। চঞ্চল হোসেনকে আরসি সিভিলে ৭ লাখ টাকা নিয়ে ভুয়া নিয়োগপত্র দেন। আব্দুল্লাহকে সাড়ে ৫ লাখ টাকায় সেনাবাহিনীতে মেস ওয়েটার পদে এবং আবু তাহেরকে মালিপদে চাকরির জন্য ৬ লাখ টাকা নেন।
চার্জশিটভুক্ত আসামিরা হলেন আহমেদ মোস্তফা হাবিব, আরিফুর রহমান, আব্দুল আজিজ, মনোতোষ রায়, রিপন শর্মা, ইমরান হোসেন, সিরাজুল ইসলাম, ফাহিম হাসান, সোহরাব হোসেন, সাদিকুল ইসলাম বিপ্লব, আনোয়ারুল আলী, শাহিনুর আলম, জিবারুল ইসলাম, শাহিন আলম, মেহেদী হাসান, খালিদ হাসান পান্না, হাবিবুল্লাহ হাবিব, শরিফুল ইসলাম, মামুন উদ্দিন, মাসুদুর রহমান, জাহাঙ্গীর আলম জিমি, হালিম শেখ, কাজল বিশ্বাস, নাজমুল হক, মিজানুর রহমান, সাহিদ আল ইসলাম, সোহেল রানা বাবু, মনির বাবুল, মিরাজুল ইসলাম, মিজানুর রহমান বাদশা ও আনোয়ার হোসেন। এর মধ্যে ১৪ আসামি পলাতক।
আসামি এনামুল হক কবির, কামাল পাশা, সিদ্দিক, মঞ্জু, নয়ন ও পংকজের বিরুদ্ধে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। তবে নাম ঠিকানা না পাওয়ায় আদালত তাদের মামলার দায় থেকে অব্যাহতি দেন।
উপপরিদর্শক এমদাদুল কবির বলেন, প্রতারণাই তাদের মূল পেশা। আউটসোর্সিংকে তারা সরকারি চাকরি উল্লেখ করে নিরীহ বেকারদের প্রলোভন দেখান। সারা দেশে উপজেলা পর্যায়ে তাদের নিজস্ব মিডিয়া আছে।
আদালতের মোহাম্মদপুর থানার সাধারণ নিবন্ধন শাখার কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন বলেন, সিআইডি ৩২ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেছে। আদালত চার্জশিট গ্রহণ করে পলাতক ১৪ আসামির বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি করেছেন। ছয়জনকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।