বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। এ দেশের যারা মানবাধিকার নিয়ে কাজ করেন, তারা দুর্দশায় আছেন। গতকাল শনিবার বেসরকারি সংস্থা সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) প্রকাশিত গবেষণায় এমন তথ্য তুলে ধরেন মুখ্য গবেষক ড. আলী রীয়াজ। অনুষ্ঠানেই এমন গবেষণার কড়া প্রতিবাদ জানান জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ। তিনি গবেষণার তথ্যের সত্যতা ও গবেষকদের অভিজ্ঞতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। মানবাধিকার নিয়ে কাজ করেন এমন ৫০ জন কর্মীর অভিজ্ঞতার আলোকে দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে চার মাসের গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করে সিজিএস। সিজিএসের নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান সঞ্চালিত এ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন দেশের দূতাবাসের প্রতিনিধি, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধি, আইনজীবী, মানবাধিকার কর্মী, শিক্ষক, নাগরিক সমাজ ও সাংবাদিক। রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে ‘বাংলাদেশে মানবাধিকার রক্ষাকারীদের প্রতিকূলতা’ শীর্ষক গবেষণার সারাংশ তুলে ধরেন যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাজনীতি ও সরকার বিভাগের ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর এবং সিজিএসের উপদেষ্টা বোর্ডের সদস্য ড. আলী রীয়াজ। যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক ড. রীয়াজ বলেন, জাতিসংঘের সংজ্ঞায়নেই যারা হিউম্যান রাইট ডিফেন্ডার, তারা কী পরিস্থিতিতে আছেন, কী ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেন এবং কাদের কাছ থেকে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেন, সেগুলো নিয়ে তাদের কাছে আমরা জানতে চেয়েছি। তাদের তথ্যের ভিত্তিতে এ গবেষণা। ৪৬ শতাংশ মানবাধিকার কর্মী মনে করেন, দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি দিন দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে। ৪২ শতাংশ কর্মী জানান, সরকারি আইন প্রয়োগকারী প্রতিষ্ঠান থেকে তারা বেশি বাধার সম্মুখীন হন। ৬০ শতাংশ কর্মীর মতে, তারা মানবাধিকার রক্ষার কাজে বিভিন্ন হুমকির সম্মুখীন হন এবং তাদের কাজের ওপর বিধিনিষেধ দেওয়া হয় এবং ব্যক্তিগতভাবে তারা শারীরিক ক্ষতির সম্মুখীন হন। অ্যাডভোকেট জেড আই খান পান্না বলেন, রাজনীতিকরা দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে রাজনীতি ও মনোনয়ন নিয়ে বাণিজ্য করছে। দেশ এখন ব্যবসায়ী, পুলিশ ও আমলাদের হাতে চলে গেছে, রাজনীতিবিদরা আর দেশ চালাচ্ছেন না। তারা দেশের মানুষ নিয়ে কিছু ভাবেনও না। নিউএজের সম্পাদক নুরুল কবির মানবাধিকার সুরক্ষায় জোর দিয়ে বলেন, ‘আমি অনুরোধ করব, প্লিজ আপনারা সরকারকে বলেন, বিচারবহির্ভূত হত্যা ও নিরাপত্তা হেফাজতে হত্যা বন্ধ করতে।’ ব্যারিস্টার সারা হোসেন বলেন, চাপগুলো নতুন করে সৃষ্টি হয়নি। আমার মনে হয় না এমন কোনো সময় গেছে, যখন এ ধরনের চাপ ছিল না। গবেষণা ১০ বছরের দৃষ্টিকোণ থেকে না দেখে ১৫-২০ বছরের বা আরও লম্বা সময়ের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখি, তাহলে বুঝব চাপগুলো সবসময়ই ছিল। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান গবেষণার সঙ্গে সম্পূর্ণ দ্বিমত পোষণ করে বলেন, প্রকৃত ঘটনা এমন নয়। আমরা প্রতি সপ্তাহে অনেক অভিযোগ পেয়ে থাকি। আমরা মানবাধিকারের বিষয়ে যথেষ্ট অভিজ্ঞ।
মন্তব্য করুন