জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে ‘স্মার্ট অর্থনীতি বিনির্মাণে স্মার্ট শিক্ষা ও কর্মসংস্থান’ শীর্ষক এক প্যানেল আলোচনায়। মূলত ইন্ডাস্ট্রি-একাডেমিয়া লিঙ্কেজের বিষয়ে আলোচনার সময়ই এ নিয়ে কথা ওঠে। ইন্ডাস্ট্রি সংশ্লিষ্টরাই এ বিষয়ে মতামত দেন। এরপর অনুষ্ঠানটির সঞ্চালকের একটি কথায় এই আলোচনা আরও জমে ওঠে। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. মশিউর রহমানও উপস্থিত ছিলেন। এই আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি উল্টো ইন্ডাস্ট্রিগুলোর কম বেতনের চাকরির বিপরীতে মালিকদের ফুলেফেঁপে বড়লোক হওয়ার বিষয়টি তুলে ধরেন। এ নিয়ে শোরগোলও হয়। এরপর শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের বক্তব্যে সভাস্থল শান্ত হয়।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে এই আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে এসপায়ার টু ইনোভেট (এটুআই), তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের সহযোগিতায় এই প্যানেল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। জানা গেছে, সভা চলাকালীন স্কয়ার ফুড অ্যান্ড বেভারেজেস লিমিটেডের হেড অব এইচআর আমিনুল ইসলাম খান বলেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩৫ লাখ শিক্ষার্থী পড়ছে। ভালো শিক্ষকরাই পড়ান। কিন্তু ইন্ডাস্ট্রির এক্সপোজার হচ্ছে না। আমরা তো চাকরিপ্রার্থীদের ডেকে ডেকে আনতে পারব না। সেজন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গেস্ট লেকচারার নামে একটি পোস্ট ক্রিয়েট করা যায় কি না? ক্যারিয়ার ম্যানেজমেন্ট নামে কোর্সও থাকতে পারে। এগুলো শিক্ষকরা পড়াবেন না। ইন্ডাস্ট্রি এক্সপার্টরা পড়াবেন। এটা করতে পারলে হয়তো ভালো কিছু হবে। এতে শিক্ষার্থীরা হয়তো বুঝবে ইন্ডাস্ট্রির চাহিদা আসলে কী।
এটুআইর পলিসি অ্যাডভাইজার আনীর চৌধুরী বলেন, আমাদের লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে। কেননা বলা হয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে গ্র্যাজুয়েট বেকারদের সবচেয়ে বড় কারখানা। এখানে যেহেতু ৩৫ লাখ শিক্ষার্থী পড়ে। সংখ্যাটি বিশাল। এরপর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মশিউর রহমান বলেন, ৩১টি সাবজেক্ট নিয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় চলছে। এসব সাবজেক্টে আদৌ উচ্চশিক্ষার প্রয়োজন আছে কি না, সেটিই অনেকে সভায় বলেছেন। আমিও মনে করি, উচ্চশিক্ষায় এই পরিমাণ শিক্ষার্থীর কোনো প্রয়োজন নেই। কিন্তু ইন্টারমিডিয়েট পাস করে শিক্ষার্থীদের যাওয়ার কি জায়গা আছে? সে যাবে কোথায়? তার জন্য কোনো বিকল্প তৈরি করেছি কি না?
উপাচার্য আরও বলেন, ইন্ডাস্ট্রির কথা বলা হচ্ছে। আমি যদি অন্যভাবে বলি, কেন বেতন শুরু হবে ২০ হাজার, ৩০ হাজার টাকা দিয়ে। বিদেশ থেকে ডিগ্রি নিয়ে আসা ছেলেকেও ৩০ হাজার টাকা অফার করবেন, কিন্তু ১০ বছরে ইন্ডাস্ট্রির মালিক কত টাকার মালিক হয়েছেন। কোনো ইন্ডাস্ট্রির মালিক নেই, যার ১ হাজার কোটি টাকার কম আছে। একদিকে ব্যাংক খাবেন, ইন্ডাস্ট্রি খাবেন, কিন্তু বেতন দেবেন ২০ হাজার। এত কম বেতন দিয়ে কোন স্কিলড লোকটা রাখবেন? কিন্তু যারা করছে, তারা মডেল, এটাই বাস্তবতা। তার কথার পরিপ্রেক্ষিতে সভায় কিছুটা শোরগোল হয়। অনেককেই বলতে শোনা যায়, এই ফোরামে এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করা সমীচীন নয়।
এরপর শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, মনে হচ্ছে উপাচার্য এটি পারসোনালি নিয়েছেন। এটি করা যাবে না। উপাচার্যের এটা মনে করার কোনো কারণ নেই যে, তথ্য-উপাত্ত দিয়ে আমরা তাকে আক্রমণ করছি। আমাদের বক্তব্য হলো, পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা, সার্টিফিকেট কোর্স নিয়ে। এগুলো তো আমরা সবাই বলি। কিন্তু ইন্ডাস্ট্রি এগুলো বলছে না। লেবার মার্কেট প্রাইস অনুযায়ী ইন্ডাস্ট্রি বেতন নির্ধারণ করে বলেই আমরা জানি।
প্যানেল আলোচনায় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (পরিকল্পনা এবং উন্নয়ন) অধ্যাপক ড. এ কিউ এম শফিউল আজম ‘স্মার্ট অর্থনীতির জন্য শিক্ষা’ বিষয়ক উপস্থাপনা তুলে ধরেন। অনুষ্ঠানে এফবিসিসিআইর সভাপতি মাহবুবুল আলম, বিডিজবসের সিইও ও প্রতিষ্ঠাতা ফাহিম মাশরুরসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, একাডেমিয়া ও ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।