ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে টানা ১২ দিনের যুদ্ধ শেষ হলেও এই সংঘাতের ছায়া এখন অন্যদিকে পড়ছে, আর সে লক্ষ্য পাকিস্তান। সাম্প্রতিক নানা তথ্য ও বিশ্লেষণে ইঙ্গিত মিলছে, ইসরায়েল ও ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একটি সম্ভাব্য নতুন যুদ্ধের পরিকল্পনা করছে বলে মনে করেন পাকিস্তানের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও কলামিস্ট হামিদ মীর।
২০২৫ সালের মে মাসে পাকিস্তানের কাছে একটি বড় কূটনৈতিক বা সামরিক পরাজয়ের পর, ভারত নতুন করে ইসরায়েলসহ বহু পশ্চিমা দেশ থেকে গোপনে বিপুল অস্ত্র সংগ্রহ করছে। এসব পদক্ষেপ স্পষ্ট করে যে ভারত ও ইসরায়েল এখন একত্রে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। এই নতুন হুমকি শুধু কথার কথা নয়, এটি এখন বাস্তবতায় রূপ নিচ্ছে বলেও মনে করেন পাকিস্তানের এই জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক। তার এক্স-এ বিভিন্ন পোস্টে তিনি এ নিয়ে বিশদ ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ প্রকাশ করেছেন।
এখন ভারতের অনেক প্রতিষ্ঠান ইসরায়েলের সহযোগিতায় পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। সম্প্রতি ইরান-ইসরায়েলের ১২ দিনের যুদ্ধের সময় পাকিস্তান প্রকাশ্যে ইরানকে সমর্থন করেছিল, এতে অনেক ইসরায়েলি ক্ষুব্ধ। এই অবস্থাকে কেন্দ্র করে ভারত-ইসরায়েল জোটের মধ্যে পাকিস্তানবিরোধী পরিকল্পনার ইঙ্গিত স্পষ্ট হয়ে উঠছে।
যুদ্ধ চলাকালে ১৮ জুন ইসরায়েলি ভূরাজনীতিবিদ ও সাবেক প্রতিরক্ষা উপমন্ত্রী মেইর মাসরি সোশ্যাল মিডিয়া এক্স-এ আরবি ভাষায় লেখেন, ‘ইরানের হামলার পর, আমরা পাকিস্তানের পারমাণবিক কর্মসূচি ধ্বংস করার চেষ্টা করতে পারি।’ তার এই বক্তব্য পাকিস্তানিদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করে। একই সময়ে অনেক ভারতীয় অ্যাকাউন্টও এই ধরনের হুমকি ছড়াতে থাকে। ভারতীয় পোস্টে দেখা গেছে, “পাকিস্তানকে পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ করা হচ্ছে, এটাই ‘অপারেশন সিন্দুর’-এর শেষ ধাপ।”
ভারত ও ইসরায়েলের মধ্যে সাম্প্রতিক অস্ত্র চুক্তিগুলোও এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে দেখা যাচ্ছে। ইসরায়েলের বেশ কয়েকটি অস্ত্র প্রস্তুতকারী কোম্পানি ভারতে কারখানা খুলেছে। শুধু ক্ষেপণাস্ত্র নয়, তারা ভারতে ড্রোনও তৈরি করছে। ২০১৮ সালে ভারতের আদানি গ্রুপ ও ইসরায়েলের এলবিট সিস্টেম একসঙ্গে মিলে হায়দরাবাদে একটি কারখানা গড়ে তোলে, যেখানে হার্মিস ৯০০ নামের সামরিক ড্রোন তৈরি।
মোদি এখন ইসরায়েলের সহযোগিতায় পাকিস্তানে হামলার পরিকল্পনা করছেন, কারণ তিনি কাশ্মীরকে আরেকটি গাজা বানাতে চান। ২০২৫ সালের অক্টোবরের বিহার নির্বাচনের আগে নরেন্দ্র মোদি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে জয় দেখাতে চান। ভারত-ইসরায়েল যৌথ পরিকল্পনায় আগামী অক্টোবরে পাকিস্তানে হামলা চালাতে পারে বলে দাবি করেছেন তিনি।
তবে কাশ্মীরকে ভারত ও ইসরায়েলের আরেকটি ‘গাজায় পরিণত করার পরিকল্পনা’ পাকিস্তান বাস্তবায়ন করতে দেবে কি না, সেটা এখন ভূরাজনৈতিক সমীকরণের গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। সম্ভবত উত্তর না-ই হবে। আর যদি সেটাই হয়, তাহলে ত্রি-দেশীয় সম্ভাব্য সংঘাত দক্ষিণ এশিয়ায় যে ভয়াবহতা তৈরি করবে, তা সহজেই অনুমান করা যায়।
মন্তব্য করুন