কালবেলা প্রতিবেদক, গাজীপুর
প্রকাশ : ০৫ জুলাই ২০২৪, ০১:৫২ এএম
আপডেট : ০৫ জুলাই ২০২৪, ০৭:৪৬ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

কমিটিতে নেই জাহাঙ্গীর হতাশ নেতাকর্মীরা

গাজীপুর মহানগর আ.লীগ
কমিটিতে নেই জাহাঙ্গীর হতাশ নেতাকর্মীরা

গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গত মঙ্গলবার এ কমিটি অনুমোদন করেন। তবে ১৯ মাস পর এ ইউনিটের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার পর নেতাকর্মীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। নতুন কমিটিতে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম না থাকায় মহানগরের একাংশের নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশার সৃষ্টি হয়েছে।

অনেকেই বলছেন, কমিটি গঠনে পক্ষপাত করা হয়েছে। তবে পদ-পদবি পাওয়া নেতা ও তাদের কর্মী, সমর্থকদের দাবি, দীর্ঘদিন পরে হলেও সময়োপযোগী কমিটি গঠন করা হয়েছে।

জানা গেছে, গত ২০২২ সালের ১৯ নভেম্বর গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের প্রথম ত্রিবার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান আজমত উল্লা খানকে সভাপতি ও আতাউল্ল্যাহ মণ্ডলকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে মনোনীত করা হয়। এরপর দীর্ঘদিন পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়নি। অনেক জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে মহানগর আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। নতুন গঠিত এ কমিটির সহসভাপতি করা হয়েছে সংরক্ষিত আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সামসুন নাহার ভূঁইয়া, মতিউর রহমান, আবদুল হাদী, রেজাউল করিম ভূঁইয়া, বীর মুক্তিযোদ্ধা জয়নাল আবেদীন, ওসমান আলী, আসাদুর রহমান, সফর উদ্দিন খান, শেখ মো. আসাদুল্লাহ, হেদায়েতুল ইসলাম ও মো. আবদুল আলীম মোল্লাকে।

মহানগর আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতাকর্মী বলেন, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কর্মসূচি সফল করার জন্য রাজধানীর পাশের গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগ সব সময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে ঢাকার কর্মসূচি সফল করতে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা পালন করতেন গাজীপুরের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম। বিগত সময়ে তিনি তার অনুসারী হাজার হাজার নেতাকর্মী নিয়ে কেন্দ্রীয় কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন। সর্বশেষ গত বছরের শেষের দিকে বিএনপি বিভিন্ন কর্মসূচি দেওয়ায় তাদের প্রতিরোধ করতে পাল্টা কর্মসূচি দিয়েছে আওয়ামী লীগ। সেই কর্মসূচিতে গাজীপুর জেলা থেকে জাহাঙ্গীর আলম বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী নিয়ে সেখানে যোগ দিয়েছেন।

জাহাঙ্গীর আলম বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য, দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করাসহ বিভিন্ন কারণে পরপর কয়েকবার দল থেকে বহিষ্কার হন। কিন্তু তিনি আবার দলে ফিরেও আসেন। তবে গত সংসদ নির্বাচনে তিনি গাজীপুরের তিনটি আসনে নৌকার প্রার্থীদের সমর্থন না দিয়ে দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের পক্ষে মাঠে নামেন। এর মধ্যে গাজীপুর-১ আসনের নৌকার প্রার্থী ছিলেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক আর বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে ছিলেন কালিয়াকৈর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম। জাহাঙ্গীর আলম অবস্থান নিয়েছিলেন রেজাউলের পক্ষে। গাজীপুর-২ আসনের নৌকার প্রার্থী ছিলেন সাবেক ক্রীড়া ও যুব প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল। তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি কাজী আলিম উদ্দিন। জাহাঙ্গীর ছিলেন আলিমের পক্ষে। নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত জাহাঙ্গীর যেসব প্রার্থীর পক্ষে ছিলেন তারা সফল হতে পারেননি। এ নিয়ে আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে জাহাঙ্গীর আলমের বিরোধ প্রকাশ্যে চলে আসে। অনেকটা কোণঠাসা হয়ে পড়েন জাহাঙ্গীর অনুসারীরা।

মহানগর আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি অচিরেই ঘোষণা করা হবে, এমন একটি প্রচারণা নির্বাচনের পরপরই শুরু হয়। সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম নিজে থেকে কোনো ঘোষণা না দিলেও তার অনুসারী নেতাকর্মীরা ধারণা করেছিলেন এবার বড় কোনো পদ-পদবিতে থাকছেন জাহাঙ্গীর। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নতুন গঠিত কমিটিতেই তিনি নেই। এতে মহানগর আওয়ামী লীগের একাংশের নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশার সৃষ্টি হয়েছে।

অভিযোগ উঠেছে, নতুন কমিটিতে বিতর্কিত, হাইব্রিড ও বিভিন্ন মামলার আসামিদের জায়গা দেওয়া হয়েছে। বিদেশে থেকেও পদ বাগিয়ে নিয়েছেন আব্দুল হালিম সরকার। বিভিন্ন চাঁদাবাজির মামলার আসামি মীর আসাদুজ্জামান তুলা, নারী কেলেঙ্কারিতে ভাইরাল আব্দুর রহমান মাস্টার, আহসান উল্লাহ মাস্টার হত্যা মামলার আসামি এই কমিটিতে ঠাঁই পেয়েছেন।

মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-দপ্তর সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে দলের রাজনীতির সঙ্গে আছি, সব সময় কমিটিতে ছিলাম কিন্তু এবার কেন রাখা হয়নি, সেটি জানা নেই।’ অনেক ত্যাগী নেতাদের এখানে রাখা হয়নি। নতুন কমিটি কেমন রান করবে তা বলতে পারছি না।

নবগঠিত কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. কাজী ইলিয়াস আহমেদ বলেন, কমিটি খুব ভালো হয়েছে, সেটি বলা যাবে না। এই কমিটি কতটা সফল হবে, সেটি সময় হলেই দেখা যাবে।

মহানগর আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা বলেন, এই মুহূর্তে মনে হচ্ছে একটা পকেট কমিটি। এটি ভবিষ্যতের দলের জন্য ভালো কিছু বয়ে আনবে না। নেতাকর্মীরা দল নয়, বিভিন্ন নেতার অনুসারী হয়ে দ্বিধা বিভক্ত হয়ে পড়েছেন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এই কমিটিতে অনেক ত্যাগী নেতা বাদ পড়েছেন। যেখানে অনেক ত্যাগী নেতা বাদ পড়েছেন, সেখানে আমি থাকতে চাই না। আজমত উল্লা খান তার নিজের ইচ্ছেমতো এবং স্বজনদের দিয়ে এই কমিটি করেছেন। এই কমিটিতে হত্যা মামলার আসামিরা পদ-পদবি পেয়েছে। প্রধানমন্ত্রী এবং দলের সাধারণ সম্পাদককে ভুল বুঝিয়ে কমিটিতে স্বাক্ষর করে নিয়ে আসা হয়েছে।

এ ব্যাপারে আজমত উল্লা খান বলেন, মহানগর আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। আর জাহাঙ্গীর আলম দল থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার কারণে তাকে আর দলে ফিরিয়ে আনা হয়নি। এজন্য তাকে কমিটির কোনো পদে বা সদস্য হিসেবেও রাখা হয়নি।

কমিটির বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক সাংবাদিকদের বলেন, কিছু কিছু ত্যাগী নেতা কমিটি থেকে বাদ পড়েছে। তবে সব মিলিয়ে কমিটি খারাপ হয়নি। একটি কমিটিতে সবাইকে তো আর জায়গা দেওয়া সম্ভব নয়। হয়তো আরেকটু বিবেচনা করা যেত।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

হলি রোজারি চার্চে বোমা হামলার ঘটনায় খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশনের নিন্দা 

নামাজ আদায় না করলে অন্য আমলগুলো কবুল হবে কি? জেনে নিন

দেশের সব বিমানবন্দরের জন্য জরুরি ১০ নির্দেশনা

জনগণ আর কোনো স্বৈরাচারী সরকারকে দেখতে চায় না : আমান

৪৯তম বিসিএসের প্রশ্নে শহীদ আবু সাঈদ, আলোচিত ‘আয়নাঘর’

যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পর গাজায় আবারও ইসরায়েলি হামলা

জেহাদ স্মৃতিস্তম্ভে ছাত্রদলের শ্রদ্ধা

গ্যাস বেলুন বিস্ফোরণ, সাতজন দগ্ধ

কোমর ব্যথা কমাতে ফিজিওথেরাপি

জুলাই সনদকে ইতিবাচকভাবে দেখছে বিএনপি : রিজভী

১০

শান্তিতে নোবেল পাওয়া মাচাদোর রাজনৈতিক ইতিহাস

১১

যে কারণে শান্তিতে নোবেল পেলেন মারিয়া

১২

সাবেক নৌবাহিনী প্রধান সরওয়ার জাহান নিজাম আর নেই

১৩

বিশ্ববাজারে তেলের দাম নিয়ে সুখবর

১৪

কিউইদের বিপক্ষে টস হেরে বোলিংয়ে বাংলাদেশ

১৫

ধানের শীষকে বিজয়ী করতে জনসাধারণ মুখিয়ে রয়েছে : ড. কিবরিয়া

১৬

নিয়োগ দিচ্ছে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স, আজই আবেদন করুন

১৭

গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার একমাত্র পথ নির্বাচন : মির্জা ফখরুল

১৮

পপুলার ফার্মাসিউটিক্যালসে চাকরির সুযোগ, সপ্তাহে দুদিন ছুটি

১৯

ফের মডেলের প্রেমে হার্দিক

২০
X