রাজকুমার নন্দী
প্রকাশ : ০৬ জুলাই ২০২৪, ০২:৫৩ এএম
আপডেট : ০৬ জুলাই ২০২৪, ০৮:৫৩ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

প্রভাবশালী আঞ্চলিক নেতারা তাকিয়ে হাইকমান্ডের দিকে

শিগগির বিএনপিতে আরও রদবদল
প্রভাবশালী আঞ্চলিক নেতারা তাকিয়ে হাইকমান্ডের দিকে

নতুন নির্বাচন দাবিতে নতুন করে আন্দোলন সংগঠিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। এর আগে বিগত আন্দোলন ব্যর্থতার মূল্যায়নের পরিপ্রেক্ষিতে সংগঠনকে ঢেলে সাজানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছে দলটি। এর অংশ হিসেবে বিএনপির নির্বাহী কমিটিতে সম্প্রতি বড় রদবদল আনা হয়েছে। আরও কয়েকটি কমিটিও বিলুপ্ত করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির নির্বাহী কমিটিতে শিগগির আরও পরিবর্তন আসছে। তিন থেকে চার ধাপে দুইশ থেকে আড়াইশ পদে রদবদল আনা হতে পারে। এই পুনর্গঠনে নিষ্ক্রিয়দের পদোন্নতি না দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলের হাইকমান্ড। সামনের রদবদলে কমিটিতে যথাযথ মূল্যায়নের আশা দলের প্রভাবশালী আঞ্চলিক নেতাদের। একই সঙ্গে দলের সম্ভাবনাময় নেতাদেরও যথাযথ মূল্যায়ন হবে বলে প্রত্যাশা তাদের অনুসারীদের।

তৃণমূলসহ বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের অভিমত, আগামীতে নতুন করে আন্দোলন সংগঠিত করা এবং সেখানে বড় ধরনের সাফল্য পেতে হলে পরীক্ষিত-যোগ্যদের যথাযথ মূল্যায়ন করতে হবে। নানা কারণে বিক্ষুব্ধ, মনঃকষ্ট নিয়ে দূরে থাকা এবং বহিষ্কৃত হওয়ার পরও দলের সঙ্গে থাকা নেতাদের ফিরিয়ে আনতে হবে। একই সঙ্গে বিগত আন্দোলনে পালিয়ে যাওয়া নেতাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে হবে। এক্ষেত্রে এই ছোটখাটো রদবদলই যথেষ্ট নয়, এর জন্য প্রয়োজন বড় ধরনের পরিবর্তন। নিচ থেকে উপর পর্যন্ত সব জায়গায় পুনর্গঠন করতে হবে।

তাদের চাওয়া, শুধু পুনর্গঠন হলে হবে না, এমন পুনর্গঠন প্রয়োজন, যেখানে সবাই সম্মান ও মর্যাদা নিয়ে বিএনপি করতে পারে। তাদের মতে, প্রথম ধাপে যে পুনর্গঠন হয়েছে, সেখানে যিনি পদ পেয়েছেন তিনি যেমন সন্তুষ্ট নন, যিনি পদ পাননি তিনিও অসন্তুষ্ট।

পুনর্গঠনের অংশ হিসেবে গত ১৫ জুন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদ ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির ৪৪ পদে বড় রদবদল আনা হয়। এই রদবদলে অতি মূল্যায়ন ও অবমূল্যায়নের অভিযোগ উঠেছে। আনকোরা কয়েকজনকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে বলেও অনেকের অভিমত। এ ছাড়া কূটনৈতিক ব্যর্থতা কাটাতে দলের আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিষয়ক কমিটি বিলুপ্ত করে গঠন করা হয় নতুন দুটি কমিটি। এই রদবদলের আগে ঢাকাসহ চার মহানগর বিএনপি ও কেন্দ্রীয় যুবদলের কমিটি বিলুপ্ত করা হয়। ভেঙে দেওয়া হয় ঢাকা মহানগরে ছাত্রদলের চার কমিটিও। তবে এসব ইউনিটে এখনো নতুন কমিটি দেওয়া হয়নি। ব্যাপক লবিং-তদবিরে নেতৃত্ব বাছাই নিয়ে জটিলতায় কমিটি গঠনে বিলম্ব হচ্ছে।

জানা গেছে, পুনর্গঠনের দ্বিতীয় ধাপে ৩০-৩৫ জনকে বিভিন্ন পদে পদায়ন করা হতে পারে। এই রদবদলে স্থায়ী কমিটি ও দলের ভাইস চেয়ারম্যান পদে নতুন মুখ আসতে পারে। এবার বর্ষীয়ান নেতা আব্দুল্লাহ আল নোমানকে ভাইস চেয়ারম্যান থেকে স্থায়ী কমিটিতে পদায়ন করা হতে পারে। দীর্ঘদিনেও দলে যথাযথ মূল্যায়ন না হওয়ায় নোমানের অনুসারীরা দারুণ হতাশ। বিএনপির নীতি-নির্ধারণী ফোরামের পাঁচ শূন্য পদে হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, বরকত উল্লাহ বুলু, মো. শাহজাহান, আব্দুল আউয়াল মিন্টু, অধ্যাপক ডা. জাহিদ হোসেন, শামসুজ্জামান দুদু ও আহমেদ আযম খানের নামও আলোচনায় রয়েছে।

বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটিতে থাকলেও দলের অনেক নেতা অঞ্চলভিত্তিক রাজনীতি করে থাকেন। তারা জাতীয় পর্যায়ে রাজনীতি না করলেও সারা দেশের নেতাকর্মীদের কাছেই পরিচিত। তাদের একজন মিজানুর রহমান মিনু। রাজশাহীতে বিএনপির রাজনীতিকে বিস্তৃত করতে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন তিনি। রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক এই মেয়র মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি ছিলেন। রাজশাহী থেকে সংসদ সদস্যও হন। বর্তমানে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। মিনুর অনুসারীরা চান, দল তাকে যথাযথ মূল্যায়ন করুক। জানা গেছে, মিনুকে পদোন্নতি দিয়ে দলের ভাইস চেয়ারম্যান করা হতে পারে।

মিনুর মতো রাজশাহী মহানগর বিএনপির সভাপতি ছিলেন মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, ছিলেন রাজশাহী সিটির মেয়রও। বর্তমানে তিনি বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক। পুনর্গঠনে দলের নির্বাহী কমিটিতে বুলবুল গুরুত্বপূর্ণ পদ পাবেন বলে প্রত্যাশা তার অনুসারীদের। নেতাকর্মীদের মতে, দুজনই বিগত আন্দোলনে কম-বেশি সক্রিয় ছিলেন।

সিলেট বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ নেতা আরিফুল হক চৌধুরী। একাধিকবার সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হন। তবে দলের সিদ্ধান্তে সর্বশেষ নির্বাচনে মেয়র পদে ভোট করেননি তিনি। তখন সিলেটসহ রাজনৈতিক অঙ্গনে জোর আলোচনা ছিল, ভোট বর্জন করার বিনিময়ে আরিফুল হককে দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদ দেওয়া হবে। হাইকমান্ডের কাছে তিনি ভাইস চেয়ারম্যান পদ চেয়েছিলেন বলে তার অনুসারীদের দাবি। পরবর্তী সময়ে গত বছরের সেপ্টেম্বরে আরিফুল হককে দলটির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য থেকে পদোন্নতি দিয়ে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা করা হয়, যেটিকে তখন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে না দাঁড়ানোর পুরস্কার হিসেবে বলা হচ্ছিল।

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী কালবেলাকে বলেন, ছাত্রদল দিয়ে রাজনীতি শুরু করে এ পর্যন্ত এসেছি। দলের সিদ্ধান্তে সিলেট সিটি করপোরেশনের সর্বশেষ নির্বাচনে মেয়র পদে ভোট করিনি। দীর্ঘ ১৫-২০ বছর জনপ্রতিনিধি হিসেবে এই এলাকায় কাজ করেছি। দল করলে শুধু পদ পেতে হবে, বিষয়টা এমন নয়, বিষয়টি হতে হবে কর্মে। তিনি আরও বলেন, গত বছর তাকে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদে পদায়ন করা হয়েছে। দল তাকে যেখানেই রাখবে, সেখানেই সংগঠনের জন্য কাজ করে যাবেন।

খুলনা মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জুকে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে দলের খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এরই মধ্যে দলে ফিরতে আবেদনও করেছেন তিনি। তবে দীর্ঘদিনেও দলে ফিরতে না পারলেও সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছেন। কর্মসূচি বাস্তবায়নে সরকারবিরোধী বিগত আন্দোলনেও কর্মী-সমর্থক-অনুসারীদের নিয়ে ছিলেন রাজপথে। খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় সম্প্রতি খুলনায় নেতাকর্মীদের নিয়ে দোয়া মাহফিলও করেছেন মঞ্জু। জানা গেছে, বহিষ্কৃত নেতাদের মধ্যে মঞ্জুসহ ২৫ জনকে দলে ফেরানোর নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে বিএনপির। দলে আলোচনা আছে, মঞ্জুকে দলে ফিরিয়ে পদোন্নতি দিয়ে যুগ্ম মহাসচিব করা হতে পারে।

বিএনপিকে ঘুরে দাঁড়াতে হবে উল্লেখ করে নজরুল ইসলাম মঞ্জু কালবেলাকে বলেন, জনগণের প্রত্যাশা ছিল গণতান্ত্রিক আন্দোলন সফল হবে, একটা অর্থবহ নির্বাচন হবে, জনগণের সরকার গঠিত হবে, সেখানে বিএনপির অংশগ্রহণ থাকবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় একদিকে যেমন জনগণ হতাশ হয়েছে, অন্যদিকে দলের নেতাকর্মীদের হতাশাও বেড়েছে। এখান থেকে বিএনপিকে ঘুরে দাঁড়াতে হবে। এজন্য প্রথমে বিগত আন্দোলনের একটা যথাযথ মূল্যায়ন করা দরকার। কেন আমরা সফল হতে পারলাম না, কোন কোন জায়গায় দুর্বলতা ছিল, সেটা চিহ্নিত করে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। বড় ধরনের সাফল্য আনতে গেলে এই ছোটখাটো রদবদলই যথেষ্ট নয়, এ জন্য প্রয়োজন বড় ধরনের পরিবর্তন। নিচ থেকে ওপর পর্যন্ত সব জায়গায় পুনর্গঠন করতে হবে। দীর্ঘ

আন্দোলন-সংগ্রামে যারা পরীক্ষিত, সেই নেতৃত্ব আনতে হবে।

তিনি বলেন, নেতাকর্মীদের প্রত্যাশা, যারা বিক্ষুব্ধ আছেন, যারা মনোকষ্ট নিয়ে আছেন তাদের আবার দলে ফিরিয়ে আনা হবে, যথাযথ মূল্যায়ন করা হবে। কারণ, উনি (তারেক রহমান) তো একজন ক্যাপ্টেন। ক্যাপ্টেনের দায়িত্ব হচ্ছে, সবাইকে নিয়ে আসা, সংগঠনকে ঐক্যবদ্ধ করা। আমরা আশাবাদী, উনি সেই কাজটা করবেন।

মঞ্জু বলেন, গত ২৮ অক্টোবরের পর ঢাকাসহ সারা দেশে আন্দোলন সংগঠিত করতে দলের পক্ষ থেকে যাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, তারা পালিয়ে গেল কেন? এই প্রশ্ন আজ সারা দেশের নেতাকর্মীদের। তারা মনে করেন, এসব ভীরু-কাপুরুষ নেতৃত্ব দিয়ে দল পুনর্গঠন করে ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব নয়।

২০ বছর ধরে বরিশাল মহানগর বিএনপির সভাপতি ছিলেন মজিবুর রহমান সরোয়ার। তিনি বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্রথম মেয়র, বরিশাল সদর আসনের চারবারের সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের হুইপ ছিলেন। ২০২১ সালের ৩ নভেম্বর বরিশাল মহানগরের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ভেঙে দিয়ে আহ্বায়ক কমিটির অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় বিএনপি। নেতৃত্ব পান তার বিরোধী হিসেবে পরিচিত নেতারা। এরপর বরিশালের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন অনুপস্থিত ছিলেন মজিবর রহমান। প্রথম ধাপের পুনর্গঠনে সরোয়ারকে যুগ্ম মহাসচিব থেকে পদোন্নতি দিয়ে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা করা হয়েছে। এতে দলে সরোয়ারের যথাযথ মূল্যায়ন হয়নি বলে অভিযোগ তার অনুসারীদের। কেননা, উপদেষ্টা একটি আলংকারিক পদ হিসেবে নেতাকর্মীদের কাছে বিবেচিত।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

রামপুরায় ভবনের ৬ তলা থেকে পড়ে রডমিস্ত্রির মৃত্যু

কুড়িয়ে পাওয়া ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা ফেরত দিলেন ভ্যানচালক

বুড়িগঙ্গা থেকে লাশ উদ্ধার / ৪ জনকেই হত্যা করা হয়েছে, ধারণা পুলিশের

ওসির বদলির খবরে মোহাম্মদপুর থানার সামনে মিষ্টি বিতরণ স্থানীয়দের

বিএনপি নেতা আব্দুস সালামের চিকিৎসার খোঁজ নিলেন ডা. কাঁকন 

সিপিএলে ইতিহাস গড়ে ফ্যালকনসকে জেতালেন সাকিব

নতুন ই-লার্নিং প্ল্যাটফর্মের উদ্বোধন / মাত্র ১০০ টাকায় করা যাবে দক্ষতা, চাকরি কিংবা ভর্তি প্রস্তুতির কোর্স

সড়কের মাঝখানে গাছ রেখেই ঢালাই সম্পন্ন 

বুটেক্স সাংবাদিক সমিতির ৯ম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপিত

টানা ৮ ঘণ্টা অবরুদ্ধ জবির ভিসি

১০

৬৪ জেলার নেতাকর্মীদের নতুন বার্তা দিল এনসিপি

১১

ম্যানইউর জয়হীন ধারা অব্যাহত, এবার ফুলহামের মাঠে ড্র

১২

ব্র্যাক ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোক্তা-পেশাজীবীদের নিয়ে ‘আগামীর পথ’ অনুষ্ঠিত

১৩

প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে টি-টোয়েন্টিতে সাকিবের অনন্য কীর্তি

১৪

জুলাই যোদ্ধা শহীদ তানভীরের চাচা খুন

১৫

ভরা জোয়ারে ডুবে যায় বিদ্যালয়, শঙ্কায় অভিভাবক-শিক্ষার্থী

১৬

যেভাবে গ্রেপ্তার হলেন তৌহিদ আফ্রিদি

১৭

তারের পর এবার চুরি হলো সেতুর রিফ্লেক্টর লাইট

১৮

‘এবার আমাদের পালা’ স্বরূপ আচরণ উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে : টিআইবি

১৯

ভূমি অধিগ্রহণে আটকে আছে ইউলুপ, ইউটার্নে মরছে মানুষ!

২০
X