সরকারি কর্মকমিশন (পিএসসি) ৪৩তম বিসিএস থেকে ২ হাজার ৮০৫ জনকে নিয়োগের জন্য ৯ মাস আগে সুপারিশ করেছিল। কার্যত এই বিসিএস থেকে নিয়োগের বিষয়ে পিএসসির আর কিছু করার নেই। এখন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সুপারিশপ্রাপ্তদের নিয়োগ ও পদায়নের ব্যবস্থা করবে। সে কাজটিই হচ্ছে না। বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ সুপারিশপ্রাপ্তরা। একই সঙ্গে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে চূড়ান্ত প্রজ্ঞাপন না হওয়ায় নিয়োগের আশায় বসে থেকে হতাশ হয়ে পড়েছেন প্রার্থীরা। দ্রুত প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করে নিয়োগের দাবি জানিয়েছেন তারা।
জানা গেছে, ২০২০ সালের ৩০ নভেম্বর বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর ২০২১ সালের ২৯ অক্টোবর দেশের সব বিভাগীয় শহরে একযোগে ৪৩তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা হয়। ২০২২ সালের ২০ জানুয়ারি প্রিলির ফল প্রকাশিত হয়, যাতে উত্তীর্ণ হন ১৫ হাজার ২২৯ জন। ২০২২ সালের জুলাইয়ে লিখিত পরীক্ষা শুরু হয় এবং ২০২৩ সালের ২০ আগস্ট লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়। এতে উত্তীর্ণ হন ৯ হাজার ৮৪১ জন। এরপর ২০২৩ সালের ২৬ ডিসেম্বর ৪৩তম বিসিএস থেকে ২ হাজার ৮০৫ জনকে নিয়োগের সুপারিশ করে
পিএসসি। এর মধ্যে ২ হাজার ১৬৩ জনকে ক্যাডার পদে এবং ৬৪২ জনকে নন-ক্যাডার পদে নিয়োগের সুপারিশ করা হয়। ক্যাডার পদের মধ্যে সর্বোচ্চ শিক্ষা ক্যাডারে ৮০৩ জন, প্রশাসন ক্যাডারে ৩০০ জন, পররাষ্ট্র ক্যাডারে ২৫ জন, পুলিশ ক্যাডারে ১০০ জন, কর ক্যাডারে ১০১ জন, তথ্য ক্যাডারে ৪৩ জন এবং সহকারী ডেন্টাল সার্জনে ৭৫ জনকে সুপারিশ করা হয়েছে; কিন্তু ৯ মাস পার হলেও চূড়ান্ত নিয়োগ এখনো হয়নি।
জানা যায়, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন সুপারিশপ্রাপ্তদের ভেরিফিকেশন শুরু হয়। কিন্তু চূড়ান্ত নিয়োগের প্রজ্ঞাপনের আগেই সরকারের পতন হয়। এর পরও প্রার্থীদের বিষয়ে রি-ভেরিফিকেশন শুরু হয়। গত ৮ আগস্ট থেকে ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের গৃহীত কার্যক্রমের অগ্রগতি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৪৩তম বিসিএসে সুপারিশপ্রাপ্ত অনেক প্রার্থীকে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য উপস্থিত হতে সন্ত্রাসীরা বাধা দিয়েছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। ফলে যারা স্বাস্থ্য পরীক্ষায় উপস্থিত হতে পারেননি, তাদের পুনরায় স্বাস্থ্য পরীক্ষা নিতে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগকে অনুরোধ করেছে পিএসসি। এ ছাড়া ২৫৫ জন প্রার্থীর বিরুদ্ধে গোয়েন্দা প্রতিবেদনে প্রাপ্ত তথ্য পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে যাচাই-বাছাই হওয়া প্রয়োজন বিধায়; তা পুনরায় তদন্তের জন্য স্পেশাল ব্রাঞ্চে পাঠানো হয়েছে। স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং গোয়েন্দা প্রতিবেদন পাওয়ার পর তাদের নিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।
সূত্র জানিয়েছে, গেজেট প্রকাশের আগে প্রার্থীদের পুলিশ ভেরিফিকেশন ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। এই দুটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ সম্পন্ন হওয়ার পরও গেজেট প্রকাশিত হয়নি। ফলে প্রার্থীদের মধ্যে এক ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরিসহ তাদের মধ্যে হতাশা কাজ করছে। স্বাস্থ্য পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে, একবার পুলিশ ভেরিফিকেশন সম্পন্ন হওয়ার পরও গেজেট প্রকাশ না হওয়ায় প্রার্থীদের মানসিক চাপও বেড়েছে।
৪৩তম বিসিএসের গেজেটপ্রত্যাশী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এক শিক্ষার্থী কালবেলাকে বলেন, আমার বাবা জমি বন্ধক দিয়ে পড়াশোনা করিয়েছেন। ৪৩তম বিসিএসে সুপারিশপ্রাপ্ত হওয়ায় পরবর্তী বিসিএসগুলোয় প্রিলি ও লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েও আর এগোয়নি। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে আমি আজও বেকার। ৪৩তম বিসিএসের নন-ক্যাডাররা যোগদান করলেও অজানা কারণে ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্তদের গেজেট হচ্ছে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এক শিক্ষার্থী বলেন, সুপারিশ পাওয়ার পরে মাকে বলেছিলাম গার্মেন্টসে আর কাজ করতে হবে না; কিন্তু চূড়ান্ত ফলের ৯ মাস পার হলেও সেই অপ্রাপ্তি থেকেই গেল। গেজেটের অপেক্ষায় আমার মতো এমন অবস্থা ২ হাজার ১৬৩ পরিবারের। কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করি, আপনারা দ্রুত গেজেট দিন।
৪৩তম বিসিএসের গেজেট কবে হবে জানতে চাইলে মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. রেজাউল মাকছুদ জাহেদী বলেন, এ বিষয়ে নিয়োগ, পদোন্নতি ও প্রেষণ শাখায় যোগাযোগ করলে তারা ভালো বলতে পারবে।
এ বিষয়ে জানতে নিয়োগ, পদোন্নতি ও প্রেষণ অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. আব্দুর রউফের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।
তবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নবনিয়োগ শাখার সিনিয়র সহকারী সচিব মো. উজ্জল হোসেন কালবেলাকে বলেন, আমাদের সর্বোচ্চ প্রস্তুতি রয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশনা পেলে আমরা যে কোনো সময় গেজেট প্রকাশ করতে পারব।