সারা দেশে কয়েক হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য, ম্যুরাল এবং মুজিব কিল্লা নির্মাণ, সংস্কার এবং উন্নয়ন প্রকল্পে ‘দুর্নীতির’ অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, দেশজুড়ে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ও ম্যুরাল নির্মাণে কয়েক হাজার কোটি টাকা অপচয় ও তছরুপের অভিযোগটি কমিশন থেকে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত হয়েছে। অন্যদিকে দেশজুড়ে মুজিব কিল্লা নির্মাণ, সংস্কার ও উন্নয়ন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক, সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার ও অন্যদের বিরুদ্ধে হাজার হাজার কোটি টাকা তছরুপ, অতিরিক্ত বিল দেওয়া, গভীর নলকূপের দুই-তৃতীয়াংশ বিকল ও বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগও অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০ হাজারের বেশি ম্যুরাল, ভাস্কর্য ও প্রতিকৃতি স্থাপন করে আওয়ামী লীগ সরকার। টানা ১৫ বছর ধরেই এসব ভাস্কর্য, ম্যুরাল ও প্রতিকৃতি তৈরি করা হয়। অভিযোগ রয়েছে, অপ্রয়োজনীয় ম্যুরাল ও ভাস্কর্য তৈরিতে চার হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত ব্যয় হয়ে থাকতে পারে। দেশে বঙ্গবন্ধুর মোট এক হাজার ২২০টি ভাস্কর্য ও ম্যুরাল আছে। উল্লেখযোগ্য ভাস্কর্য ও ম্যুরালের মধ্যে খুলনা বিভাগে ২১টি, চট্টগ্রাম বিভাগে ১২টি, ঢাকা বিভাগে ৪১টি, বরিশাল বিভাগে তিনটি, ময়মনসিংহ বিভাগে পাঁচটি, রংপুর বিভাগে চারটি, রাজশাহী বিভাগে ৯টি এবং সিলেট বিভাগে একটি স্থাপন করা হয়। এর বাইরেও কয়েক হাজার ভাস্কর্য ও ম্যুরাল নির্মাণ ও স্থাপন করা হয়েছে।
অন্যদিকে, প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে মানুষ ও গবাদি পশু রক্ষায় সারা দেশে স্থাপন করা হয় আশ্রয়কেন্দ্র। প্রকল্প প্রস্তাবনায় বলা হয়েছিল দুর্যোগ-পরবর্তী সময়ে এসব ভবন সামাজিক অনুষ্ঠান, কমিউনিটি উন্নয়নের জন্য ব্যবহার করা হবে। পাশাপাশি ভবনের সামনের খোলা জায়গা ব্যবহার করা হবে খেলাধুলায়। সরকার এ প্রকল্পের নাম দিয়েছিল ‘মুজিব কিল্লা নির্মাণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ প্রকল্প। ২০১৮ সালের জুলাইয়ে দেশের ১৬ জেলায় ৫৫০টি মুজিব কিল্লা নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়। এর জন্য ব্যয় ধরা হয় প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা। মানহীন সামগ্রী দিয়ে নির্মিত এসব কিল্লা এরই মধ্যে ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। অনেক স্থানে ভেঙে গেছে। কিছু কিছু জায়গায় লোকালয় থেকে অনেক দূরে নির্মাণের কারণে পরিত্যক্ত ভবনে পরিণত হয়েছে। অনেকগুলোর ক্ষেত্রে লাইট-ফ্যান কিংবা অন্য প্রয়োজনীয় জিনিস দেওয়া হয়নি। এমনকি কোথাও কোথাও এসব কিল্লা নদীভাঙনের মুখেও পড়েছে।
ডাক বিভাগের সাবেক ডিজির বিরুদ্ধে মামলা: প্রায় ৯২ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ডাক বিভাগের সাবেক মহাপরিচালক সুধাংশু শেখর ভদ্রের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দুদক। গতকাল কমিশনের সমন্বিত জেলা কার্যালয়, ঢাকা ১-এ দুদকের সহকারী পরিচালক মো. তানজিল হাসান মামলাটি দায়ের করেন। এর আগে ২০ আগস্ট প্রকল্পের ১৫ কোটি ১১ লাখ টাকা আর্থিক ক্ষতিসাধনের অভিযোগে সুধাংশু শেখর ও ডেপুটি পোস্ট মাস্টার জেনারেল মোস্তাক আহমেদের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক।
বিএফআইইউর সাবেক প্রধানের বিরুদ্ধে মামলা: জ্ঞাত আয়বহির্ভূত অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইউনিটের (বিএফআইইউ) সাবেক প্রধান মাসুদ বিশ্বাসের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দুদক। এজাহারে মাসুদ বিশ্বাসের বিরুদ্ধে ১ কোটি ৮৭ লাখ ৭২ হাজার ৬২২ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে।
সাংবাদিক মুন্নী সাহা দম্পতির বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত: সাংবাদিক মুন্নী সাহা ও তার স্বামী ব্যবসায়ী কবির হোসেন তাপসের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুদক। এ ছাড়া তাপসের ব্যাংক হিসাবে ১৩৪ কোটি টাকা লেনদেন, বর্তমান স্থিতি ১৪ কোটি টাকার বিষয়ে অনুসন্ধান করা হবে।
সাবেক ডিএমপি কমিশনারের ৩ হাজার কোটি টাকা পাচারের অভিযোগ প্রত্যাহার: সাবেক ডিএমপি কমিশনার গোলাম ফারুকের বিরুদ্ধে গত ২৮ জুলাই ৩ হাজার কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ করা হয়। পাঁচজন ব্যক্তি যৌথ স্বাক্ষরে এ ব্যাপারে দুদকে তদন্তের আবেদন করেন। লিখিত অভিযোগে বলা হয়, খন্দকার গোলাম ফারুক চাকরিজীবনে ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে অবৈধভাবে সারা দেশ থেকে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। তিনি বাংলাদেশের নাগরিক। একই সঙ্গে তিনি আমেরিকার গ্রিনকার্ডধারী। গোলাম ফারুক নিকট স্বজনদের মাধ্যমে অবৈধভাবে অর্জিত প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা আমেরিকায় পাচার করেন। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রায় ৫০০ কোটি টাকার স্থাবর, অস্থাবর সম্পদ ও নগদ অর্থ রয়েছে। এমন অভিযোগের আড়াই মাস পর গত ১৪ অক্টোবর হঠাৎ এটি প্রত্যাহার করে নেন অভিযোগকারীরা। সম্প্রতি বিষয়টি প্রকাশ পেলে এ নিয়ে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা।