হাসান আজাদ
প্রকাশ : ২৩ মে ২০২৫, ১২:০০ এএম
আপডেট : ২৩ মে ২০২৫, ০৭:৩৮ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

কত দূর স্বয়ংক্রিয় সঞ্চালন লাইন

বিদ্যুৎ উৎপাদন বিতরণ
কত দূর স্বয়ংক্রিয় সঞ্চালন লাইন

দেশের অধিকাংশ বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্রিড কোড বা এফজিএমও (ফ্রি গভর্নর মোড অব অপারেশন) নেই। এ কারণে গ্রিড বিপর্যয়ের ঘটনা ঘটছে। এফজিএমও পদ্ধতিতে প্রতি ১৫ মিনিট পরপর বিদ্যুতের চাহিদা ও উৎপাদনের একটি স্বয়ংক্রিয় পর্যালোচনা করা হয়। ফলে গ্রিড বিপর্যয়ের মতো অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা প্রতিরোধ করা যায়। গ্রিড বিপযর্য়ে সারা দেশে বিদ্যুৎ একসঙ্গে চলে যাওয়ার মতো দুর্ঘটনা ঘটে না। বাংলাদেশ পাওয়ার সিস্টেম রিলায়াবিলিটি অ্যান্ড এফিসিয়েন্সি ইম্প্রুভমেন্ট প্রকল্পের অধীনে দেশের ১৪৪টি চালু বিদ্যুৎকেন্দ্রের মধ্যে মাত্র ৩৪টিতে এমপ্রুভমেন্ট পদ্ধতি চালু আছে। তবে অন্যান্য কেন্দ্রে এ পদ্ধতি চালু না থাকার কারণে এফজিএমও থাকা কেন্দ্রগুলোও ঠিকমতো কাজ করছে না। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) ও পাওয়ার গ্রিড কোম্পানির (পিজিসি) কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. রেজাউল করিম এ প্রসঙ্গে কালবেলাকে বলেন, আমরা সব কেন্দ্রে এফজিএমও বাস্তবায়নের জন্য নির্দেশনা দিয়েছি। এটা করা গেলে গ্রিড বিপর্যয়ের শঙ্কা কমে আসবে। এ ছাড়া আমরা চাহিদা ও উৎপাদনের বিষয়টি রিয়েল টাইম দেখতে পারব।

জানা গেছে, গত ৬ এপ্রিল বিদ্যুৎ বিভাগে এ-সংক্রান্ত বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠক উত্তাপিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশ পাওয়ার সিস্টেম রিলায়াবিলিটি অ্যান্ড এফিসিয়েন্সি ইম্প্রুভমেন্ট প্রকল্পের আওতায় ৩৪টি কেন্দ্রে এফজিএমও চালু থাকলেও চারটি কেন্দ্রে এই পদ্ধতির টেস্ট রান সম্পন্ন করা হয়েছে। বর্তমানে যেসব কেন্দ্রে এফজিএমও চালু রয়েছে, সেগুলোর মধ্যে ১১টি কেন্দ্রের এফজিএমও কর্মক্ষমতা ভালো পাওয়া গেছে। এই কেন্দ্রগুলো আশুগঞ্জ ৪৫০ মেগাওয়াট (সিসিপিপি-নর্থ), আশুগঞ্জ ৪৫০ মেগাওয়াট (সিসিপিপি-সাউথ), সিরাজগঞ্জ ২২৫ মেগাওয়াট সিসিপিটি ইউনিট-১, ইউনিট-২, ইউনিট-৩ ও ইউনিট-৪, আশুগঞ্জ ২২৫ মেগাওয়াট সিসিটিপি, বিবিয়ানা ৪০০ মেগাওয়াট সাউথ, হরিপুর ৪১২ মেগাওয়াট সিসিটিপি, ভেড়ামারা ৪১০ মেগাওয়াট সিসিটিপি, ফেঞ্চুগঞ্জ সিসিটিপি ফেইজ-১।

এ ছাড়া শাহাজীবাজার জিটিপিপি ইউনিট-৮, ইউনিট-৯-এ এফজিএমও চালু করার আগে লোড সমন্বয় করতে কেন্দ্রগুলোর হিউম্যান মেশিন ইন্টারফেস (এইচএমআই) আপগ্রেড করার জন্য বলা হয়েছে। ৩৪১ মেগাওয়াট ক্ষমতার সামিটের মেঘনাঘাট বিদ্যুৎকেন্দ্রে এফজিএমও বাস্তবায়নের জন্য চিঠি দেওয়া হলেও এখন পর্যন্ত কোনো সাড়া মেলেনি। সিদ্ধিরগঞ্জ ১২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার দুটি ইউনিটে (এক ও দুই) এফজিএমও চালুর বিষয়ে বলা হলে কেন্দ্রটির অরিজিনাল ইকুইপমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স (ওইএম) থেকে জানানো হয়েছে, ২০২৩ সালের ২১ এপ্রিল কেন্দ্রটির ইউনিট-১ এর কমবোশন লাইনাল এবং ফুয়েল নজেল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কেন্দ্রটি থেকে পিএসএস কমবোশন মোডে ৯০ থেকে ১০৫ মেগাওয়াট লোডে এফজিএমও চালু রাখা যাবে।

শিকলবাহা ২২৫ মেগাওয়াট, ভোলা ২২৫ মেগাওয়াট, বিবিয়ানা-৩ ৪০০ মেগাওয়াট, সিলেট ২২৫ মেগাওয়াট ক্ষমতার কেন্দ্রগুলোয় এফজিএমও চালানো যাবে। পাশাপাশি আরও চারটি কেন্দ্র পরীক্ষা করা হয়েছে। সেগুলোয় এফজিএমও চালানো যাবে। বাকি সাতটি কেন্দ্রে জ্বালানি সংকটের কারণে এখনো এফজিএমও চালুর বিষয়টি পরীক্ষা করা যায়নি।

এদিকে, দেশের বড় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোয় এফজিএমও পদ্ধতি চালু নেই। যার মধ্যে এসএস পাওয়ার (১৩২০ মেগাওয়াট), আদানি ইউনিট-২ (৭৬৪ মেগাওয়াট), রামপাল টিপিপি ইউনিট-১ (৬১৭ মেগাওয়াট), মাতারবাড়ী ইউনিট-২ (৬০০ মেগাওয়াট) এবং বরিশাল ইলেকট্রিক (৩০৭ মেগাওয়াট)। এগুলোতে প্লান্ট সেটিং জটিলতার কারণে এফজিএমও কার্যকর করা যাচ্ছে না।

এদিকে, বিদ্যুৎ গ্রিড উন্নয়নে জাপানের সংস্থা জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) বেশকিছু সুপারিশ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে, সরবরাহ-চাহিদা পূর্বাভাসের বর্তমান পদ্ধতি পর্যালোচনা করা এবং আন্ডার-ফ্রিকোয়েন্সি লোডশেডিংয়ের সেটিংস পুনর্বিবেচনা করা; ভেড়ামারা-বহরমপুর এবং কুমিল্লা-ত্রিপুরায় ভারতের সঙ্গে এসি আন্তঃসংযোগ স্থাপন করা।

বিদ্যুৎকেন্দ্রে কেন এফজিএমও প্রয়োজন: সংশ্লিষ্টরা জানান, সঞ্চালন লাইনের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে ফ্রি গভর্নর মোড অব অপারেশন বা এফজিএমও অপরিহার্য। বর্তমানে সঞ্চালন নিয়ন্ত্রণের অনেক কাজই ম্যানুয়ালি করা হয়। এফজিএমও করলে পুরো প্রক্রিয়া স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলবে। এফজিএমওতে বিদ্যুৎ সঞ্চালনে একটি নির্দিষ্ট ফ্রিকোয়েন্সি থাকবে, যা হবে ৪৯ দশমিক শূন্য থেকে ৫০ দশমিক পাঁচ হার্জের মধ্যে। ন্যাশনাল লোড ডেসপাস সেন্টার (এনএলডিসি) প্রতিদিনের জন্য একটি চাহিদা নির্ধারণ করবে। সেই চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদনও হবে। প্রতি ১৫ মিনিট পরপর এ চাহিদা ও উৎপাদনের একটি স্বয়ংক্রিয় পর্যালোচনা হবে। এ পদ্ধতিতে অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা প্রতিরোধ করা যাবে। এর ফলে সারা দেশে বিদ্যুৎ একসঙ্গে চলে যাওয়া বা ব্ল্যাক আউটের মতো ঘটনা ঘটবে না। এ ছাড়া সামনে বিদ্যুৎ রপ্তানির চিন্তা করা হচ্ছে। এজন্যও এফজিএমও করা জরুরি।

সর্বশেষ গত ২৬ এপ্রিল জাতীয় গ্রিড বিপর্যয়ে বিকেল ৫টা ৪৮ মিনিট থেকে খুলনা ও বরিশালের জেলাগুলো বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে। এর আগেও বেশ কয়েকবার বড় ধরনের গ্রিড বিপর্যয়ের ঘটনা ঘটেছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

অটোরিকশা চালকের চোখ উপড়ানো মরদেহ উদ্ধার

সন্ত্রাসী ‘ঢাকাইয়া আকবর’ মারা গেছেন

বনানীতে ট্রাকের চাপায় পিষ্ট দুই মোটরসাইকেল আরোহী

সীমান্তে ২ বাংলাদেশিকে বিএসএফের গুলি

বজ্রবৃষ্টিতে ১৩ জনের মৃত্যু

কবি নজরুলের স্মৃতিবিজড়িত ২ বাড়ি 

চাঁপাইনবাবগঞ্জে আ.লীগ নেতা মুক্তা গ্রেপ্তার

জাল সনদে এমপিও আবেদনে মাদ্রাসাশিক্ষকদের কঠোর নির্দেশনা অধিদপ্তরের

ইরান-যুক্তরাষ্ট্র পরমাণু আলোচনা থমকে গেল পাঁচ কারণে

অ্যাশেজের টানা কনসার্ট

১০

চবির ব্যাচ-৪২ এর সভাপতি তাহিরা মিশু, সম্পাদক আলীমুল 

১১

দুপুরের মধ্যে যেসব জেলায় ৬০ কিমি বেগে ঝড়ের শঙ্কা

১২

সড়কজুড়ে গর্ত, সংস্কারে উদ্যোগ নেই কর্তৃপক্ষের

১৩

গণ-অভ্যুত্থানসহ জাতীয় আন্দোলনের অনুপ্রেরণা ছিল কাজী নজরুল : রিজভী

১৪

সৌদি পৌঁছেছেন ৫৯ হাজার ১০১ হজযাত্রী

১৫

পঞ্চগড় থেকে উদ্ধার সেই নীলগাইয়ের মৃত্যু

১৬

গোপনে ভিডিও ধারণ, ছাত্রীকে হল থেকে বের করে দিলেন শিক্ষার্থীরা

১৭

টিভিতে আজকের খেলা

১৮

২৫ মে : কী ঘটেছিল ইতিহাসের এই দিনে

১৯

গাজায় করুণ পরিণতি, ক্ষুধায় মারা যাচ্ছে শিশুরা

২০
X