মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৫, ২৯ আশ্বিন ১৪৩২
দেলোয়ার হোসন, ময়মনসিংহ
প্রকাশ : ২৫ মে ২০২৫, ১০:৪৪ এএম
অনলাইন সংস্করণ

কবি নজরুলের স্মৃতিবিজড়িত ২ বাড়ি 

ত্রিশালের নামাপাড়া গ্রামের বিচুতিয়া ব্যাপারী বাড়ির এই ঘরটিতে থাকতেন কবি নজরুল ইসলাম। ছবি : কালবেলা
ত্রিশালের নামাপাড়া গ্রামের বিচুতিয়া ব্যাপারী বাড়ির এই ঘরটিতে থাকতেন কবি নজরুল ইসলাম। ছবি : কালবেলা

তৎকালীন ভারতের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে জন্ম নিলেও কাজী নজরুল ইসলাম বাংলাদেশের জাতীয় কবি। বাল্যকালেই মা-বাবাকে হারিয়ে নিদারুণ দারিদ্র্যের মধ্যে পড়েন তিনি। ভারতের আসনসোলের রুটির দোকানে কাজ করার সময় প্রতিভায় মুগ্ধ হয়ে দারোগা রফিজউল্লাহ ১৯১৪ সালে কিশোর নজরুলকে নিজের বাড়িতে এনেছিলেন।

ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার কাজীর শিমলা গ্রামে অবস্থিত রফিজউল্লাহ দারোগার বাড়ি ছিল ত্রিশালে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের প্রথম আবাস। প্রথমে নজরুলকে ভর্তি জন্য ময়মনসিংহের সিটি স্কুলে পাঠান। নজরুলের নাকি স্কুলটি পছন্দ হয়েছিল কিন্তু জায়গীর না পাওয়ায় ওই স্কুলে পড়ার সৌভাগ্য হয়নি নজরুলের। পরে দরিরামপুর ইংরেজি হাইস্কুলে (বর্তমানে নজরুল একাডেমি) ভর্তি করান দারোগা সাহেব।

কাজীর শিমলা গ্রাম থেকে ত্রিশালের দরিরামপুরের দূরত্ব ছিল পাঁচ কিলোমিটার। এই পথ হেঁটে যেতে হতো নজরুলকে স্কুলে ক্লাস করার জন্য। বর্ষাকালে রাস্তা চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ত। ফলে স্কুলে যাতায়াতে খুব কষ্ট হতো নজরুলের। এই অসুবিধা লাঘব করার জন্য দারোগা সাহেব ত্রিশালের নামাপাড়ায় তার আত্মীয় কাজী হামিদুল্লাহর বাড়িতে জায়গির রাখেন নজরুলকে। কিন্তু হামিদুল্লাহ ছিলেন ধার্মিক, পরহেজগার ও গম্ভীর প্রকৃতির লোক। নজরুল নামাজ পড়তেন না, এজন্য তিনি নজরুলকে ঘৃণা করতেন এবং শাসনে রাখতেন। তার এতো স্বাধীনতা ছিল না। নজরুল তখন তেমন পড়াশোনা করতেন না। তাই নজরুলকে আশ্রয়হীন হতে হয়।

পরে তিনি ত্রিশালের নামাপাড়া গ্রামে বিচুতিয়া ব্যাপারী বাড়িতে জায়গীর থাকেন। বেপারী বাড়ির পূর্বদিকে একটি ছোট পুকুর ছিল। সেই পুকুর পাড়ে ছোট ঘরেই নজরুল থাকতেন। দুই বাড়ি মিলিয়ে কবি ত্রিশালে ছিলেন আনুমানিক এক বছর।

কবির বসবাসের দুটি বাড়িতেই করা হয়েছে নজরুল স্মৃতিকেন্দ্র। কাজী নজরুল ইসলামের এক বছরের কথা দারুণভাবে মনে রেখেছে ত্রিশাল। এক শতাব্দীর বেশি সময় পরও ত্রিশাল যেন এখনো কবির আবাসস্থল। নজরুল ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে নির্মিত হয় ওই দুটি কেন্দ্র। দুটি কেন্দ্রই পরিচালনা করছে নজরুল ইনস্টিটিউট।

গত বৃহস্পতিবার (২২ মে) কাজীরশিমলা গ্রামের দারোগা বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, দ্বিতল ভবনটির নিচতলায় প্রবেশ করতেই চোখে পড়ে কাঠের তৈরি খাটটি, কবি এই খাটটিতে থাকতেন। একই তলায় রয়েছে একটি ছোট মিলনায়তন। আর ওপরের তলায় পাঠাগারে রয়েছে বেশি কিছু বই। ভবনের দেয়ালে কাজী নজরুল ইসলাম ও তার পরবর্তী কয়েক প্রজন্মের সদস্যের ছবি ঝোলানো হয়েছে। নজরুলের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে এ দারোগা বাড়িতে। সেটার প্রস্তুতি নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন স্মৃতিকেন্দ্রের গ্রন্থাগারিক রাসেল হোসেন। তিনি বলেন, প্রত্যন্ত এলাকা হওয়ায় লোকজন অনেক কম আসে। আর এ কেন্দ্রটি ডিজিটাল ও কিছু কার্যক্রম পরিচালনা করা হলে মানুষের সমাগম বাড়বে। নজরুলের খাটটি সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের জন্য স্যারকে জানিয়েছি।

নামাপড়া গ্রামে বিচুতিয়া ব্যাপারীর বাড়ির স্মৃতিকেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, হাতেগোনা কয়েকজন দর্শনার্থী। তিনতলার এ স্মৃতিকেন্দ্রের নিচতলায় রয়েছে মিলনায়তন। দোতলায় চলে দাপ্তরিক কাজ। তৃতীয় তলাটি হচ্ছে নজরুল স্মৃতিকেন্দ্র ও গ্রন্থাগার। এ স্মৃতিকেন্দ্রে নজরুলের একমাত্র স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে রাখা আছে একটি গ্রামোফোন। এছাড়া কক্ষের দেয়ালজুড়ে আছে কবি নজরুলের ছবি। কবির হাতের লেখা কবিতা বাঁধাই করে ছবির পাশাপাশি দেয়ালে সাঁটানো।বিচুতিয়া ব্যাপারী বাড়ির স্মৃতিকেন্দ্রটির তিনতলা ভবনটির চারপাশে গাছ। প্রাকৃতিক পরিবেশ মানুষকে আকৃষ্ট করার মতো। সামনে শানবাঁধানো পুকুরঘাট। আশপাশের মানুষ এখানে বেড়াতে আসেন। ব্যাপারী বাড়িতে নজরুল স্মৃতিকেন্দ্রের মূল ভবনের পাশেই কবির থাকার ঘরটি। মূলভিত্তি ঠিক রেখে নতুন করে করা হয়েছে একটি টিনের বাড়ি।

বিচুতিয়া ব্যাপারীর বংশধর মো. আবুল কাশেম বলেন, প্রতিবছর নজরুলের জন্মদিনে এখানে অনুষ্ঠান হয়। অনেক মানুষ আসেন। গুণীজনেরা আসেন। এটা আমাদের জন্য খুব আনন্দের বিষয়। আমরা দিনটির জন্য অপেক্ষা করে থাকি।

স্থানীয় ব্যক্তিরা বলেন, বিচুতিয়া ব্যাপারী বাড়ি স্মৃতিকেন্দ্রটি নামাপাড়া গ্রামে। এ গ্রামেই রয়েছে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়। স্মৃতিকেন্দ্রটিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রতিদিনই এখানে আসে। তবে কাজীর শিমলার দারোগা বাড়ি স্মৃতিকেন্দ্রে দর্শনার্থীর সংখ্যা কম। সেখানে প্রতিদিন হাতে গোনা কয়েকজন দর্শনার্থী যান। শুক্র, শনিবার ও সরকারি ছুটির দিন ছাড়া দর্শনার্থীদের জন্য প্রতিদিন খোলা থাকে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত।

নজরুল ইনস্টিটিউটের প্রশিক্ষণ সহকারী ও স্মৃতিকেন্দ্রের বই বিক্রির দায়িত্বে থাকা মো. ফয়জুল্লাহ রোমেল বলেন, পাঠাগারে বই পড়তে খুব বেশি কেউ আসে না। স্মৃতিকেন্দ্রে দর্শনার্থীও আসে কদাচিৎ। মাসে ৩০-৩৫ জনের বেশি হয় না।

স্মৃতিকেন্দ্র সহকারী পরিচালক আক্তারুজ্জামান কালবেলাকে বলেন, বিচুতিয়া ব্যাপারী বাড়ির এটিই মূল অফিস। এখান থেকেই দুই স্মৃতিকেন্দ্রের কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। দুটি স্মৃতিকেন্দ্রেই শিশুদের জন্য নজরুল সংগীত প্রশিক্ষণ চালু রয়েছে। ব্যাপারী বাড়ি স্মৃতিকেন্দ্রে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩২ জন এবং দারোগা বাড়ি কেন্দ্রে ৩০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। সপ্তাহে দু-দিন প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চলে। ভবিষ্যতে আবৃত্তি ও নাচের প্রশিক্ষণ চালু করার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, কবির জন্মজয়ন্তীতে দারোগা ও ব্যাপারী বাড়ি স্মৃতিকেন্দ্রে প্রতিবছর জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়ে থাকে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

রোমে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ড. ইউনূসের বৈঠক

কলাবাগানে ডিপ ফ্রিজ থেকে নারীর মরদেহ উদ্ধার

অবশেষে বিশ্বের শীর্ষ নেতাদের উপস্থিতিতে গাজা শান্তিচুক্তি সই

জয়পুরহাট জেলা এনসিপির প্রধান সমন্বয়কের পদত্যাগ

শরীয়তপুরে নির্যাতিত শিশুর পাশে তারেক রহমান

‘ড. তোফায়েলের শূন্যতা বহু দশক অনুভূত হবে’

আওয়ামী লীগ নেত্রী কেকার মরদেহ উদ্ধার

স্থানীয় সমস্যা সমাধানের আশ্বাস আনোয়ারুজ্জামানের

পূজা পরিষদ ও মহানগর কমিটির প্রত্যাশা / সংকট সমাধানে এক হয়ে কাজ করার নজির অব্যাহত থাকুক

নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্রের ব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে : পিএনপি

১০

শেষ ওভারের নাটকীয়তায় প্রোটিয়াদের কাছে বাংলাদেশের হার

১১

নিষিদ্ধ হওয়া ভিডিও নির্মাতাদের সুখবর দিল ইউটিউব

১২

জাতিসংঘের ৮০তম বার্ষিকী অনুষ্ঠানে জামায়াতের অংশগ্রহণ

১৩

‘ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়াও আমাদের দিনে দাঁড়াতে পারবে না’ 

১৪

রিপন মিয়াকে প্রাণনাশের হুমকি

১৫

ঢাবি সাদা দলের বিবৃতি / এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের ওপর আক্রমণ অপ্রত্যাশিত

১৬

৪৮ জেলার ৪৩৫ স্পটে হত্যাকাণ্ড ঘটায় পুলিশ-যুবলীগ : তাজুল ইসলাম

১৭

সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেল জামায়াত নেতার

১৮

ইয়ামালের জন্য আল হিলালের ৫২৬০ কোটি টাকার প্রস্তাব!

১৯

অতিরিক্ত সিম স্বেচ্ছায় বাতিল না করলে যা করবে বিটিআরসি

২০
X