গত বছরের ৩ আগস্ট শহীদ মিনারে ফ্যাসিবাদবিরোধী একদফা ঘোষণা করা হয়েছিল। এবার একই দিনে শহীদ মিনারে ‘ছাত্র-জনতার জুলাই ঘোষণাপত্র ও ইশতেহার পাঠ’ শীর্ষক সমাবেশ করবে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। সমাবেশে একদফার ঘোষক এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে ২৪ দফা ইশতেহার ঘোষণা করবেন। সমাবেশে লক্ষাধিক তরুণের সমাবেশ ঘটানোর চিন্তা করছে দলটি।
এনসিপি সূত্রে জানা যায়, আগামী ১ আগস্টের মধ্যে শেষ হচ্ছে দেশব্যাপী ৬৪টি জেলায় ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’। সারা দেশের মানুষের আকাঙ্ক্ষা ও প্রত্যাশার আলোকে ইশতেহার তৈরির কাজ চলছে। জুলাই চব্বিশ কেন্দ্র করে ২৪ দফা ইশতেহার ঘোষণা করবে দলটি। সমাবেশে ঢাকা এবং ঢাকার বাইরে থেকে লক্ষাধিক নেতাকর্মী অংশগ্রহণ করবেন। এরই মধ্যে জুলাই সনদ এবং ঘোষণাপত্র নিয়ে সরকার কোনো সিদ্ধান্ত না জানালে এ নিয়েও এনসিপির পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক কোনো ঘোষণা আসতে পারে বলেও জানান তারা।
ইশতেহার তৈরির দায়িত্বে থাকা এনসিপির নেতারা জানান, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের চেতনা ধারণ করে নতুন দেশ গড়তে মোটাদাগে কয়েকটি বিষয় প্রাধান্য দিয়ে ইশতেহার হচ্ছে। যেখানে থাকবে রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং অর্থনৈতিকভাবে দেশকে তারা কীভাবে গড়ে তুলতে চান, সেসব বিষয়। থাকবে নতুন রাষ্ট্র বিনির্মাণের পথরেখা। পারিবারিক পরিচয় নয়, যোগ্যতার ভিত্তিতে যেন তৃণমূল থেকে কেন্দ্রে উঠে আসতে পারে—এমন বিষয় প্রাধান্য পাবে।
এনসিপির ইশতেহারে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে সেকেন্ড রিপাবলিক, গণপরিষদ নির্বাচন এবং নতুন সংবিধানকে। সেকেন্ড রিপাবলিক প্রতিষ্ঠা ও গণপরিষদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নতুন সংবিধান রচনার সংকল্প তুলে ধরবেন তারা। যেটি তাদের ঘোষণাপত্রেও উল্লেখ করতে দেখা যায়। এ ছাড়া পরিবারতন্ত্রের অবসান, সিন্ডিকেট ও গোষ্ঠীস্বার্থ নির্মূল, ভেঙে পড়া প্রতিষ্ঠানগুলো পুনর্নির্মাণ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে অগ্রগতি, শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, জাতীয় অর্থনীতির পুনর্গঠন, পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে মূলধারায় অন্তর্ভুক্তি করাকে প্রাধান্য দিচ্ছে দলটি।
এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব আলাউদ্দীন মোহাম্মদ কালবেলাকে বলেন, বৈষম্যবিরোধী যে আন্দোলনের মাধ্যমে গণঅভ্যুত্থান হয়েছে, সেই বৈষম্য পুরোপুরি দূর করা আমাদের ইশতেহারের অন্যতম লক্ষ্য। সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষগুলোকে কীভাবে এগিয়ে নেওয়া যায়, শহরে এবং গ্রামে সমানতালে শিল্পায়ন গড়ে তোলা যায়, শিক্ষাকে কর্মসংস্থানমুখী করে গড়ে তোলা যায় এবং প্রতিষ্ঠানগুলোর গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার কথা থাকবে আমাদের ইশতেহারে। এ ছাড়া স্বাভাবিকভাবে আমরা পরিবারতন্ত্রের অবসান চাই। স্বাধীনতার পর থেকেই এই দেশ একটি গোষ্ঠীর কাছে বন্দি হয়ে আছে। তারাই পুরো রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছে। আমরা এর পরিবর্তন চাই। এ ছাড়া বিচার বিভাগ, নির্বাহী বিভাগ, নির্বাচন কমিশনসহ ভেঙে পড়া প্রতিষ্ঠানগুলোর পুনর্নির্মাণ করাই আমাদের লক্ষ্য।
দলটির আরেক যুগ্ম সদস্য সচিব ফরিদুল হক বলেন, ২৪ দফা ইশতেহার দেবে এনসিপি। দেশব্যাপী পদযাত্রা শেষে এ ইশতেহার দেওয়া হবে। সব রাজনৈতিক দলের ইশতেহার আছে, আমাদেরও দিতে হবে। চব্বিশকে ধারণ করে ২৪ দফা দেওয়া হবে। নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত এবং অর্থনৈতিক মুক্তির মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের রূপরেখা তুলে ধরা হবে।
এদিকে, দলের পক্ষ থেকে সমাবেশস্থল হিসেবে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের নাম ঘোষণা করা হলেও একই দিনে ছাত্রদলের কর্মসূচি থাকায় তা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। এ নিয়ে এনসিপির পক্ষ থেকে বিএনপি এবং ছাত্রদলকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। ছাত্রদলের একটি সূত্র বলছে, বিষয়টি ইতিবাচক হিসেবে দেখা হচ্ছে। আজ বুধবার সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তারা সিদ্ধান্ত জানাবেন। এনসিপি সূত্র বলছে, তারাও শহীদ মিনারেই করতে চান, যদি না পারেন সেক্ষেত্রে বিকল্প হিসেবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, শাহবাগ বা মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে করতে পারেন।
গত সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদল সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, আমরা জুলাই-আগস্ট কর্মসূচি যখন প্রণয়ন করি, সেই সূচনালগ্ন থেকেই ৩ আগস্ট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশ করার জন্য মনস্থির করি। জুন মাসেই আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ থেকে শহীদ মিনারে প্রোগ্রামের অনুমতি পাই। পরে জুলাইয়ে এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতাকর্মীরা বলেন, তারা এখানে সমাবেশ করতে চান। আমরা আগে থেকেই শহীদ মিনারে সমাবেশের অনুমতি নিয়ে রেখেছি জানতে পেরে এনসিপির শীর্ষ নেতারা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। তারা আবেদন করেছেন যেন এখানে সমাবেশ করতে পারেন।
এ বিষয়ে এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব কালবেলাকে বলেন, আমরা আগে জানতাম না ছাত্রদল সেখানে সমাবেশ করবে। আমরাও সেখানে করার ঘোষণা আগেই দিয়েছি। এখন বিষয়টা কী করা যায়, সেটা নিয়ে আমরা বসছি। শহীদ মিনারে করা না গেলে কোথায় করা যায় সমাবেশ, সেটাও চিন্তা করছি।
মন্তব্য করুন