ফ্লাইটে দুর্গন্ধযুক্ত খাবার ও পচা মাছের গন্ধের কারণে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ঢাকা-রোম রুটের একটি ফ্লাইট অন্তত চার ঘণ্টা বিলম্বের পর ঢাকার উদ্দেশে উড্ডয়নের অনুমতি পেয়েছে। গত মঙ্গলবার রোমের স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টা ২০ মিনিটে বিজি ৩৫৫ ফ্লাইটটি ঢাকার উদ্দেশে ছাড়ার কথা থাকলেও সেটি রাত সোয়া ১১টায় উড্ডয়নের অনুমতি দেয় রোমের ফিউমিচিনো বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। ওই সময় যাত্রীরা উড়োজাহাজের ভেতর আটকে থাকেন।
বিলম্বের কারণ নিয়ে জানা গেছে, ফ্লাইটটি মঙ্গলবার সকালে ঢাকা থেকে রোমে যাওয়ার সময় একাধিক যাত্রী তাদের লাগেজে রান্না করা খাবার ও কাঁচা মাছ নিয়ে যান। ওইদিন ৯ ঘণ্টা পর উড়োজাহাজটি রোমে পৌঁছলে সেই খাবার ও মাছে পচন ধরে দুর্গন্ধ ছড়ায়। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের রোম বিমানবন্দরে দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের নজরদারির অভাবে পচন ধরা সেই পণ্যবোঝাই লাগেজ কার্গো হোল্ড থেকে নামিয়ে বেল্টে দেওয়া হয়। এতে অন্য এয়ারলাইন্সের যাত্রীদের লাগেজে বিমানযাত্রীদের রান্না করা খাবারের তেল ও মাছের পানি লেগে যায়। পাশাপাশি বেল্টের আশপাশে দুর্গন্ধও ছড়ায়। ততক্ষণে ঢাকামুখী যাত্রীরা উড়োজাহাজে উঠে বসেন। সেই দুর্গন্ধ ছড়ায় পুরো উড়োজাহাজে। এ নিয়ে ঝামেলার সৃষ্টি হলে ফ্লাইটে বিলম্ব ঘটে।
বিমানের রোম স্টেশনের কর্মীদের সূত্র জানায়, ওই ঘটনার পর ফিউমিচিনো বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট উড়োজাহাজের কার্গো হোল্ড পরিদর্শন করে রান্না করা খাবারের ঝোলসহ পচনশীল নানা ধরনের খাবারের উৎস খুঁজে পায়। পরে উড়োজাহাজে পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম চালিয়ে চার ঘণ্টা পর উড্ডয়নের অনুমতি দেওয়া হয়।
অ্যাভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমন ঘটনায় বিমানের দায়দায়িত্বের পাশাপাশি দেশের সুনামও ক্ষুণ্ন হচ্ছে। মূলত ডিপারচার স্টেশনের (যে বিমানবন্দর থেকে ফ্লাইট উড্ডয়ন করেছে) দায়িত্বরত কর্মীদের নজরদারির অভাব ও দায়িত্বে অবহেলার কারণে এমন ঘটনা ঘটেছে। তবে অ্যারাইভাল (যে বিমানবন্দরে অবতরণ করেছে) স্টেশনের দায়িত্বরতদের নজরদারির অভাবও রয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রোমে ফিউমিচিনো বিমানবন্দরে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের কান্ট্রি ম্যানেজার আব্দুল্লাহ আল হুসাইন কালবেলাকে বলেন, মঙ্গলবার রাতে বিজি ৩৫৫ ফ্লাইটে ঢাকা থেকে ফিউমিচিনো এয়ারপোর্টে আসার সময় বাংলাদেশি যাত্রীদের লাগেজে কিছু পচনশীল খাবার পাওয়া যায়। এরপর বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ আগত যাত্রীদের লাগেজ নিয়ে তদন্ত করে। এ কারণেই ফ্লাইট বিলম্বিত হয়েছে।
রোমে দায়িত্বরত বিমানকর্মীদের সূত্র জানায়, ওই ফ্লাইটে এক যাত্রীর লাগেজেই কাঁচা ১১টি ইলিশ পাওয়া গেছে। নিয়ম অনুযায়ী তাকে জরিমানা করা হয়েছে।
এদিকে ঢাকায় ফেরার পথে চার ঘণ্টা ফ্লাইট বিলম্বের কারণে ওই উড়োজাহাজের যাত্রীরাও বিড়ম্বনায় পড়েন। তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিক্রিয়া দেখান এবং উড়োজাহাজের মধ্যেও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। প্রবাসী যাত্রীরা রোমে দায়িত্বরত বিমানকর্মীদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তোলেন। তারা বলেন, রোম এয়ারপোর্টে দায়িত্বরত বিমানের কর্মীদের কাছ থেকে সময়মতো সেবা পাওয়া যায় না, তারা ফ্লাইট বিলম্বের তথ্য সহায়তা চাইলেও পাওয়া যায় না। এমনকি প্রবাসী যাত্রীরা তাদের কাছে ন্যূনতম সৌজন্যতাও পান না। তাদের নজরদারির অভাবে এমন ঘটনা ঘটেছে।
এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ কাজী ওয়াহিদুল আলম কালবেলাকে বলেন, এমন ঘটনা প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের গাফিলতি রয়েছে বলে প্রমাণ করে। এতে দেশেরও সম্মান নষ্ট হয়। ডিপারচার এয়ারপোর্টে প্রতিষ্ঠানটির কর্মীদের গাফিলতির কারণে অনুমোদনহীন পণ্য নিয়ে যাত্রীরা উড়োজাহাজে ওঠার সুযোগ পায়। ঠিকমতো স্ক্যান করলে এমন হওয়ার কথা নয়। এক্ষেত্রে অ্যারাইভাল এয়ারপোর্টে দায়িত্বরত বিমানের কর্মীদেরও নজরদারির অভাব পরিলক্ষিত হয়।
তিনি বলেন, এ ধরনের ঘটনা এড়াতে ডিপারচার এয়ারপোর্টে বিমানকে শক্ত করে ঘোষণা দিতে হবে যে, কোন পণ্য নেওয়া যাবে এবং কী কী নেওয়া যাবে না। যদি অনুমোদনহীন পণ্য নিয়ে যাত্রীরা উড়োজাহাজে ওঠার চেষ্টা করে, তাহলে তা বোর্ডিং স্ক্যানিংয়ে ধরতে হবে এবং প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট যাত্রীকে অফলোড করতে হবে।
আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান পরিবহন সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী, পচনশীল দ্রব্য, বিশেষ করে তরল, ঝোলযুক্ত খাবার, দুধ-মাছ জাতীয় দ্রব্য—এসব পরিবহনের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট শর্ত ও নিরাপত্তা বিধি রয়েছে। অথচ এর অনেকটাই যাত্রীদের অজ্ঞতা কিংবা অবহেলা এবং সংশ্লিষ্ট এয়ারলাইন্স কর্মীদের অবহেলার কারণে উপেক্ষিত হয়।
মন্তব্য করুন